নুহাশপল্লী আরও সবুজ হয়ে গেছে
প্রথম আলো অনলাইনের নিয়মিত আয়োজন ‘ঘরে বসে গান’-এ আজকের অতিথি মেহের আফরোজ শাওন। আজকের আয়োজনে তাঁর পরিবেশনাসহ আরও কিছু বিষয়ে গতকাল রোববার বিকেলে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
‘ঘরে বসে গান’ আয়োজনে আজ কোন গানগুলো শোনাবেন?
হুমায়ূন আহমেদের পছন্দের ‘যে থাকে আঁখি পল্লবে’ গানটি গেয়েছি। এখানে গান গাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ছিল, বাকি তিনটা গেয়েছি, যা আগে কখনো কোথাও করিনি। আমার ভীষণ পছন্দের গানগুলো হচ্ছে ‘আমার মন মানে না দিবা-রজনী’, ‘দেখেছি রূপসাগরে কাঁচা সোনা’, আরেকটা নির্মলা মিশ্রের। এই গানগুলো সব সময় আমার শুনতে ভালো লাগত, কখনো গাওয়ার চেষ্টা করিনি। এই আয়োজনে যেহেতু নিজের মতো করে গাইবার সুযোগ ছিল, তাই করেছি।
তার মানে দর্শক-শ্রোতার জন্য বাড়তি পাওনা থাকছে?
বাড়তি কি না জানি না। আমি আমার কিছু ভালো লাগার গান করতে পেরেছি। সেই অর্থে গান করার যে আয়োজন, তা তো আমার নেই। আমি তো পেশাদার শিল্পীও নই। আমার ঘরে কোনো মাইক্রোফোন নেই। অন্য যাঁরা গানের শিল্পী, তাঁরা কিছু না কিছু জিনিস ঘরে রাখেন। আমি খালি গলায় গান করি। সাউন্ড কোয়ালিটি কী হবে জানি না। বিকেলবেলা গানগুলো রেকর্ড করছিলাম। গান রেকর্ড করার পাশের বাড়ির ছাদে একজন দৌড়াচ্ছে, নিচতলায় টাইলস কাটার শব্দ হচ্ছে। (হাসি) পারিপার্শ্বিক অবস্থাটা এমন হচ্ছে যে হারমোনিয়াম, তানপুরার বা বাঁশির শব্দের চেয়ে টাইলস কাটা ও বাচ্চাদের দৌড়ের শব্দ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে কাজ করেছে। এই কাটা সংগীতশিল্পীর জন্য কষ্টের, আমি তো আসলে সংগীতশিল্পী হিসেবে কাজটা করিনি, ঘরে বসে গান শুনিয়েছি। ঘরে বসে যখন গান শোনাতে চেয়েছি, এগুলোই আসলেই আবহসংগীত হিসেবে মেনে নিয়েছি।
কয়েক মাস ধরে করোনাকাল চলছে। কীভাবে এ সময়টা কাটাচ্ছেন?
লকডাউনে ঘরে বসে থাকায় অনেক কাজকর্ম আটকে গেছে। এর মধ্যে কাজের জন্য তিনবার ঘর থেকে সচেতনভাবে বের হয়েছি। একদমই বাইরের মানুষের সঙ্গে কন্টাক্ট হচ্ছে না। নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছি। এখন পর্যন্ত পাবলিকলি আনিনি। গোছানো হচ্ছে। ঘরোয়া আড্ডার কিছু গান আপলোড করছি। বন্ধুরা কিছু গান রেকর্ড করে আমাকে উপহার দেয়, ওগুলোও থাকবে। অমুক আড্ডার গান, তমুক আড্ডার গান—সমস্ত আড্ডার গান থাকবে। বড় আয়োজনের কোনো ভিডিও থাকবে না। কোনো পেশাদার চ্যানেল বানাতে চাইছি না।
এখানে কি শুধু গানই থাকবে?
তা না, আমার সন্তানদের মজার কিছু ভিডিও থাকবে। এখানে মানুষ মেহের আফরোজ শাওনকে খুঁজে পাওয়া যাবে। আমার কিছু গান, যা জীবনেও করা হয়নি, সেগুলো এই ইউটিউবের জন্য করব। এরই মধ্যে আমার এক ছোট বোন সায়ন্তনী তিশার সঙ্গেও দুটো গান করেছি। কোনো শুটিং হাউস ভাড়া না করে আমার বাবার বাড়ির বারান্দা, আমাদের নুহাশপল্লীর মাঠে, নিজেদের জায়গাগুলোতে যা করা যায়, সে রকম টুকটাক কাজ করছি আরকি।
এর মধ্যে নুহাশপল্লীতে যাওয়া হয়েছে কি?
নিষাদ, নিনিত দুজনকে নিয়ে একদিন গিয়েছিলাম। নুহাশপল্লী আরও সবুজ হয়ে গেছে। চার মাস মানুষের কোনো পা পড়েনি। লকডাউনে থাকার কারণে চার মাস হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করাও হয়নি, তাই সপ্তাহখানেক আগে সেখানে গিয়েছিলাম। পুরো এলাকা সবুজে ভরে গেছে।
করোনায় প্রকৃতি তাহলে সুন্দররূপে ফিরে আসছে?
সবাই বলছে, আমরা প্রয়োজনের অধিক প্রকৃতির অপব্যবহার করেছি। ঢাকা এবং বাংলাদেশকে যেভাবে রাখা দরকার, সেভাবে রাখিনি। জীবনে যা দরকার, তার চেয়ে বেশি জামাকাপড় হয়েছে। সবকিছুই বেশি বেশি হয়েছে। অথচ গত কয়েক মাসে আমরা তো মিনিম্যালিস্টিক লাইফ লিড করছি। আমাদের তো কোনো অসুবিধা হয়নি। আমরা বেঁচে আছি। প্রকৃতিও আমাদের সুন্দর বাতাস, সুন্দর আবহাওয়া দিচ্ছে। যদি শিখি, শিখলাম। আর না শিখলে তো নাই।
আপনার কাছে কি মনে হয় শিখবে?
আমার কাছে মনে হয় মানুষ শিখছে না। যারা শিখেছে তারা আগেও সচেতন ছিল। এমনিতে আমি ঘরকুনো হলেও এই লকডাউনে প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। স্বল্প পরিচিত মানুষের সঙ্গে বেশি কথা বলছি। আগে একজন সহশিল্পীর সঙ্গে যেখানে হাই–হ্যালো ছাড়া কথা হতো না, এখন তার সঙ্গেও অনেক কথা হচ্ছে। এসব গল্পে–কথায় আমি দেখছি, যারা পরিবেশ নিয়ে কথা বলছে, তারা আগেও কোনো না কোনোভাবে সচেতন ছিল। ওই মানুষগুলো এই করোনায় আরও বেশি সচেতন হচ্ছে। যারা ভাবছে না, তাদের পৃথিবীর কেউ ভাবাতে পারবে না, আগেও তারা ভাবেনি।