শুরুতেই সাড়া কোক স্টুডিও বাংলায়

কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম গানে অনিমেষ রায় ও পান্থ কানাই

ইউটিউবে গান শোনা তখন ছিল অদ্ভুত আনন্দের। সেই অভিজ্ঞতাকে একদিন আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল ‘আমায় ভাসাইলি রে, আমায় ডুবাইলি রে’ গানটি। কবি জসীমউদ্‌দীনের লেখা এ পল্লিগীতি দরদভরা কণ্ঠে গেয়েছিলেন পাকিস্তানের শিল্পী আলমগীর আর গানের একটি অংশে উর্দু ভাষায় কণ্ঠ দেন ফারিহা ফারভেজ। সেই গানের লিংক বা সূত্র ধরে শ্রোতা ভেসে যান কোক স্টুডিওর গানের রাজ্যে। বহু পথ ঘুরে, বহুদিন পর সেই কোক স্টুডিও জানাচ্ছে, ‘আমি দেশ–বিদেশে বেড়াই ঘুরে’। বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে কোক স্টুডিও বাংলা।

হাজং ও বাংলার ফিউশন ‘নাসেক নাসেক’ দিয়ে উদ্দীপ্ত সূচনা হলো কোক স্টুডিও বাংলার। অনিমেষ রায় ও পান্থ কানাইয়ের কণ্ঠে গত বুধবার রাতে স্টুডিওর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয় গানটি। প্রকাশের পর থেকে হাজার হাজার সংগীতপ্রেমী অভিবাদন জানিয়েছেন এ উদ্যোগকে। হাজং ভাষায় অনিমেষের লেখা ‘নাসেক নাসেক’ গানের সঙ্গে পান্থ কানাইয়ের কণ্ঠে যুক্ত হয়েছে লোকসংগীত ‘দোল দোল দুলুনি’ গানটি। এর সংগীতায়োজন করেছেন অদিত। ভাষা আন্দোলনের মাসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় একটি উৎসবমুখর গানকে সূচনাসংগীত হিসেবে অনবদ্য বিবেচনা করেছেন বেশির ভাগ শ্রোতা। ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে নাজিয়া আন্নি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাষা যে শুধু বাংলা না, সেটা কোক স্টুডিওর প্রথম এপিসোডে দেখে ভালো লাগল।’ শুভকামনা জানিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শ্রোতা শ্রেয়া ঘোষ লিখেছেন, ‘ঝড় তুলে দিলেন। এই ঝড় যেন না থামে। স্বদেশিয়ানা গানের চেতনাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। অনেক শুভকামনা রইল।’

পান্থ কানাই

শিল্পীরা গান করছেন, যন্ত্রশিল্পীরা বাজাচ্ছেন স্টুডিওতে—এ দৃশ্য দেখার সুযোগ শ্রোতাদের ছিল না। শ্রোতারা দেখবেন বলে কোক স্টুডিও সাজিয়ে–গুছিয়ে ওই ঘরকে করে তোলেন বর্ণিল। নানা ধরনের বাদ্য আর সুরযন্ত্রে ঠাসা সেই গানঘর। যেকোনো গান এ স্টুডিওতে বসে গাইলে সেটি পেয়ে যায় অন্য রকম এক মাত্রা। এ স্টুডিওর বদৌলতে নিখুঁত শব্দ–সুর, দুর্দান্ত গায়কির সঙ্গে শিল্পীর অভিব্যক্তি পুরোনো প্রিয় গানগুলোকে মানুষের কাছে করে তুলছিল আরও প্রিয়। বাংলাদেশে যাত্রার শুরুতে কোক স্টুডিওর ‘একলা চলো’ শিরোনামে গানটিতে শোনা গেল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুরে গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গানের খানিকটা। জানান দিল আরও নানা চমক নিয়ে আসছে তারা।

কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলোর বাছাই–বিন্যাস ও প্রযোজনা করছেন শিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্ণব। কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন, প্রত্যাশাই–বা কেমন ছিল? অর্ণব বলেন, ‘খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। এ রকম প্রত্যাশাই ছিল। বাংলাদেশিরা এটা নিয়ে গর্বিত। এ উদ্যোগ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙা করবে। আমরা নতুন–পুরোনো শিল্পীদের খুঁজে নিচ্ছি। আমরা এমনভাবে ডিজাইন করেছি, বাংলাদেশের আওয়াজটা বিশ্বের কাছে পৌঁছে যাবে।’

অনিমেষ রায়

এই সিজনে গান করেছেন সামিনা চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, মমতাজ বেগম, পান্থ কানাই, মিজান, দিলশাদ নাহার কণা, অর্ণব প্রমুখ। কোক স্টুডিও বাংলার সৃজন–নির্দেশক সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন বলেন, ‘আমরা শিকড়ের গান নিয়ে কাজ করছি। সেগুলোকে এমনভাবে সমসাময়িক করার চেষ্টা করেছি, যাতে এখনকার তরুণদের সেগুলো ভালো লাগে। কারণ, তারা স্পর্টিফাই, কোক স্টুডিও পাকিস্তান ও ভারতের গানগুলো শুনে ও দেখে ফেলেছে। এই তরুণেরা আমাদের কাছে সেই মানের মিউজিক প্রত্যাশা করবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে তারা যেন আমাদের এ গানগুলো শুনে আনন্দ পায়। বিদেশি কাউকে কোক স্টুডিও বাংলার একটা গান শুনিয়ে যেন গর্ব করে বলতে পারে, এটা আমাদের গান।’

কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম সিজনের প্রযোজক সায়ান চৌধুরী অর্ণব

কোক স্টুডিও পাকিস্তান ও কোক স্টুডিও ভারত থেকে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছিল হিন্দি ও উর্দু ভাষার বেশ কিছু জনপ্রিয় গান। দেশ দুটির অনেক শিল্পীকে বাংলাদেশে নতুন করে দিয়েছে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। সোনা মহাপাত্রের কণ্ঠে ‘রঙ্গবতী’, অনুপম রায়–সাত্যকী ব্যানার্জীর কণ্ঠে ‘মিলন হবে কত দিনে’, পাপনের কণ্ঠে ‘দিনে দিনে’, পাকিস্তানের আয়েশা ওমরের ‘লাগেরে নেয়েনা’, জোয়ি ভিকাজির কণ্ঠে ‘ইশক কিনারা’, আতিফ আসলামের কণ্ঠে ‘তাসদার–এ–হারাম’, রাহাত ফতেহ আলী খানের কণ্ঠে ‘রঙ্গ’সহ অনেক শিল্পীর অনেক গান শুনেছেন বাংলাদেশের শ্রোতারা। এবার দেশের গান শোনার সুযোগ। প্রতি মাসে একটি করে নতুন গান প্রকাশিত হবে কোক স্টুডিও বাংলা থেকে। বাংলাদেশে কোক স্টুডিওকে স্বাগত।