বৈশাখে সেই তিসা দেওয়ানের গান

তিসা দেওয়ান
তিসা দেওয়ান

নিজের পছন্দের শিল্পী তাহসানের ‘আলো’ গানটি গেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন রাঙামাটি শহরের ভালেদী আদাম এলাকার মেয়ে তিসা দেওয়ান। ফেসবুকে দেওয়ার পর তিনি রাতারাতি তারকা বনে যান। ঘটনাটি গত বছর আগস্ট মাসের। তিসার গানের খবর পৌঁছে যায় তাহসানের কানে। ফেসবুকে নিজের ওয়ালে তিসার গানটি শেয়ার করেন। ইনবক্সে শুভেচ্ছা জানান তিসাকে। এরপর গত ২২ নভেম্বর হঠাৎ তিসাদের বাড়িতে উপস্থিত হন তাহসান। কারণ, একটি মোবাইল ফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রে শুটিং হবে। আর তাতে তাহসানের সঙ্গে তিসাকেও অংশ নিতে হবে।

২৩ নভেম্বর রাঙামাটির মারি স্টেডিয়াম, কাপ্তাই লেকসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় শিল্পী তাহসান ও তিসাকে নিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং করা হয়। ৯ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটি ২৮ জানুয়ারি ফেসবুকে ছাড়া হয়। এরপর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শিল্পী তাহসানের সঙ্গে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ গানটি করেন তিসা। গানটি ১৯ ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে এক অনুষ্ঠানেও পরিবেশন করেন তাঁরা দুজন।

তিসা তখন বলেছিলেন, ‘আমি খুব খুশি। তাহসান ভাইয়া তাঁর সুর করা একটি গান আমাকে দিয়ে গাওয়াবেন বলেছেন।’

এত দিন তিসা তাহসান, আজম খান, কুমার শানু, সাধনা সরগমের গান গেয়ে তা ইউটিউব আর ফেসবুকে দিয়েছেন। এবার তিনি মৌলিক গান গেয়েছেন। গ্রামীণফোনের সহায়তায় তৈরি হয়েছে গানটি। সুর করেছেন শাকের রেজা। বৈশাখী উৎসব নিয়ে তৈরি গানটির রেকর্ডিং হয়ে গেছে। জানা গেছে, পয়লা বৈশাখে আসছে গানটি। দেখা যাবে গ্রামীণফোনের ফেসবুক পেজে।

তিসা দেওয়ান বলে, ‘ছোটবেলা থেকে আমার গান শেখার ইচ্ছা ছিল। যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, তখন মা-বাবার অনুমতি নিয়ে হীরা চাকমা স্যারের কাছ থেকে গান শেখা শুরু করি। এরপর নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যাই। সেদিন তেমন কিছু না ভেবে হঠাৎ করেই তাহসান ভাইয়ের “আলো” গানটি ফেসবুকে আপলোড করি। সেই গানে এত মানুষ দেখবে ভাবতে পারিনি। পরের সব ঘটনা তো আমার জন্য আরও বিস্ময়কর।’

আর এবার তিসা বলেন, ‘বৈশাখের মতো উৎসবে আমি আমার নিজের গান রেকর্ড করছি, এর থেকে বড় আর কী হতে পারে!’

২০০২ সালে রাঙামাটি শহরের কলেজগেট এলাকার সংগীতশিক্ষক হীরা চাকমার কাছে গান শেখা শুরু করেন তিসা। ২০১৫ সালে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমিতে চার বছরের সংগীত কোর্সে ভর্তি হন। এখনো সেখানে গান শিখছেন। টিউশনি ও গান গেয়ে যে আয় করেছেন, সেই টাকা দিয়ে তিসা গিটার কিনেছেন। নিজের গিটার বাজিয়ে এখন গানের চর্চা করে যাচ্ছেন।

মেয়েকে নিয়ে মা নিরুপা দেওয়ান বললেন, ‘ওর বাবা অসুস্থ। তাই একই সঙ্গে পড়াশোনা, টিউশনি আর গানের চর্চা করে যেতে হয় ওকে। গানের ক্লাস কোনো দিন বাদ দেয়নি তিসা।’ শিল্পকলা একাডেমির গানের শিক্ষক মিলন ধর বললেন, ‘তিসা দেওয়ান গানের প্রতি খুবই মনোযোগী। খুব সহজে গানের সুর ও তাল বুঝতে পারে। তিসা অনেক বড় শিল্পী হতে পারবে বলেই মনে করি।’

রাঙামাটি শহরের সাধারণ এক পরিবারের মেয়ে তিসা দেওয়ান স্কুল পেরিয়ে এখন উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ছেন। তাঁর গানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। পার্বত্য তিন জেলাসহ ঢাকা-চট্টগ্রামের নানা অনুষ্ঠানে তিসার ডাক পড়ে।

তিসার ভাষায়, ‘গান আমার সবটাজুড়ে। এইচএসসি পাস করে সংগীত নিয়েই পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে।’