মিতা হক স্মরণে সংগতশিল্পী ওমর

এনামুল হক ওমর মিতা হকের পাশে। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক যে মঞ্চেই গাইতেন, ঠিক পাশেই পাওয়া যেত একজন সংগতশিল্পীকে। ডুগি-তবলায় তাল-বাদ্যে তিনি সঙ্গ দিতেন মিতাকে। কখনো রাজধানীর অনুষ্ঠান, কখনো মফস্বল শহর বা বিদেশে মিতার সঙ্গী ছিলেন এই শিল্পী এনামুল হক ওমর। ৩২ বছরের পথচলা তাঁদের। প্রয়াত মিতাকে স্মরণ করে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট লিখেছেন শিল্পী ওমর।

নিরহংকার মিতা হককে নিয়ে এনামুল হক ওমর লিখেছেন, ‘মিতা হক যখন শিল্পী মিতা হক হয়ে ওঠেননি, তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। কিন্তু পরিচয়ের শুরুতে যে মিতা হককে দেখছি, পরিণত মানুষ এবং জনপ্রিয় শিল্পী হওয়ার পরও তাঁর মধ্যে আপাত কোনো পরিবর্তন দেখিনি।’

এনামুল হক ওমর (বায়ে), গাইছেন মিতা হক। ছবি: ফেসবুক থেকে

মিতাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ওমর লিখেছেন, ‘মানুষকে আপন করে নেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর মধ্যে। ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর কিংবা নবীন কোনো শিল্পী, অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোনো শিল্পী আর আমাদের মতো তালবাদ্য এবং যন্ত্রসংগীতশিল্পী সকলকে পরম মমতায় আপন করে নিয়েছেন। তাই তো কখন যে সহশিল্পী থেকে তাঁর পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলাম, বুঝতেই পারিনি।’

এনামুল হক ওমর (বায়ে) মিতা হককে সঙ্গত করছেন। ছবি: ফেসবুক থেকে

স্মৃতিচারণা করে ওমর লিখেছেন, ‘আমাকে সঙ্গী করায় নানা পরিচয়ে তাঁকে দেখার সুযোগ হয়েছে। সংগীতের ক্লাসে, নাটকের দলে, নৃত্যনাট্যের দলে। লক্ষ করেছি সবখানেই তাঁর সফল পদচারণ, উজ্জ্বল উপস্থিতি। কোথাও কোনো ফাঁকি রাখতেন না, নিজের সম্বল সকলের মধ্যে উজাড় করে দিয়েছেন। আমৃত্যু তিনি শুধু রবীন্দ্রনাথের বাণী কণ্ঠেই ধারণ করেননি, সেই বাণীকে নিজের জীবনেও লালন করেছেন, পালন করেছেন। তিনি শুধু বাণী আর সুর পরিবেশন করতেন না বরং তিনি গান বলতেন। আর আমরা তালবাদ্যে, তাঁর সেই বলা গানকে যোগ্য সংগতে পৌঁছে দিয়েছি শ্রোতাদের কাছে। ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন তাঁর সাথে সংগত করেছি, তেমনি দেশের বাইরের বিভিন্ন শহরেও। লক্ষ করেছি, তিনি কণ্ঠ দিয়ে কীভাবে একের পর এক দ্বার খুলে চলেছেন, কীভাবে অন্তরকে বিকশিত করেছেন, কীভাবে সবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, কীভাবে চোখের জলে অহংকারকে ডুবিয়েছেন, আর সবার শেষে যা বাকি রয়, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেছেন।’

এনামুল হক ওমর মিতা হকের পাশে। ছবি: ফেসবুক থেকে

মিতা হকের সঙ্গী হিসেবে বেশ সম্মান পেয়েছেন ওমর। সে প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘দর্শক-শ্রোতার যে সম্মান আর ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হয়েছেন, আমিও তাঁর অংশভাগী হয়েছি তাঁর সাথে তালবাদ্যে সংগত করে। জীবনে তিনি যেমন পেয়েছেন অনেক, তেমনি না পাওয়ার বেদনাও ছিল। ছিল পারিবারিক দুঃখ-শোক, কিন্তু সাহস হারাননি কখনোই। সেই সঙ্গে মোহনীয় হাসিটিও কখনো মলিন হয়নি।’

প্রিয় শিল্পী ও স্বজন মিতা আপাকে স্মরণ করে তিনি লিখেছেন, ‘তিনি হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা শিল্পী নন, আমি মনে করি তিনি যেমন যাপিত জীবনে রবীন্দ্রনাথকে ধ্রুবতারা মেনে পথ চলেছেন, তেমনই আমাদের কাছেও তিনি রবীন্দ্রসংগীতের ধ্রুবতারা।’

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক গত ১১ এপ্রিল ভোরে পরলোকে পাড়ি দেন। নানা রোগে আক্রান্ত মিতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায়। তিনি প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। তাঁর চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। তাঁর মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী।