হেডফোন পরতেই কেঁদে ফেললেন কনা

দিলশাদ নাহার কনা
সংগৃহীত

রাজধানীর হাতিরঝিলে শো করেছিলেন কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা। সেটা মার্চ মাসের কথা। করোনার আগে সেটাই ছিল তাঁর শেষ শো। এরপর করোনার প্রকোপ বেড়ে গেল। বিনোদন দুনিয়া গেল থেমে। ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে গেল সবাই। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলেন কনা। ঢাকা ছেড়ে তিনি চলে যান গাজীপুরে দাদার বাড়িতে। পরিবার–পরিজনের সঙ্গে অজানা এক ভাইরাসে সংক্রমণের ভয় ও শঙ্কায় দিন কাটছিল তাঁর।

কনা বলছিলেন, ‘সত্যি বলতে, ওই সময় খুব ভয় লাগত। আমি মনে হয় ভয়টা একটু বেশিই পেয়েছিলাম। তখন এই ভাইরাসে মৃত্যু, সংক্রমণ বেড়েই চলেছিল। বদ্ধ ঘরের চার দেয়ালে অসহায়ের মতো দিন কাটত আমার। কোনো কিছু মাথায় ছিল না তখন। আমি যে একজন শিল্পী, তা ভুলেই গিয়েছিলাম।’

দিলশাদ নাহার কনা
সংগৃহীত

ভয় ও শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমের বন্ধুরা অনলাইন ও মুঠোফোনে সাহস জুগিয়েছেন তাঁকে। উত্সাহ পেয়ে ধীরে ধীরে অনলাইনে দু–একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শুরু করেন তিনি। ভয় কাটতে শুরু করে কনার। তিনি বলেন, ‘আমার অবস্থা দেখে কাছের মানুষেরা এগিয়ে এসেছেন, সাহস জুগিয়েছেন আমাকে। অনলাইনে গান করা, অনলাইনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াসহ টুকটাক কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা, যাতে টেনশন ভুলে কিছুটা সহজ হতে পারি।’

এরপর জুলাই থেকে লকডাউন উঠে গেলে চারপাশ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দীর্ঘ আড়াই মাস পর ঢাকা ফেরেন কনা। বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যম সরব হতে থাকে। তিনিও ধীরে ধীরে কাজে নামেন। আগস্টে প্রথম ঢাকার বাসা থেকে বের হন এই শিল্পী। স্টুডিওতে গিয়ে বাপ্পা মজুমদারের করা একটি গানে কণ্ঠ দেন। তিনি মনে করেন, একজন কণ্ঠশিল্পীর ঘর হলো ‘স্টুডিও’, উঠান হলো ‘স্টেজ’। দীর্ঘদিন পরে স্টুডিওতে গান গাইতে গিয়ে আবেগী হয়ে পড়েন কনা। তিনি বলেন, ‘পাঁচ মাস পর স্টুডিওতে গান করতে গিয়ে আবেগী হয়ে পড়েছিলাম। হেডফোন পরতেই চোখে পানি চলে আসে, কেঁদে ফেলি। বলতে পারেন এটি আনন্দের কান্না।’

প্রথম আলোর একটি অনুষ্ঠানে কনা।

কনার গাওয়া সিনেমার গান দারুণ আলোচিত। করোনাকালে অডিও গানে কণ্ঠ দিলেও এত দিন সিনেমার গান করা হয়নি তাঁর। সম্প্রতি ‘লন্ডন লাভ’ নামে সিনেমার একটি গানে কনা ও ইমরান দ্বৈতকণ্ঠ দিয়েছেন। বাকি ছিল স্টেজ শো। সেটাও সচল হলো তাঁর। ২২ অক্টোবর রাতে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্টেজ শো করলেন। অনুষ্ঠানে সাতটি গান করলেন তিনি। প্রায় আট মাস পর স্টেজে গান গাইতে গিয়ে যেন অন্য জগতে ঢুকে গিয়েছিলেন এই শিল্পী। কনা বলেন, ‘স্টেজে গান করছি, দর্শকেরা করতালি দিচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে গানের অনুরোধ আসছে। আমার যেন দৃষ্টিবিভ্রম হচ্ছিল ওই সময়। মনে হচ্ছিল, এসব দৃশ্য আমি মোবাইলে দেখছি।’

একজন সংগীতশিল্পীর প্রাণই ‘স্টেজ শো’। দীর্ঘ সময় পরে সেটা শুরু করে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন বলে জানালেন কনা। এদিকে কনা ও ইমরানের দ্বৈতকণ্ঠে গাওয়া ‘দিল দিল’ ও ‘ওহে শ্যাম’ সিনেমার গান দুটি ইউটিউবে রেকর্ড গড়েছে। ‘দিল দিল’ গানটি দেখা হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত কোটিবার, ‘ওহে শ্যাম’ ছয় কোটি। বাংলাদেশের সিনেমার গানে ইউটিউবে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ‘ভিউ’ নিয়ে এ গান দুটি এখন রেকর্ড। এরই মধ্যে গানের ভিডিও নিয়ে আরেকটি আনন্দের খবর জানালেন। সিনেমার বাইরে তাঁর গাওয়া একক গান ‘ইচ্ছেগুলো’ ইউটিউবে চার কোটিবার দেখা হয়েছে। রোমান্টিক ধাঁচের এই গান শিল্পীরও বেশ পছন্দের।