ভেন্টিলেটর মেলেনি, করোনায় মারা গেলেন পণ্ডিত রাজন মিশ্র

পণ্ডিত রাজন মিশ্র
খালেদ সরকার

করোনা মহামারিকালে প্রতিবেশী দেশ ভারত ভয়াবহ সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘হ্যাশট্যাগ ইন্ডিয়া নিডস অক্সিজেন’। ভারতের হাসপাতালগুলোয় একদিকে অক্সিজেনের অভাবে হাহাকার, অন্যদিকে খালি নেই বেড। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের বিনোদন ও সংস্কৃতি অঙ্গনে বারবার করোনা হানা দিচ্ছে। প্রায় শোনা যায় নানা অঞ্চলের তারকা, সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। সেই তালিকায় গতকাল রোববার যোগ হয়েছে শাস্ত্রীয় সংগীতের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। দিল্লিতে মারা গেছেন সমকালীন খ্যাতনামা শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী পদ্মভূষণ পণ্ডিত রাজন মিশ্র। ৭০ বছরের এই শিল্পীর মৃত্যুতে ভেঙে গেল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের দিকপাল হিসেবে চিহ্নিত রাজন-সাজন জুটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর সূত্রে জানা গেছে, এই রাজন মিশ্রর মৃত্যুর জন্য তাঁর আত্মীয়রা দায়ী করছেন যথাসময়ে ভেন্টিলেটর না পাওয়াকেই।

রাজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, ‘রাজন মিশ্রের মৃত্যু খুবই বেদনার। বেনারস ঘরানার এই প্রথিতযশা শিল্পীর মৃত্যু ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি।’

পণ্ডিত রাজন মিশ্র

লতা মঙ্গেশকর লিখেছেন, ‘মাত্র খবরটা শুনলাম, রাজন মিশ্র আর নেই। শুনে খুব খারাপ লাগছে। সৃষ্টিকর্তা ওনার আত্মাকে শান্তিতে রাখুন।’

সরোদবাদক আমজাদ আলী খান লিখেছেন, ‘পণ্ডিত রাজন মিশ্রর প্রয়াণে আমি শোকাহত। আমাদের সময়ের কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম সেরা তিনি। তাঁর আত্মা শান্তি পাক।’

পণ্ডিত রাজন মিশ্র

পণ্ডিত রাজন মিশ্রর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সরোদশিল্পী তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার লিখেছেন, ‘রাজন মিশ্রের প্রয়াণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের খুবই বড় ক্ষতি। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।’
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমস ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, কোভিডে আক্রান্ত রাজনকে গত শুক্রবার ভর্তি করা হয় দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স হাসপাতালে। গত শনিবার রাত থেকে তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। বিকল হয়ে পড়ে কিডনিও। গতকাল সকালে ডায়ালাইসিস চলছিল। এমন সময় হার্ট অ্যাটকে আক্রান্ত হন। শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। এ সময় প্রয়োজন হয় ভেন্টিলেটরের। কিন্তু ওই হাসপাতালে একটিও ভেন্টিলেটর খালি ছিল না সে সময়। পরিবারের সদস্যরা ভেন্টিলেটর জোগাড়ের জন্য নানা দিকে ছোটেন।

বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে তাঁরা ভেন্টিলেটর খোঁজ শুরু করেন। এমনকি টুইট করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ট্যাগ করেও। বিনা ভেন্টিলেটরেই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন রাজন মিশ্রর।

জানা গেছে, গতকাল সারা দিন সেন্ট স্টিফেন্স হাসপাতালে ছিলেন রাজনের ঘনিষ্ঠ সালোনি গান্ধী। তিনি ইন্ডিয়া টাইমসের প্রতিবেদকে বলেছেন, ‘সারা দিন প্রাণপণে খুঁজেও দিল্লিতে একটাও ভেন্টিলেটর জোগাড় করতে পারিনি আমরা। একটা ভেন্টিলেটর থাকলে হয়তো এভাবে চলে যেতে হতো না পণ্ডিতজিকে। এভাবে দেশকে হারাত না দিকপাল এক সংগীতব্যক্তিত্বকে।’

অবশ্য সরকারের একটি পক্ষের দাবি, প্রথমেই টুইট দেখে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এমইএমএসে বেডের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সেখানে তাঁকে ভর্তির করার আগেই প্রয়াত হন রাজন। একজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দাবি, রাজনের পরিবারের টুইট দেখে তিনিই প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন। এর আগে তিনিই রাজনকে সেন্ট স্টিফেন্স হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। ওই কর্মকর্তার দাবি, তিনি রাজন মিশ্রর একজন নিকট আত্মীয়র সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই আত্মীয় নাকি তখন তাঁকে জানান, রাজন আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তিনি স্থিতিশীল। বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি। যদিও এই দাবি মানতে চাননি প্রয়াত শিল্পীর আত্মীয়রা। তাঁদের দাবি, একটা ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা গেলে এভাবে চলে যেতে হতো না শিল্পীকে।
১৯৫১ সালে বেনারসে রাজন মিশ্রর জন্ম। ভাই সাজন মিশ্রর সঙ্গে বেশ কয়েক ধরে দশক ধরে দর্শকের মন জয় করেছেন তিনি। বেনারস ঘরানার শিল্পী পণ্ডিত রাজন মিশ্র, তাঁর ভাই ও সতীর্থ পণ্ডিত সাজন মিশ্রের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংগীত পরিবেশন করেছেন। পদ্মভূষণ, সংগীত নাটক একাডেমি, গন্ধর্ব জাতীয় সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তাঁরা।