রক্তে সংক্রমণ, প্রতিদিন সকালে জ্বর আসছে ফকির আলমগীরের
এখনো ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে। শুক্রবার বিকেলে সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতি—কোনোটাই নেই। তাঁকে নতুন করে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা অপেক্ষায় আছেন, কেমন সাড়া পাওয়া যায় এ ওষুধের। আর পরিবারের পক্ষে দোয়া চেয়েছেন ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব।
শুক্রবার ফকির আলমগীরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রথম আলোকে ফকির আলমগীরের ছেলে মাশুক বলেন, ‘বাবার শরীরে ডি-ডাইমার কমেছে। রক্তে ও ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া গেছে। রক্তচাপ খুবই নেমে গেছে। রক্তে ইনফেকশনের জন্য প্রায় প্রতিদিনই সকালে জ্বর আসছে। আজ থেকে বাবাকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া শুরু হচ্ছে। এই অ্যান্টিবায়োটিক না কাজ করলে খুবই বিপদ হয়ে যাবে। বাবার জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’
এর আগে বৃহস্পতিবার মাশুক জানিয়েছেন, ফকির আলমগীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন শতভাগ। তাঁর ডান ফুসফুস সংক্রমণমুক্ত থাকলেও বাম ফুসফুস এখনো ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ফলে ডান পাশে কাত হলেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৭৫-এ নেমে আসে।
১৪ জুলাই ফকির আলমগীরের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে । এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু পরদিন সন্ধ্যা থেকে তাঁর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এরপর তাঁকে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাঁকে গুলশানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর দুই ব্যাগ প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একপর্যায়ে অবস্থার আরও অবনতি হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪৫-এ নেমে আসে। যার কারণে চিকিৎসকেরা তাঁকে ভেন্টিলেশন নেওয়ার পরামর্শ দেন।
স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন ফকির আলমগীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁর কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
গানগুলোর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীতচর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যাঁরা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।
ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।