মন্ত্রীর কাছে গীতিকবির খোলা চিঠি

গীতিকবির ন্যায্য রয়্যালটি না দেওয়ায় বাংলাদেশ বেতারের কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বরেণ্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে একটি চিঠি পোস্ট দিয়েছেন। চিঠিতে বেতারের কর্মকাণ্ড অবহিত করতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বরাবর।

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান জানালেন, অনেক বছর ধরে বেতারে রয়্যালটি দেওয়ার ব্যাপারে কর্মকর্তাদের উদাসীনতা চলছে। এ নিয়ে জ্যেষ্ঠ গীতিকবি এবং তাঁদের পরিবারকে নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে বলে জানালেন তিনি। কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও গীতকবি পরিবারের ভোগান্তির বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান।

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো ...
মাননীয় মন্ত্রী,
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সমীপে
বিষয়: বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার রয়্যালটি প্রসঙ্গে।
জনাব,
আমি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, গীতিকবি ও প্রাক্তন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ বেতার, এই মর্মে নিবেদন করছি যে, আমার অগ্রজ, প্রয়াত কবি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ বেতারের একজন বিশিষ্ট গীতিকারও ছিলেন। এখনো তাঁর রচিত অনেক গানই বেতার ও টেলিভিশন থেকে প্রচারিত হয়। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর রচিত গানের রয়্যালটি, তাঁর স্ত্রী মিসেস রাশিদা জামানের প্রাপ্য হবে বলে, তিনি তাঁর রয়্যালটি ফর্মেই উল্লেখ করে যান।
আমার বেতারের দীর্ঘ ২৫ বছরের, চাকরিজীবনে, আমি দেখে এসেছি, প্রতি তিন মাস অন্তর, রয়্যালটি চেক, প্রাপকের ঠিকানায় ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এখন, প্রাপককেই তাঁর প্রাপ্য রয়্যালটির জন্য, বেতারে গিয়ে ধরনা দিতে হয়। এটি খুবই দুঃখজনক।
মিসেস রাশিদা জামানের বর্তমান বয়স ৮৪ বছর। বছরের পর বছর তিনি কোনো রয়্যালটি চেক পান না। এই বয়সে, তাঁর পক্ষে বেতার ভবনে গিয়ে ধরনা দেওয়া সম্ভব নয়। তা হলে কি তিনি তাঁর স্বামীর রচিত গানের রয়্যালটি থেকে বঞ্চিতই রয়ে যাবেন। এমন অবস্থা শুধু তাঁর নয়, অসংখ্য উত্তরাধিকারীর, এমনকি অনেক বয়স্ক জীবিত গীতিকারেরও। যেমন আমি।
আমার বর্তমান বয়স ৭৮ বছর। ১৯৬৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আমি বাংলাদেশ বেতারে চাকরিরত ছিলাম। ১৯৯৩ সালে, বেতারের অনেক তোষণমূলক প্রচারণার সঙ্গে একমত হতে না পারায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের মধ্যে, তদানীন্তন সরকারঘনিষ্ঠ কারও কারও সঙ্গে আমার বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং আমি চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণে বাধ্য হই। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে, আমি বেতারের বিভিন্ন বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য পাণ্ডুলিপিসহ গান রচনা করে এসেছি। অন্যান্য বহু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করে এসেছি। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর আমার আর বেতার ভবনে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার প্রচুরসংখ্যক গান বেতারে প্রচারিত হলেও, একমাত্র বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছাড়া, বাংলাদেশ বেতার ঢাকার, আর কোনো রয়্যালটি চেক, আমি পাইনি।
এমনিতেই, বেতারের রয়্যালটির হার খুবই লজ্জাজনক। তার ওপরেও যদি তা নিয়মিত না পাওয়া যায়, তা হলে, ক্রমান্বয়ে বেতারের জন্য উন্নত মানের গানের রচয়িতার সংকট দেখা দেবেই। বর্তমানেই অনেক তরুণ গীতিকবি, তাদের রচিত গান নিয়ে নিজস্ব অ্যালবাম তৈরি করছেন, কিন্তু বেতারের জন্য গান রচনা করছেন না।
এই প্রেক্ষিতে, আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, এই সব বিষয়ে, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে, আপনি সানুগ্রহভাবে এমন আদেশ প্রদান করুন যাতে, বেতার রয়্যালটি প্রদানের দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বিনীত
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
গীতিকার,
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন।

বাংলাদেশ বেতারে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান (বাম থেকে দ্বিতীয়)

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি গান লিখেছেন। শতাধিক চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতাও তিনি। ১৯৬৬ সালে তিনি পান্না জামানকে বিয়ে করেন। আমাদের দুই সন্তান সানজিদা শারমিন জামান ও সুহানা শারমিন জামান।