মেয়েটার জন্য আরও কিছুদিন বাঁচতে চান আকবর

ওজন কমে গেছে আকবরের। মাত্র ৩৮ কেজি! শঙ্কিত তাঁর স্ত্রী। আকবরের সারা শরীরে ফোসকা। গায়ে জামাকাপড় রাখতে পারেন না। শরীরে নানা জটিলতার কারণে এখন ঠিকমতো বসে থাকতেও পারছেন না। সারা শরীর কাঁপছে।

মেয়ে অথৈর সঙ্গে গায়ক আকবর
ফেসবুক

হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে নিজের অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন গায়ক আকবর। বাবার চোখের পানি সহ্য করতে না পেরে উঠে দাঁড়ায় পাশে বসা ছোট্ট মেয়েটা। হাত দিয়ে বাবার চোখের পানি মুছে দেয়। আকবরের কান্না আর তাঁর মেয়ের চোখের পানি মুছে দেওয়ার এ দৃশ্য দেখছেন আশপাশে থাকা অন্য রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রাত নয়টার দিকে আকবর বলেন, ‘এই মেয়ের জন্য আল্লাহ যেন আমাকে আরও কয়েকটা বছর বাঁচিয়ে রাখেন। আমি কিচ্ছু চাই না, শুধু মেয়েটার জন্য একটু বাঁচতে চাই।’

বাবা আকবর ও মেয়ে অথৈ
ফেসবুক

তখন হাসপাতাল ছিল একদম নীরব। দর্শনার্থী খুব একটা নেই। অন্য সময় সাধারণত যেমনটা দেখা যায়, গতকাল ছিল একদম ভিন্ন চিত্র। হাসপাতালের ডি ব্লকে লিফটের ১৫–তে গিয়ে একটি ওয়ার্ডে দেখা মেলে আকবরের, শুয়ে আছেন তিনি। পাশের বেডে বসে আছে মেয়ে। আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা তখন পাশে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে পাউরুটি, কলা, প্রেসক্রিপশন আর ওষুধের প্যাকেট নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন তিনি। দেখা হতেই বলেন, ‘এসেছেন? অথৈর (আকবরের মেয়ে) বাবার অবস্থা ভালো না।’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘এবার কেন যেন ভয় লাগছে। জানি না, কী হবে ওর। কিছুই খেতে পারছে না। ওজনও কমে গেছে অনেক। এত বড় একজন মানুষের ওজন মাত্র ৩৮ কেজি! তবে চিকিৎসকদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।’

ঈদের পর থেকে অসুস্থ গায়ক আকবরকে গত সপ্তাহে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। তিনি সুনীল কুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। আকবরের সারা শরীরে ফোসকা। গায়ে জামাকাপড়ও রাখতে পারেন না। শরীরে নানা জটিলতার কারণে এখন ঠিকমতো বসে থাকতেও পারছেন না। সারা শরীর কাঁপছে।

আকবর
সংগৃহীত

অনেক কষ্টে আকবর বলেন, ‘দেশের মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, কোনো দিন ভুলতে পারব না। আমি ছিলাম একজন রিকশাচালক, সেখান থেকে আমাকে স্যার (হানিফ সংকেত) এনে দেশবাসীর কাছে পরিচয় করিয়েছেন। এবারের অসুস্থতায় খুব ভয় হচ্ছে আমার মেয়েটার জন্য। আমার মেয়েটা খুব ভালো গান গায়। গানে তার খুব আগ্রহ। নিয়মিত হারমোনিয়াম নিয়ে বসে গান গায়। তাকে আমি শিল্পী হিসেবে দেখতে চাই, একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। মেয়েটার জন্য হলেও আমার আরও কয়েকটা বছর বাঁচা দরকার। তাকে সুন্দর একটা পরিবেশে আমি বড় করতে চাই। আমার স্ত্রীরও আমাকে নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাঁর জন্যও খুব মায়া লাগছে। তাদের তো আমি ছাড়া কেউ নেই।’

ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গায়ক আকবরের শারীরিক অবস্থা এখন অবনতির দিকে। এখন খেতেও পারছেন না। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। ব্যথায় চিৎকার করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গত বছর পাওয়া ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙতে পারলে চিকিৎসা ভালোভাবে চালিয়ে নিতে পারবেন বলে জানালেন আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। এরই মধ্যে সঞ্চয়পত্র ভাঙার আবেদনও করেছেন বলে জানান তিনি। কানিজ ফাতেমা বললেন, ‘এই কদিন ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২০ হাজার টাকা ধার করে এনেছি, বাকি ২০ হাজার দিয়েছেন দুজন। টাকার কষ্টের কথা আর বলতেও ইচ্ছা করে না। সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারলে আরও ভালোভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব। দেখি এখন কী হয়।’

হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র একটি গান তাঁকে আলোচনায় নিয়ে আসে। সেই থেকে আকবরের পরিবারের পাশে সব সময় থাকেন তিনি। আকবরের স্ত্রী বলেন, ‘স্যারের (হানিফ সংকেত) পরামর্শে আমরা চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।’

গত বছরের শুরুর দিকে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হয় আকবরকে। তাঁর অসুস্থতার খবর পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এরপর তাঁর পরিবারকে ডেকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই টাকার মুনাফা হিসেবে তিন মাস পরপর ৪৯ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তোলেন আকবর।