‘সে হারাল কোথায় কোন দূর অজানায়’

জন্মদিনে শাহনাজ রহমতউল্লাহকে স্মরণ করলেন সমকালীন সংগীতশিল্পীরাছবি: কোলাজ

বহু জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের শিল্পী তিনি। বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহর আজ জন্মদিন। শাহনাজ রহমতউল্লাহর জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৫৩, ঢাকায়। এক সংগীত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর দুই ভাই ছিলেন আনোয়ার পারভেজ (সুরকার) ও জাফর ইকবাল (চিত্রনায়ক ও গায়ক)। শাহনাজ রহমতউল্লাহ ১০ বছর বয়সেই প্রথম প্লেব্যাক করেন নতুন সুর নামের একটি চলচ্চিত্রে। টেলিভিশনে প্রথম গান করেন ১৯৬৪ সালে। গানের তালিম নিয়েছেন গজলসম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে।

১৯৯২ সালে শাহনাজ রহমতউল্লাহ পেয়েছেন একুশে পদক
ছবি: প্রথম আলো

বিবিসির একটি জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের মধ্যে ৪টি গানের শিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ। এর মধ্যে ১টি খান আতাউর রহমানের লেখা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং আনোয়ার পারভেজের সুর করা বাকি ৩টি গান হলো ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না, আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ এবং ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’। ১৯৯২ সালে শাহনাজ রহমতউল্লাহ পেয়েছেন একুশে পদক।

১৯৯০ সালে ছুটির ফাঁদে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আজ জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করলেন সমকালীন চারজন সংগীতশিল্পী।

সৈয়দ আব্দুল হাদী
ছবি: প্রথম আলো

তাকে আমি বাংলাদেশের ফাইরুজ বলতাম, সৈয়দ আব্দুল হাদী


শাহনাজ এক বিরল কণ্ঠের অধিকারী শিল্পী। তার কণ্ঠের মাধুর্য, টেকচার, রেঞ্জ—সবকিছু মিলে আন্তর্জাতিক মানের ছিল। শাহনাজের মেজাজি গায়কি, আবেগপূর্ণ গায়কি শোনামাত্রই শ্রোতার অন্তরকে সংক্রমিত করতে পারত সেই আবেগ। তাকে তো আমি সব সময় বাংলাদেশের ফাইরুজ বলতাম। ষাটের দশক থেকে আমাদের পরিচয়, ছিল আত্মার সম্পর্ক। নিয়মিত যোগাযোগ হতো। আমি তখন টেলিভিশনের প্রযোজক। তাকে নিয়ে এলাম গান গাওয়াতে। তখন থেকে সে টেলিভিশনে গান গাইত। তারপর একবার আমরা দুজন মিলে একটা দ্বৈত গান করেছিলাম। ‘সাগরের তীর থেকে’ গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়।

সাবিনা ইয়াসমিন। ছবি: ফেসবুক থেকে

বয়সে বড় হলেও সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের, সাবিনা ইয়াসমীন


ছোটবেলা থেকেই আমাদের দুজনের সম্পর্ক। ওকে আমি শাহীন বলে ডাকতাম, আর ও ডাকত রোজী নামে। আনোয়ার পারভেজ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার কারণে বাসায় যাতায়াতও হতো বেশি। বয়সে আমার চেয়ে বড় হলেও সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো।

১৯৬৬ বা ৬৭ সালের দিকে রেডিওতে ‘খেলাঘর’ অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পী হিসেবে আমরা দুজন গান করতাম। পরে দ্বৈতকণ্ঠে ছয়-সাতটি চলচ্চিত্রের গান করেছি। শুরুর দিকে আলী হোসেন ভাইয়ের সংগীত পরিচালনায় ‘দাও গায়েহলুদ, পায়ে আলতা’ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলাম। যখন গাইতে যেতাম, খুব আড্ডা হতো।

খুরশীদ আলম
ছবি: প্রথম আলো

দেশের গানে সে অনবদ্য, খুরশীদ আলম


কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও আমার মতে, বাংলাদেশের সেরা সংগীতশিল্পীর নাম শাহনাজ রহমতউল্লাহ। চর্চা তিনি সংগ্রাম করে তাঁর এই জায়গা তৈরি করেছেন। তাঁর পরিবার ছিল সংগীতের। আনোয়ার পারভেজ তাঁর বড় ভাই, ছোট ভাই জাফর ইকবাল। তাঁর এই শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে বড় অবদান ছিল তাঁর মায়ের। দেশের গানে তিনি অনবদ্য। শাহনাজ রহমতউল্লাহ যতগুলো গান গেয়েছেন, কোনো গান ফেলা যাবে না। তিনি বড় মাপের শিল্পী ছিলেন। সবাইকে যতটুকু শ্রদ্ধা, যাকে যতটুকু আদর করা দরকার, তিনি করতেন। তাঁকে আমি ছোট বোনের মতো স্নেহ করি।

তিনি থাকতেন নয়াপল্টনে, আমি পুরানা পল্টনে। তাঁর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর রহমতউল্লাহ আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আমার বাবার ছাত্র ছিলেন। আমরা ছিলাম খুবই কাছের। আমি বেতার ও টেলিভিশনে গান করেছি তাঁর সঙ্গে।

সামিনা চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

গান ও জীবনাচরণ আমি অনুসরণ করতাম, সামিনা চৌধুরী

ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রতি অদ্ভুত মুগ্ধতা ছিল। তিনি ছিলেন প্রাণের শিল্পী। হৃদয় দিয়ে গাইতেন তিনি। হৃদয় ছুঁয়ে যেত তাঁর গাওয়া গান। প্রতিটি সুর, প্রতিটি এক্সপ্রেশন ফিল করতে পারতাম। তাঁর সঙ্গে চাচি–ভাতিজির সম্পর্ক ছিল। একবার কাতারের একটি অনুষ্ঠানে আমি চাচিকে নিজ হাতে মেকআপ করিয়ে দিয়েছিলাম। এতটাই ভালো লাগে, তখনই বলেন, এখন থেকে তুই আমার মেকআপ করে দিবি। চাচার সঙ্গে (শাহনাজ রহমতউল্লাহর স্বামী) তাঁর সম্পর্কটা আমাকে মুগ্ধ করত। বিয়ের পর থেকেই তাঁদের এত চমৎকার বন্ধন ছিল। চাচির জীবনটা এতটাই সুন্দর ছিল যে তাঁর গান ও জীবনাচরণ অনুসরণ করতাম। সরলতা তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ।