মাইলস নিয়ে কী চলছে

মাইলসে কী ঘটছে?
ছবি: প্রথম আলো

শনিবার রাত একটা। মাইলসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ঘোষণা এল—পেজটি দখল করে নিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ! পরে সেটি উদ্ধার করা হয়। এরপর ভক্তদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, শাফিন আহমেদ কেন মাইলসের পেজ দখল করবেন? তিনি তো মাইলসের সদস্য। যাঁরা অবগত আছেন, তাঁদের মনে থাকার কথা, এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার শাফিন আহমেদ মাইলস ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আবার সে কথা ফিরিয়েও নিয়েছেন। মাইলস নিয়ে আসলে কী চলছে?

গত শনিবার দিবাগত রাত একটায় মাইলসের ফেসবুকে পোস্ট করা হয়, ‘গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাইলসের ফেসবুক পেজ থেকে হামিন আহমেদ, মানাম আহমেদ, জিয়াউর রহমান তূর্য ও ইকবাল আসিফ জুয়েলকে সরিয়ে পেজটি দখল করে নেন শাফিন আহমেদ। আপনাদের দোয়া আর সৌভাগ্যক্রমে ১০ ডিসেম্বর পেজটি ফেরত পাওয়া গেছে। ন্যক্কারজনক এই বেদখলের পেছনের সব ঘটনা প্রমাণসহ জানানো হবে যথা সময়ে। মাইলসের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।’

মাইলসের গান শাফিন আহমেদের নিজের ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা ইস্যুতে দলের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও মেধাস্বত্ব নিয়েও সদস্যদের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের মনোমালিন্য। সম্প্রতি কী ঘটেছিল, তা জানতে চাইলে হামিন আহমেদ বলেন, ‘মাইলসের অন্য সদস্যদের বের করে দিয়ে শাফিন ওই পেজটি দখল করে নিয়েছিলেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। বারবার এ রকম করলে দলের অন্য সদস্যরা সেটা সহ্য করবেন কেন?’

আসলেই কি শাফিন আহমেদ পেজটি দখল করেছিলেন? করলে কেন? প্রথম আলোকে শাফিন বলেন, ‘২০০৭ সালে ব্যান্ডের এই পেজ আমি খুলেছিলাম। ২০১৭ সালে হামিন আহমেদ প্রথম আমাকে এই পেজ থেকে সরিয়ে দিয়ে আমার নামে অনবরত অপপ্রচার চালাতে থাকে। দলের কনিষ্ঠ সদস্য দিয়ে পোস্টও লেখায়। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ করে সেসব বাজে পোস্ট বুস্ট করে। এসব নোংরামি ঠেকাতে আমি পেজটির দখল নিতে বাধ্য হই। আমার দখলে থাকা অবস্থায় গত ১০ মাস পেজ থেকে কোনো নোংরামি হয়নি।’

মাইলসের দ্বন্দ্ব নিয়ে বিভ্রান্ত ভক্তরা

গত ২৭ নভেম্বর ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন শাফিন আহমেদ। সেই ভিডিওর সূত্রে বিভিন্ন পোর্টাল ও সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, আবারও মাইলস ছাড়ছেন শাফিন। সেখানে তিনি বলেছেন, কেন মাইলসের বর্তমান লাইনআপের সঙ্গে তিনি কাজ করতে চান না। পরে প্রথম আলোর ফেসবুক লাইভে তিনি বলেছেন, ‘আমি বলিনি মাইলস ছেড়ে দিয়েছি।’

মাইলসের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে শাফিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘যেখানে মনের মিল একেবারেই নেই, সেখানে সংগীত করা সম্ভব নয়। আমি সরে থাকতে চাই, কিন্তু আমার সংগীতকর্ম থেমে থাকবে না।’ ব্যান্ডের কার্যক্রম বন্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই দলের পেছনে আমার শ্রম ও অবদান রয়েছে। আমি এর সুনাম ও ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করেছি। আমার সঙ্গে মীমাংসা না করে এই সুবিধাগুলো তারা ব্যবহার করবে, সেটা ভালো দেখায় না।’

‘মাইলসের আজকের সুনামের পেছনে দলের প্রতিটি সদস্যের অবদান রয়েছে। কেউ গান লিখেছেন, কেউ সুর করেছেন, কেউ বাজিয়েছেন আর গেয়েছেন’, বললেন হামিন আহমেদ।

সেই সুনাম থেকে উৎসারিত মেধাস্বত্বের বাঁটোয়ারা নিয়ে বারবার দ্বন্দ্ব দলটির ভক্তদের জন্যও দুঃখজনক। বারবার মাইলস সদস্যদের এমন বিভক্তি ও বিভাজন ভক্তদের মনে তাঁদের পছন্দের ব্যান্ড সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে। মিনহাজ আহমেদ নামের এক ভক্ত মাইলস ব্যান্ডের পেজে শনিবার দিবাগত রাতের পোস্টে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আপনাদের মতো প্রথম শ্রেণির ব্যান্ডের কাছ থেকে শ্রোতারা এসব আশা করে না। যার যার রাইট তাকে দিয়ে সবার প্রাণের ব্যান্ড মাইলসকে পুনরুজ্জীবিত করার অনুরোধ রইল।’

অনেকের কৈশোর ও তারুণ্যের প্রিয় ব্যান্ড মাইলস
ছবি: সংগৃহীত

তৌহিদুল আলম লিখেছেন, ‘কখনো ভাবতেই পারি না মাইলসের মতো লিজেন্ডারি, এত এডুকেটেড একটা ব্যান্ড এমন শিশুসুলভ আচরণ করবে। শাফিন ভাই, হামিন ভাই, মানাম আহমেদ—এঁদের কাউকে ছাড়া কি কখনো মাইলস কল্পনা করেছি? নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিজেরা মেটান, ফ্যানদের সামনে নেগেটিভিটি তুলে ধরার প্রয়োজন কী?’ পপি চৌধুরী লিখেছেন, ‘মাইলস আমার ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় ব্যান্ড। শাফিন, মানাম, হামিন—আপনাদের কাউকে ছাড়া মাইলস কল্পনা করা যায় না। আর শাফিন আহমেদ তো শাফিন আহমেদই। আপনাদের কাছে এমন কিছু কাম্য ছিলো না! দুঃখজনক।’

ভক্তরা মনে করেন লাইভ পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত ছিল মাইলস

হাবিবুল আলম মিশুক বলেন, ‘মাইলসের গান শুনে বেড়ে ওঠা। অন্যান্য ব্যান্ডের গান শুনলেও মাইলস ছিল সবচেয়ে প্রিয়। বাংলাদেশে কোনো ট্রু ব্যান্ড থাকলে সেটা মাইলস, কোনো ওয়ান ম্যান শো টাইপ ব্যান্ড নয়। প্রবাহ অ্যালবাম থেকে আপনাদের পাঁচজনের লাইনআপ দেখে অভ্যস্ত। প্রত্যেকেই মাইলসের জন্য নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। মাইলসের কম্পোজিশন, গেটআপ, স্টেজ পারফরম্যান্স—সবকিছুই পারফেক্ট ছিল। ক্যাসেটে শোনা গানের চেয়েও লাইভ পারফরম্যান্স বেশি দুর্দান্ত ছিল। একাধিকবার আপনাদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে, সমাধানও হয়েছে। আনন্দ, রাগ, মন খারাপ—সব সময়ই মাইলসের গান শুনেছি। ফ্যান হিসেবে ৪২ বছরের পুরোনো ক্ল্যাসিক একটা ব্যান্ডের কাছে, যাদের আইডল মনে করি, এসব প্রত্যাশা করি না। এ ধরনের নেগেটিভিটি আপনাদের কনট্রিবিউশনকে ছোট করবে। মাইলস নিয়ে আমাদের ভালো মেমোরিগুলো নষ্ট করবেন না।’

মাইলসের জ্যেষ্ঠ সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, ‘দলের সদস্যদের যেন সম্মানহানি না হয়, সে জন্য এত দিন অনেক কিছু করিনি বা বলিনি। শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত ঘটনা প্রকাশ করব।’