নিউইয়র্কে ‌‘চিরকুট’–এর স্বপ্নের রাত

ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন মঞ্চে চিরকুট

সংগীতচর্চায় চিরকুটের দুই দশক কেটে গেছে। জীবনে এমন দিন আসবে আগে কোনো দিন ভাবতেও পারেননি চিরকুটের সদস্যরা। তবে স্বপ্ন আর পরিশ্রমকে সঙ্গী করেই এগিয়েছে ব্যান্ড চিরকুট। যাত্রাপথে ছিল অনেক চড়াই–উতরাই। তারপরও থামেনি। সেই না থামার ফলাফলই পেল বাংলাদেশের ব্যান্ডটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো ব্যান্ড নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে পারফর্ম করল। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে বিশ্বসংগীতের নামকরা আরেক ব্যান্ড স্করপিয়ন্সকে।

গতকাল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় রাত আটটায় ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন মঞ্চে ওঠে চিরকুট। এই রাতকে ব্যান্ডের সবাই স্বপ্নের রাত হিসেবেই মনে করছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপেও সেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য শারমীন সুলতানা সুমী। পারফর্ম করা ছাড়াও দুই দলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিয়েছেন। ছবি তুলেছেন। দুই দেশের গান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে দর্শকদের একাংশ, গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়

‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক বাঙালি অংশ নিয়েছেন। এই মিলনায়তনের আসনসংখ্যা ২০ হাজার ৭৮৯। প্রতিষ্ঠানটি তাদের মিলনায়তনে টাঙানো ফেস্টুনে জানিয়েছে, সব কটি টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বাংলাদেশি পরিচালক অমিতাভ রেজা তাঁর নতুন চলচ্চিত্র রিকশা গার্ল নিয়ে এখন আছেন নিউইয়র্কে। তাঁর অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনিও গিয়েছিলেন কনসার্ট দেখতে। তিনি ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, অভিনন্দন শারমীন সুলতানা সুমী আপা, হোয়াট আ শো। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশিদের যাঁরাই টিকিট কেটে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে গেছেন, সবাই একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে ফিরেছেন। চিরকুট সদস্যরাও উচ্ছ্বসিত। শারমীন সুলতানা সুমী লিখেছেন, ‘ইতিহাস পুনরায় তৈরি হলো।’ ইমন চৌধুরী লিখেছেন, ‘স্করপিয়ন্সের সঙ্গে চিরকুট, ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের আজকের রাতটা সত্যিই স্বপ্নের মতন।’

এই কনসার্টের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়

মুক্তিযুদ্ধের সময় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক শক্তিও বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল। ১৯৭১ সালে পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও তাঁর বন্ধু বিটলস ব্যান্ডের জর্জ হ্যারিসনকে নিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যার্থে একটি কনসার্ট আয়োজন করা হয় ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে। সেই কনসার্ট থেকে পাওয়া অর্থ পাঠানো হয় বাংলাদেশের শরণার্থীদের কল্যাণে। এবারের কনসার্ট থেকে অর্জিত অর্থ সাইবার নিরাপত্তায় ইউএনডিপির তহবিলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকেরা।

ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন মঞ্চে জার্মানির স্করপিয়ন্স

এদিকে চিরকুটের সদস্যরা স্করপিয়ন্সের সঙ্গে এক মঞ্চে গান করতে পেরে ভীষণ খুশি। সুমী বললেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে আমাদের একার নয়, সারা বাংলাদেশের সংগীতের মানুষদের জন্য আনন্দের সংবাদ। ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে এর আগে কোনো বাংলাদেশি ব্যান্ড পারফর্ম করেছে কি না, আমার জানা নেই। চিরকুটই প্রথমবার পারফর্ম করল। বিশ্বের কিংবদন্তি ব্যান্ড, যারা মানবতার গান গেয়েছে, সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমাদের স্পিরিটের সঙ্গে, আমরাও যেমন দুই দশক ধরে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের জন্য গান করেছি, সবকিছু মিলে পুরো ব্যাপারটা একই সূত্রে গাঁথা—বাংলাদেশ, স্করপিয়ন্স ও চিরকুট।’ সুমী আরও বলেন, ‘অস্তিত্বে, আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ৫১ বছরের এক দীর্ঘ সংগ্রামের নাম। একইভাবে প্রচলিত প্রথা ভাঙার রুদ্ধশ্বাসে চিরকুট ২০ বছরের এক তীব্র লড়াইয়ের নাম। আর যাঁরা সংগ্রাম কিংবা লড়াই করে বড় হন, তাঁরা নির্ভীক, দায়িত্ব এড়ান না, বরং যেকোনো অবস্থায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। এ রকমই এক গুরুদায়িত্ব ছিল আমাদের কাঁধে। এই প্রথম কিছু বলতে গিয়ে গলা কাঁপছে।’

স্করপিয়ন্স ব্যান্ডের সদস্যরা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’–এর উদ্যোগ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ।