সুরসপ্তকের দুই দশকে গানে গানে সম্মাননা

ফেরদৌস আরা ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সুরসপ্তক সম্মাননা হাতে আগুন, মিতু দাশ, রওশন আরা ও রাহাত আরা গীতি। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
ফেরদৌস আরা ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সুরসপ্তক সম্মাননা হাতে আগুন, মিতু দাশ, রওশন আরা ও রাহাত আরা গীতি। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

গানে গানে গুণীজন সম্মাননা দিয়েছে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরসপ্তক। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, তাঁদেরও পুরস্কৃত করেছে। ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় গুণী ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও সুরসপ্তকের প্রতিষ্ঠাতা নজরুলসংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা।

অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রথম আলোকে ফেরদৌস আরা বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা এমন কিছু গুণী ব্যক্তির পরিবারকে একত্র করতে চেয়েছি, যাঁদের দেখানো পথে আমরা হাঁটছি। গুণীদের অনেকে আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। আমরা চেয়েছি, এই পরিবারের পরের প্রজন্মের হাতে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি তুলে দিতে। একই সঙ্গে আমাদের পরের প্রজন্মের কয়েকজনকেও সম্মাননা স্মারক প্রদান করেছি।’

শারীরিক অসুস্থতার কারণে আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করতে আসতে পারেননি ফেরদৌসী রহমান। এর বাইরে সম্মাননা প্রদান করা হয় শাহীন সামাদ, খায়রুল আনাম শাকিল ও নাশিদ কামালকে। তরুণ শিল্পীদের মধ্য থেকেও তিনজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

সুরসপ্তকের দুই দশক পূর্তিতে গাইছেন খায়রুল আনাম শাকিল। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
সুরসপ্তকের দুই দশক পূর্তিতে গাইছেন খায়রুল আনাম শাকিল। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সুরসপ্তকের শুরু প্রসঙ্গে ফেরদৌস আরা বলেন, ‘আমি একসময় থাকব না; কিন্তু নিজের যেটুকু অর্জন বা জানাশোনা, তার খানিকটাও যদি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে যেতে পারি, সেটাই হবে সার্থকতা। সে লক্ষ্যেই সুরসপ্তক শুরু করি। আশা করি, প্রতিষ্ঠানটিকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে পারব।’

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করছে। এখন যে পদ্ধতিতে চলছে, সেভাবেই প্রতিষ্ঠানটিকে চালানোর ইচ্ছা ফেরদৌস আরার। তবে ২৫ বছর পূর্তিতে আরও ভালোভাবে অনুষ্ঠান করার স্বপ্ন তাঁর। সুরসপ্তকের নামকরণ প্রসঙ্গে ফেরদৌস আরা বলেন, ‘আমার বড় বোনেরা ও আমি গান গাইতে খুব পছন্দ করতাম। আমার বড় বোন হুরি জান্নাত ডাকসু চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। সে সময় যাঁরা ডাকসু চ্যাম্পিয়ন হতেন, তাঁদের আলাদাভাবে দেখা হতো। শাহীন সামাদ, আমার বড় বোনসহ অনেকেই তখন সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করতেন। শাহীন আপা আক্ষেপ করতেন, তোমার বোনের কারণে আমি কোনো দিন প্রথম হতে পারিনি। বাসায় শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা হতো। আমার চাচা আবদুস শাকুর ও বড় বোন রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা করতেন। বাসায় শিক্ষকেরা এসে শেখাতেন। বাসায় গানের যত বই ছিল, সব কটির গায়ে বাবা লিখে রাখতেন সুরসপ্তক। সেই সুরসপ্তক থেকেই আমার সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন নাম দিই।’

সুরসপ্তকের দুই দশক পূর্তিতে গাইছেন ফেরদৌস আরা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
সুরসপ্তকের দুই দশক পূর্তিতে গাইছেন ফেরদৌস আরা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ফেরদৌস আরা জানান, সুরসপ্তক থেকে অনেক শিক্ষার্থী সংগীতের পাট চুকিয়ে দেশে ও বিদেশে সুনামের সঙ্গে গান করছেন। তাঁদের নিয়ে আগে নানাভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও এবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রয়াত গুণীজনদের সন্তানদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন নীলুফার ইয়াসমীনের ছেলে আগুন, সোহরাব হোসেনের মেয়ে রওশন আরা ও রাহাত আরা গীতি, সুধীন দাশের মেয়ে মিতু দাশ এবং আবদুস শাকুরের ছেলে ইশতিয়াক আহমেদ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর প্রমুখ।