ভালোর সময় আসবে, আলোর সময় আসবে

প্রিন্স মাহমুদ

আমাদের বাংলা গান ১৯৯১-৯২ সালের পর থেকেই চেনা চৌকাঠের বাইরে পা বাড়িয়েছে। কথা, সুর, সংগীতায়োজনে এসেছে পরিবর্তন। অতীত অর্জনের সূত্রকে সৃজনশীলভাবে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পেরেছেন আমাদের গীতিকবি ও সুরকারেরা। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের অনেক অনেক গান আজ ২০২১ সালে এসেও আবেদন রাখছে ভীষণভাবে। শূন্য দশকেও আমরা বেশ কিছু ভালো গান পেয়েছিলাম, তবে বর্তমানে বাংলা গান কিছুটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

প্রিন্স মাহমুদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

শ্রোতারা এখন ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। গানকে তাই এই মাধ্যমের উপযোগী করেই তৈরি করা হচ্ছে। ভালো কিছুর সঙ্গে সঙ্গে তাই কিছুটা মন্দও ঢুকে যাচ্ছে। এই মন্দ কিছু কিন্তু আগেও ছিল, তবে এখন যেন বেশি বেশি সামনে চলে আসছে। আমরা ক্রমেই এমন এক সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে নৈতিকতা, মূল্যবোধ নামের গুণগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। গানের ওপরও সেই প্রভাব পড়ছে। অথচ এখন কিন্তু এমন গানই হওয়ার কথা, যে গান জেগে ওঠার কথা বলে।

গান যদি শুধু ইউটিউব ভিউয়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে বলতে হয়, অবস্থা সত্যিই সংকটাপন্ন। অনেক অনেক গানের প্রচুর ভিউ, কিন্তু ৫০ সেকেন্ডও শুনতে পারিনি, মানে শুনতে ইচ্ছা করেনি। কিছুদিন আগেও ভিউ নিয়ে যে তোলপাড় ছিল, এখন সেটা বেশ কমে এসেছে। এমনই হওয়ার কথা ছিল, তাই অবাক হইনি।

প্রিন্স মাহমুদ
ছবি: ফেসবুক থেকে

তবে কেউ কেউ ভিউ নিয়ে শুরুতে ভীষণ উত্তেজিত ছিলেন। এ নিয়ে আমি অনেকবার কথা বলেছি বা বিভিন্ন লেখায় ভিউ নিয়ে বেশি মাতামাতি না করার আহ্বানও জানিয়েছিলাম। কারণ বুঝতে পারছিলাম, কীভাবে একটা মোটামুটি মানের গানকে মহিমান্বিত করা হচ্ছিল। একজন শিল্পী যখন সেসব করেন, তখন কিশোর ছেলে-মেয়েরাও প্রভাবিত হয়। এর ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটাও বুঝতে পারছিলাম। সাময়িকভাবে হয়তো এ কর্মকাণ্ডগুলোকে সাফল্য বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী ফল কখনোই ভালো হওয়ার কথা নয়, হয়ওনি। ভিউয়ের এই টানাপোড়েন যখন প্রত্যাশা ও উচ্চাশার পারদ ছুঁতে ব্যর্থ হয়, তখন ঠিকই একটা ভয়াবহ হতাশা দানা বাঁধতে থাকে। সবাই এখন সেটা অনুধাবন করছেন।

গানের এই দিশেহারা অবস্থায় সামান্য সময়ের জন্য আশার একচিলতে আলো দেখিয়েছিল মোবাইলের অ্যাপগুলো। কিন্তু এগুলোর যথাযথ অগ্রগতি দেখতে পাই না। তারপরও ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে তুষ্ট থাকতে চাই। এই করোনার সময়ে গানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। শুধু গানের মানুষ নন, আমরা কেউই ভালো নেই। যদিও এ সময় দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ভালোর সময় আসবে, আলোর সময় আসবে। শিল্পীরা সৃষ্টির আনন্দে সৃষ্টি করবেন। একটা কথা সব সময় বলেছি, সময়কেও সময় দিতে হয়।

মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি একই বিন্দুতে মিলিত হবেই। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।