১৬ ডিসেম্বর জন্মদিন, বাবাকে নিয়ে সামিনার স্মৃতিচারণা

বাবা মাহমুদুন্নবীর সঙ্গে সন্তানেরা (সবার বাঁয়ে সামিনা চৌধুরী)

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। দেশ সম্পর্কে প্রকাশ করেছেন নিজের অনুভূতি। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরীর স্ট্যাটাসটি। তাঁর কাছে বিজয় দিবসের আনন্দটা অন্য রকম, একটু বেশি। ১৬ ডিসেম্বর তাঁর বাবা প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী মাহমুদুন্নবীর জন্মদিন। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বাবাকে স্মরণ করলেন। স্মৃতিচারণা করলেন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিনটির কথা।
সামিনা চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে প্রতিটি দিনই ভালো। আজকের দিনটি একটু বেশি ভালো। ১৯৩৬ সালের ১৬ ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া আমার বাবা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী মাহমুদুন্নবীকে দেখেছি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালবেলা পরিবার এবং প্রতিবেশী সকলকে নিয়ে ছাদে গিয়ে বাংলাদেশের বিজয়ের আনন্দে গর্বে আনন্দের অশ্রু চোখে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” গাইতে...। দেশ পেল বিজয় ১৬ ডিসেম্বরে, সেদিন, সেই ১৬ ডিসেম্বর থেকেই বাংলায় জোর গলায় গান গাইবার স্বাধীনতা পেয়েছি...।’

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অনেক গান গেয়ে মাহমুদুন্নবী দর্শকহৃদয়ে আজও অমর হয়ে আছেন। তাঁর গাওয়া ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে’, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘এক অন্তবিহীন স্বপ্ন ছিল’, ‘আমি তো আজ ভুলে গেছি সবই’, ‘মনে তো পড়ে না কোনো দিন’, ‘সুরের ভুবনে আমি আজও পথচারী’, ‘বড় একা একা লাগে তুমি পাশে নেই বলে’, ‘তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছো আমার অজান্তে’, ‘গীতিময় এই দিন সেই দিন চিরদিন রবে কি’, ‘ওগো মোর মধুমিতা’, ‘আমি ছন্দহারা এক নদীর মতো ছুটে যাই’, ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’, ‘ও মেয়ের নাম দিব কি’ গানগুলো উল্লেখযোগ্য।

সামিনা চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

সত্তর ও আশির দশকের সেই জনপ্রিয় শিল্পীর আজ জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

মাহমুদুন্নবী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রয়াত এ শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সমকালীন শিল্পীরা জানিয়েছেন, মাহমুদুন্নবী ছিলেন সহজ-সরল, মিষ্টভাষী এবং গানপাগল মানুষ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি কেবল গানই লালন করেছেন হৃদয়ে। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া রোমান্টিক চলচ্চিত্র ‘দি রেইন’-এ ‘আমি তো আজ ভুলে গেছি সবই’ গানটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ১৯৭৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। শিল্পী মাহমুদুন্নবী ১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর চার সন্তান ও অগণিত ভক্ত-শ্রোতা রেখে মারা যান। তাঁর চার সন্তান—কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী, রিদওয়ান নবী পঞ্চম ও তানজিদা নবী।

‘মুক্তির কথা বিজয়ের গান’ অনুষ্ঠানের দৃশ্যে সামিনা চৌধুরী
সংগৃহীত

একবার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সামিনা চৌধুরী জানান সংগীতচর্চা শুরু করার পর বাবাকে বেশি দিন কাছে পাননি তিনি। পেলে তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছুই নিতে পারতেন। সেই আক্ষেপ তাঁর সারা জীবনের। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘বাড়িতে বাবাকে গাইতে শুনতাম। কিন্তু নিজে যখন সংগীতচর্চা শুরু করি, ততদিনে বাবা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। একসময় চলেও যান। মাত্র দুই বছর তাঁকে পেয়েছিলাম। তবে এরই মধ্যে তাঁর প্রতিভার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হয়েছিল আমাদের জীবন।’ বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সামিনা চৌধুরী আরও বলেন, ‘মনে পড়ে যে আব্বা যেদিন মারা গেলেন, সেদিন তাঁর মাথার পাশে আমার মাথাটা রেখে অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম। আব্বার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া তো একদমই কথা বলতাম না। খুবই ফরমাল ছিলাম। আব্বাও খুব কম কথা বলতেন। আগেকার বেশির ভাগ বাবাই এমন ছিলেন। তাই আমরাও দূরে দূরে থাকতাম।’