রায়েরবাজার কবরস্থানে সমাহিত ফরিদ আহমেদ

ফরিদ আহমেদ
ছবি : ফেসবুক থেকে

ইচ্ছা ছিল বাবার মরদেহ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে সমাহিত করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদকে ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। বাদ আসর কলাবাগান সেকেন্ড লেন ল কলেজ মাঠে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রায়েরবাজার কবরস্থানে। তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়। প্রথম আলোকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় খবরটি নিশ্চিত করেছেন সুরকার ও সংগীত পরিচালকের বড় মেয়ে দূর্দানা ফরিদ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সুরকার ও সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। করোনায় আক্রান্ত সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ ১১ এপ্রিল থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে হাসপাতাল থেকে পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়, তিনি মারা গেছেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঢাকার দুটি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন তিনি। আজ তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভে গেল। চিরতরে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন।

সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ ও সাবিনা ইয়াসমীন
ছবি : সংগৃহীত

গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ফরিদ আহমেদকে ১১ এপ্রিল রোববার ভোর থেকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ফরিদ আহমেদের শারীরিক অবস্থা তার আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা থেকে অবনতি হতে থাকে। এরপর চিকিৎসকেরা তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা বলেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেদিন রাত ১২টার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর আইসিইউয়ের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু ভোরবেলা পরিবারকে জানানো হয়, ফরিদ আহমেদকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিতে হবে। পরিবারের অনুমতি নিয়ে ভোররাত চারটায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
গত মাসের শেষ দিকে টানা কয়েক দিন ভীষণ জ্বর ছিল সুরকার ও সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদের। খাবারে স্বাদ-গন্ধ কিছুই পাচ্ছিলেন না। তিনবার করোনার পরীক্ষা করানো হয়। প্রথম দুই দফায় নেগেটিভ এলেও তৃতীয়বারে কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর আর বাসায় রাখা হয়নি তাঁকে। পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৫ মার্চ রাতে তাঁকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। ১৭ দিনের মাথায় তাঁর হাসপাতাল বদল করা হয়। করোনায় ফরিদ আহমেদের ফুসফুস সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছিল। শুরুর দিকে জানা যায়, তাঁর ফুসফুসের ৬০ শতাংশ সংক্রমিত হয়েছে। চিকিৎসকেরা সব চেষ্টাই করেছেন কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে ফরিদ আহমেদ
ছবি : সংগৃহীত

অনেক কালজয়ী গানের সুরকার ফরিদ আহমেদ। স্কুলবন্ধু বায়েজীদের কাছে গিটারে তাঁর হাতেখড়ি। এরপর ফিরোজ সাঁইয়ের হাত ধরে পেশাদার সংগীতাঙ্গনে তাঁর পথচলা। ব্যান্ড ‘স্পন্দন’-এ তখন তিনি বেজ গিটার বাজাতেন। ফিরোজ সাঁই স্পন্দন ছেড়ে দিলেও তাঁর সঙ্গে থেকেই তিনি গিটার বাজাতেন। লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ও কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’ গানে সুর করে প্রশংসিত হন ফরিদ আহমেদ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বহু গানের সুর তৈরি করেছেন তিনি। করেছেন সংগীতায়োজনও।

ফরিদ আহমেদ
ছবি : ফেসবুক থেকে

বিশেষ করে উল্লেখ করতেই হয় হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’-এর টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি...’, কুমার বিশ্বজিতের ‘মনেরই রাগ অনুরাগ’, ‘আমি তোরই সাথে ভাসতে পারি মরণ খেয়ায় একসাথে’, রুনা লায়লার ‘ফেরারী সাইরেন’, রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠে ‘দলছুট প্রজাপতি’, চ্যানেল আইয়ের ‘আজ জন্মদিন’, ‘ক্ষুদে গানরাজ’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’, ‘সেরা কণ্ঠ’ প্রতিযোগিতার থিম সং, সুমী শবনমের জনপ্রিয় গান ‘ললিতা’, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে সিনেমার গান ‘তুমি আমার জীবনের গহীনে’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকার তিনি। নূর হোসেন বলাইয়ের ‘নিষ্পত্তি’ চলচ্চিত্রে প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন ফরিদ আহমেদ।
২০১৭ সালে সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘তুমি রবে নীরবে’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করে এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই সিনেমার পরিচালক মাহবুবা ইসলাম। এই সিনেমার আবহ সংগীতের কাজও করেন ফরিদ আহমেদ।