‘অপরাজিত’ প্রদর্শনের জন্য ঠাঁই পেল না নন্দনে

অস্কারজয়ী চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ১৯৫৫ সালে নির্মিত ‘পথের পাঁচালী’ ছবি নির্মাণের নেপথ্যকাহিনি নিয়ে এবার নতুন করে ‘অপরাজিত’ নামের একটি ছবি নির্মাণ করেছেন কলকাতার চিত্রপরিচালক অনীক দত্ত। গতকাল শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পেয়েছে কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সের প্রেক্ষাগৃহ এলগিন রোডের ফোরামে। কিন্তু ছবির পরিচালক ও কলাকুশলীরা চেয়েছিলেন এই ছবিটি সাধারণ মানুষের দেখার জন্য নন্দন ও রাধা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হোক। এই দুটি প্রেক্ষাগৃহই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি ছবিটি প্রদর্শনের জন্য।

এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। ছবির পক্ষে একদল বলছেন, পরিচালক অনীক দত্ত বাম ঘরানার চিত্রপরিচালক। তাই রাজ্য সরকার এই ছবিটি নন্দনে বা রাধা প্রেক্ষাগৃহতে প্রদর্শনের অনুমতি দেয়নি। এমনও অভিযোগ উঠেছে, পরিচালক বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। ফলে সরকার অনুমতি দেয়নি।
যদিও এই ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়া রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। সায়নী ঘোষ আবার তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি।

গতকাল শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পায় দক্ষিণ কলকাতার ফোরামে। গতকালের এই ছবির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়, পরিচালক অনীক দত্ত, অভিনেতা জীতু কমল ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।
ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হন সন্দীপ রায়। তিনি বলেন, ‘দারুণ হয়েছে ছবিটি। অনেক দৃশ্য সারা জীবন মনে রাখার মতো। সেভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিছু দৃশ্য তো গায়ে কাঁটা দেয়।’

তাই তো দর্শককে বসিয়ে রাখার ক্ষমতা আছে ছবিতে। আর অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও ভাবতে পারিনি সত্যজিৎ রায়ের মতো একজন বিশ্বখ্যাত পরিচালকের ছবি তৈরির ইতিহাস নিয়ে নির্মিত “অপরাজিত” কলকাতার নন্দনে প্রদর্শিত হবে না! তাই এখনো আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, নন্দনে ছবিটির প্রদর্শনী করার। কারণ, মাল্টিপ্লেক্সে ছবির টিকিটের মূল্য বেশি। সাধারণ মানুষের পক্ষে সেই টিকিট কিনে ছবি দেখা কঠিন। তাই যাতে এই ছবিটি সরকারি প্রেক্ষাগৃহ বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নন্দনে দেখাতে পারি, সেই চেষ্টা করছি।’

সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট। আর গতকাল শুক্রবার অনীক দত্তের এই ‘অপরাজিত’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে কলকাতার মাল্টিপ্লেক্স আয়োনক্স ফোরামে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এলগিন রোডের ফোরামে ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।

সেই ‘পথের পাঁচালী’ করতে গিয়ে বহু ঘাত–প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। পড়েছিলেন অর্থিক সংকটে। ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে সাহায্য পাননি কোনো প্রযোজকের । সবাই বলেছিল নাচ–গানহীন এই ছবি চলবে না। ছবিতে নাচগান অন্তর্ভুক্ত করলেই মিলবে আর্থিক সহযোগিতা। সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি সত্যজিৎ রায়। বরং ধাপে ধাপে ছবির শুটিংয়ের কাজ চালিয়ে গেছেন। পরে অবশ্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করেছিলেন ‘পথের পাঁচালী’। সেই ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণের নেপথ্যকাহিনি নিয়ে অনীক দত্ত নির্মাণ করেছেন ‘অপরাজিত’। এই ছবিতে সত্যজিতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জীতু কমল। আর সত্যজিতের স্ত্রী বিজয়া রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সায়নী ঘোষ। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন ফিরদৌসুল হাসান। সংগীত পরিচালনায় রয়েছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।

সত্যজিতের জন্মশতবর্ষে এই ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে মুম্বাইয়ে

২ মে সত্যজিতের জন্মশতবর্ষে এই ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে মুম্বাইয়ে। মুম্বাইয়ের প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক শ্যাম বেনেগালসহ বলিউডের তারকারা। অনীক দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করছি, ছবিটি দর্শকদের মন কাড়বে। কলকাতার চলচ্চিত্রপ্রেমীরা “পথের পাঁচালী” নির্মাণের জানা–অজানা নানা কথা, নানা লড়াই, ঘাত–প্রতিঘাত ও নানা বাধা উতরিয়ে ছবি নির্মাণের ইতিহাস জানতে পারবে।’