শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা, তালতলা কবরস্থানে ফকির আলমগীরের দাফন

ফকির আলমগীর

শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রয়াত সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখান থেকে নেওয়া হবে শিল্পীর নিজ এলাকা খিলগাঁওয়ে। স্থানীয় তালতলা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দ–সৈনিকের।

দুপুর ১২টায় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধার জানানোর সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। কঠোর লকডাউনে শ্রদ্ধা নিবেদন আয়োজনের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রথম আলোকে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আমরা অনুমতির জন্য অপেক্ষা করিনি, যেহেতু সময়ও কম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি আপত্তি জানানো হয়, তবে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। আশা করছি, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্বটি সম্পন্ন করা যাবে।’

ফকির আলমগীর
ছবি : সংগৃহীত

গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

ফকির আলমগীর

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফকির আলমগীর। ১৮ জুলাই চিকিৎসকেরা তাঁকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেন। গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসাধীন এ শিল্পীর হার্ট অ্যাটাক হয় বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে মাশুক আলমগীর রাজিব।

ফকির আলমগীরের ছোট ভাই ফকির সিরাজ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ফকির আলমগীর এর প্রথম জানাজা বেলা ১১টায় খিলগাঁও পল্লীমা সংসদ চত্বরে হবে। সেখান থেকে নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর মরদেহ জোহরের নামাজের পর নেওয়া হবে খিলগাঁও এলাকায়। সেখান তালতলা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করতেন

গতকাল রাতে ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বরেণ্য শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের সংগীতাঙ্গনে, বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ফকির আলমগীর ও হুমায়ুন ফরীদি, দুজনেই এখন স্মৃতি

এ ছাড়া পৃথকভাবে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান প্রমুখ।

বিয়ের দিন

ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা।

স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপগানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন শিল্পী ফকির আলমগীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁর কণ্ঠে ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’, ‘বনমালী তুমি’, ‘কালো কালো মানুষের দেশে’, ‘মায়ের একধার দুধের দাম’, ‘আহা রে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’সহ বেশ কিছু গান তুমুল জনপ্রিয়তা পা

গানের মিউজিক ভিডিওর শুটিং এ চিত্রনায়িকা মৌসুমীর সঙ্গ

এর মধ্যে ‘ও সখিনা’, ‘নাম তার ছিল জন হেনরি’সহ আরও কিছু গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযোগ সমিতির সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।