লুইপার একদিন...

লুইপা ছবি: আনন্দ
লুইপা ছবি: আনন্দ

পরিচিতজনেরা আদর করে ডাকেন ‘লুই’।
বন্ধুরা ছন্দ মিলিয়ে বলে, ‘লুই, কেমন আছিস তুই?’
লুইপা ভালো আছেন। কোরবানির ঈদে বেরিয়েছে তাঁর প্রথম অ্যালবাম—ছায়াবাজি। ‘প্রথম অ্যালবাম’ ব্যাপারটা কি প্রথম সাইকেল চালানো, প্রথম সমুদ্র দেখা কিংবা প্রথম প্রেমের মতোই রোমাঞ্চকর? ৪ অক্টোবর প্রথম আলোর কার্যালয়ে বসে লুইপা কিন্তু বললেন ভিন্ন কথা। অ্যালবাম করার প্রক্রিয়াটা নাকি তাঁর কাছে স্কুল-কলেজের পরীক্ষার মতো লাগে! বলছিলেন, ‘সব সময় ভাবতাম মন দিয়ে ক্লাস করব। টিচারের কথাগুলো খাতায় টুকে নেব, ক্লাসওয়ার্ক-হোমওয়ার্ক ঠিকঠাক করব, পরীক্ষার আগে রাত-দিন পরিশ্রম করব। অথচ দেখা যেত আমার পরীক্ষাগুলো হতো এলোমেলো। খাতায় জবরজং লিখে বের হয়ে আসতাম। পাস হয়ে যেত, কিন্তু মন ভরত না। প্রথম অ্যালবামটাও তেমনই হলো। অনেক সময় নিয়ে, হয়তো একটু অন্যভাবে করতে চেয়েছিলাম। তাড়াহুড়ায় কেমন অগোছালো হয়ে গেল। তবু যা হয়েছে, আমি তাতেই খুশি।’
২০১০ সালে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠে পঞ্চম হয়েছিলেন। লুইপার গান ‘অনল’ ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ান মিউজিক ভিডিও অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। পেয়েছেন আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ডও। নিয়মিত মঞ্চে, টিভিতে গান করছেন। তবু অ্যালবাম করার সাহসটা ঠিক হচ্ছিল না। ‘আমার বর আলমগীর হোসেনের জোরাজুরিতেই কাজটা শেষ হলো। গানের ব্যাপারে ও খুব অনুপ্রেরণা দেয়। আমি শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেছি শুনে শুনে। এখন ওর পরামর্শেই প্রিয়াংকা গোপের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীত শিখছি।’ বোঝা গেল, পাশে থেকে আলমগীর হোসেনই লুইপাকে আরও দুই পা এগিয়ে দিয়েছেন।

>একদিন মঞ্চে গান করব, একদিন টিভিতে মানুষ আমাকে দেখবে, একদিন অ্যালবাম বের হবে...এতসব স্বপ্ন পেরিয়ে এখন কোন ‘একদিন’টার অপেক্ষায় আছেন লুইপা?

অ্যালবামের প্রথম গান, ‘ছায়াবাজি’ লুইপার সবচেয়ে প্রিয়। বলছিলেন, ‘তবলা, সেক্সোফোন, সরোদ, সেতার, বাঁশি—সব অ্যাকুস্টিক যন্ত্রানুষঙ্গে গানটা করা হয়েছে। সব সময় অ্যাকুস্টিক গানই আমার প্রিয়। পুরোনো গান খুব ভালোবাসি। গহরজানের সময়ের আধুনিক গান, বেগম আকতারের ঠুমরি, গজল, বড়ে গুলাম আলী, শচীন দেববর্মন, আর ডি বর্মনের গান শুনে শুনে কানের অভ্যাস হয়ে গেছে। শাহনাজ রহমতুল্লাহ, নিলুফার ইয়াসমীন, ফেরদৌসী রহমানদের মতো প্রিয় শিল্পীদের গান গাইতেই ভালো লাগে।’ গানের ওপর প্রযুক্তির দখল কানের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, এমনটা তাঁর ভালো লাগে না। কথা শুনে মনে হলো, ‘লুইপা’ নামের মতো মানুষটাও বুঝি প্রাচীন গ্রন্থ থেকে উঠে এসেছেন!
ছায়াবাজি বেরিয়েছে সিডি চয়েস থেকে। রবিউল ইসলামের লেখা গানগুলোর সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন কিশোর।
একদিন মঞ্চে গান করব, একদিন টিভিতে মানুষ আমাকে দেখবে, একদিন অ্যালবাম বের হবে...এতসব স্বপ্ন পেরিয়ে এখন কোন ‘একদিন’টার অপেক্ষায় আছেন লুইপা? প্রশ্ন শুনে খানিকটা ভাবলেন। ‘খুব বেশি কিছু মাথায় আসে না। শুধু কল্পনায় দেখি, একদিন মঞ্চে উঠব...দর্শকের শোরগোল, উল্লাস, চিৎকারের মাঝে। এত শব্দ যে গান শুরুর আগে আমার নিজের কথাও শুনতে পাব না। কিন্তু আমি যখন মুখ খুলব, তখন সব থেমে যাবে। সবাই মন দিয়ে গানটা উপভোগ করবে। গান “দেখবে” না, গান শুনবে।’
বোঝা গেল, ছায়াবাজি শেষে আপাতত স্বপ্নবাজি চলছে!