রাগ সৃষ্টি করে আজাদ রহমানকে স্মরণ করলেন কবীর সুমন

প্রথম প্রয়াণ দিবসে রাগ রচনা করে সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমানকে স্মরণ করলেন জনপ্রিয় শিল্পী কবীর সুমনকোলাজ

কিংবদন্তিসম সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমানের নামে রাগ সৃষ্টি করলেন আরেক কিংবদন্তিসম শিল্পী কবীর সুমন। বাংলা খেয়াল গানের প্রথম সারির একজন শিল্পী ও স্রষ্টা আজাদ রহমানের প্রথম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে উৎসর্গ করে নতুন সৃষ্ট ‘রাগ আজাদ’–এ বন্দিশ গাইলেন সুমন। অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধার এ যেন এক অনন্য নজির।

গত বছরের ১৬ মে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওস্তাদ আজাদ রহমান। তাঁর সুরে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ী গান। বহু জনপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা ও গীতিকবি তিনি এবং বাংলা ভাষায় খেয়াল গানের রচয়িতাও। তাঁকে রাগ উৎসর্গ করে সুমন লিখেছেন, ‘আমি পশ্চিমবঙ্গের লোক। আমিও বাংলা খেয়ালের একজন সৈনিক। আজাদ রহমানকে আমি সালাম নমস্কার জানাচ্ছি।’

গত রোববার ছিল সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমানের প্রথম প্রয়াণ দিবস

আজাদ রহমানের গান শুনলেও তাঁর সঙ্গে কখনো মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি কবীর সুমনের। এটি তাঁর আজীবনের আফসোস। গত রোববার সন্ধ্যায় আজাদ রাগে একটি বন্দিশ গেয়ে তিনি প্রকাশ করেন ফেসবুকে। এর কয়েকটি চরণ ‘আজাদ রহমান/ বাংলা খেয়াল গান/ বাংলা ভাষার গানে/ খেয়াল তাঁকে টানে/ থেকে গেলেন তিনি বাংলায় বহমান/ বাংলাদেশের তিনি আজাদ রহমান।’ প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বান্ধবী সর্বরী দাশ আজাদ রহমানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ করিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। সেটা আর সম্ভব হয়নি। তিনিই কাল (রোববার) আজাদ রহমানের প্রথম প্রয়াণ দিবসের কথা মনে করিয়ে দেন। সেই সন্ধ্যায় আমি রাগটি সৃষ্টি করি।’

রাগ আজাদ কর্ণাটকি পরিবারভুক্ত। পূরবী ঠাট অন্তর্গত রাগ থেকে একটা পর্দা সরিয়ে এটি সৃষ্টি করা হয়েছে। কবীর সুমন জানান, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এই পদ্ধতিতে রাগ সৃষ্টির পরামর্শ দিতেন। সুমন বলেন, ‘আজাদ রাগে বন্দিশ বা বাংলা খেয়াল গানটি মধ্য লয়ের। পরে হয়তো এই রাগে বিলম্বিত লয়েও করব। এই রাগে রয়েছে একটি বিষণ্নতা, ঠিক যেমনটা থাকে বাংলার ভূপ্রকৃতিতে। এটি বিকেল, সন্ধ্যা বা রাতে গাওয়া যাবে।’

কবীর সুমন। ছবি: ফেসবুক থেকে

দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুস্তানি খেয়াল চর্চা করে আসছেন কবীর সুমন। এর আগেও তিনি বেশ কিছু রাগ সৃষ্টি করেছেন, করেছেন শতাধিক বন্দিশ। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা বাংলা খেয়াল গাইতে চান না, এমন আক্ষেপ নিয়ে সুমন বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছিলাম, যেন আমার বাংলা খেয়ালের পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমি সেই পরীক্ষা দিয়েছি। সরকার এ গানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখানকার সরকারি অনুষ্ঠানে এ গান করা হয়। বাংলাদেশ সরকারকেও অনুরোধ করব, রাষ্ট্রীয়ভাবে যেন বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দেন তাঁরা।’ বর্তমানে রাজ্য সংগীত একাডেমিতে এক বছরের একটি খেয়ালের কোর্স করাচ্ছেন তিনি। আজাদ রহমানকে উদ্ধৃত করে সুমন বলেন, ‘বাংলা খেয়াল কিন্তু হিন্দির অনুবাদ নয়। বাংলা ভাষায় এর নিজস্বতা রয়েছে।’

কবীর সুমন
সংগৃহীত

সুমন বলেন, আজাদ রহমান বাংলা খেয়াল নিয়ে একাই লড়ে গেছেন। তিনি বাংলায় এ রাগকে জনপ্রিয় করেছেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি একটি ভরসা তৈরি করতে পেরেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ, বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পী সত্যকিংকর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তারাপদ চক্রবর্তীও বাংলায় খেয়াল গাইতেন। এ প্রসঙ্গে স্মৃতি হাতড়ে সুমন বলেন, ‘আকাশবাণী কলকাতায় একসময় লাইভ অনুষ্ঠান হতো। তখন বাংলায় খেয়াল গাওয়া যেত না। সত্যকিংকর বন্দ্যোপাধ্যায় জোর করে লাইভে বাংলায় খেয়াল গেয়েছিলেন।’ বাংলা খেয়ালের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাবাদ জানিয়ে সুমন বলেন, ‘বাংলা খেয়াল বাঙালির ভবিষ্যৎ। আমার স্বপ্ন, আমরা দুই বাংলার মানুষ মিলে বাংলা খেয়াল গাইব।’