সে হারাল কোথায় কোন দূর অজানায়...

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ
ছবি: প্রথম আলো

‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’—জনপ্রিয় কিছু দেশাত্মবোধক গান। আর এসব গানের গায়ক কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ। দেশাত্মবোধক গানে এ দেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক কণ্ঠস্বর তিনি।
দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে তাঁর কণ্ঠে রয়েছে অসংখ্য কালজয়ী গান।

দেশাত্মবোধক গান, গজল, প্রেমের গান, বিরহের গান, উর্দুসহ সব ধরনের গানে তিনি অনন্য। তাঁর গাওয়া কালজয়ী অজস্র জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান সর্বস্তরের বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। দেশাত্মবোধক গানের জন্য সর্বসাধারণের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতউল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পায়। সেই তালিকার ৯ নম্বরে আছে ‌‌‌‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ গানটি। ১৩ নম্বর স্থানে আছে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি। তালিকার ১৫ নম্বর গানটি ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ গানটি রয়েছে ১৯ নম্বর স্থানে, যা আমাদের সংগীতকে করেছে অনন্য উজ্জ্বল ও শোভামণ্ডিত।

দেশাত্মবোধক গান, গজল, প্রেমের গান, বিরহের গান, উর্দুসহ সব ধরনের গানে তিনি অনন্য
ছবি: সংগৃহীত

এম ফজলুল হক ও আসিয়া হকের ছোট সন্তান শাহনাজ রহমতউল্লাহ ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার অনুপ্রেরণা আর মায়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একেবারে ছোটবেলায় শাহনাজের গানে হাতেখড়ি। বরেণ্য এ শিল্পী গানের তালিম নেন ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, ওস্তাদ মনির হোসেন এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদের কাছে। তিনি গজল শিখেছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি গজলসম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে।
১৯৬৩ সালে শাহনাজ রহমতউল্লাহ মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘নতুন সুর’ সিনেমার গানে কণ্ঠ দেন। এরপর বহু সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৬৪ সাল থেকে টেলিভিশনে গাইতে শুরু করেন। তিনি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, খান আতা প্রমুখের সুরে গান গেয়েছেন। গানের জগতে ৫০ বছরের অধিক সময়ের সংগীতজীবনে শাহনাজ রহমতউল্লাহর চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

শাহনাজ রহমতউল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

অগণিত ভক্তের ভালোবাসাসহ তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননার তালিকাটাও ছোট নয়। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শাহনাজ রহমতুল্লাহ ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজনে আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৩ সালে সিটি ব্যাংক থেকে তাঁকে গুণীজন সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী।

শাহনাজ রহমতউল্লাহ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

‘সে হারাল কোথায় কোন দূর অজানায়’—নিজের গাওয়া এই গানের মতোই দূর অজানায় হারিয়ে গেলেন তিনি। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের এই দিনে ঢাকার বারিধারায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। আজ তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।