
রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্র নাথ, দিদি স্বর্ণ কুমারী, ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ বেশ কিছু গান লিখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে স্বর্ণ কুমারীর গান সর্বাধিক, তিন শর বেশি। তাঁদের গান সুরচিত অথচ তেমন প্রচারিত নয়। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন মিলনায়তনে ‘ঠাকুরবাড়ির গান ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গান শোনালেন দুই বাংলার শিল্পীরা।
সাংস্কৃতিক সংগঠন রক্তকরবী ও ইন্দিরা যৌথভাবে আয়োজন করে ‘এমন সুন্দর বিশ্বছবি’ শীর্ষক আয়োজনটি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে অতিথি ছিলেন কবিগুরুর মেজ ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ছেলের মেয়ে সুপূর্ণা ঠাকুর। গানের আসর শুরুর আগে তিনি বললেন, ‘আজকে খুব আনন্দ লাগছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে পুরো ঠাকুর পরিবারের গান পরিবেশন করা হবে। সবার যদি ভালো লাগে, তাহলেই এ আয়োজনের সার্থকতা আসবে।’
স্বাগত বক্তব্যে লেখক-প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন বলেন, ঠাকুরবাড়ির গানগুলো সব ধ্রুপদাঙ্গের গান। নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনার জন্য রচিত গানগুলোতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যোগ করলেন নতুন ব্যঞ্জনা।
সম্মেলক গান দিয়ে শুরু হয় আসর। শিল্পীরা শোনান দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেহজ্ঞান দিব্য জ্ঞান’ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জানি তুমি মঙ্গলময়’ গান দুটি। এরপর প্রতীম চক্রবর্তী শোনান দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আজি কি হরষে’ গানটি। টিংকু শীল শোনান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কে রচে এমন সুন্দর বিশ্বছবি’, শিল্পী শ্রীনন্দা মল্লিক শোনান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কেন ভোল চির’ এবং অপূর্ব তরফদারের কণ্ঠে শোনা যায় সৌদামিনী দেবীর ‘প্রভু পূজিব তোমারে’ গানটি।
কয়েকটি একক গানের পর আবার সম্মেলক। এবার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আহ্ কি চাঁদনী রাত’। শিল্পী সত্যজিৎ ঘোষের কণ্ঠে শোনা যায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐ যে দেখা যায় আনন্দধাম’। দুটি সম্মেলক গানের পর প্রবীর ঘোষ শোনান স্বর্ণ কুমারী দেবীর ‘দীন দয়াময়’ গানটি। সম্মেলক কণ্ঠে প্রতিভা দেবীর ‘হরি তোমা বীণে’ গান শেষে শমী সুহৃদের কণ্ঠে শোনা যায় বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অসীম রহস্য মাঝে’, শুভ্রতা দাস ও শ্রাবন্তী ধরের যৌথকণ্ঠে ছিল সরলা দেবীর ‘হে বিজন অতিথি’ ও পূরবী বড়ুয়ার কণ্ঠে গীত হয় ইন্দিরা দেবীর ‘তারে রেখো রেখো তব পায়’। আবারও সম্মেলক। ইন্দিরা দেবীর ‘আয় বীণা কোলে’ সমবেত পরিবেশনার পর নীলোত্পল সাধ্য ইন্দিরা দেবীর ‘এসো দয়া গলে যাক’, অথৈ শোনান দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পথ পাশে মোর রচিনু দেউল’, শ্রীমন্তী মুখোপাধ্যায় শোনান হেমলতা দেবীর ‘বালক প্রাণে আলোক জ্বালি’ গানটি।
আয়োজনের শেষ প্রান্তে ছিল কবিগুরুর গান। একক কণ্ঠে বাংলাদেশের শীলা মোমেন ‘কিছুই তো হলো না’ গানটি গেয়ে শোনান। সম্মেলক কণ্ঠে কবিগুরুর ‘ধূসর জীবনের গোধূলীতে’ গানটির মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঠাকুর পরিবারের চার প্রজন্মের গানের এই আয়োজন।