অভিনেতা পার্থসারথি মারা গেছেন

পার্থসারথি দেব। এক্স থেকে

চলেই গেলেন অভিনেতা পার্থসারথি দেব। ৪২ দিন ধরে ভেন্টিলেশনে ছিলেন এ অভিনেতা। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শুক্রবার দিবাগত রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর জানা যায় অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপাঞ্জনা মিত্রর ফেসবুক পোস্ট থেকে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে পশ্চিম বাংলার আর্টিস্ট ফোরাম। তাদের পাঠানো সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, ২২ মার্চ রাত ১১টা ৫০ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে বলা হয়, ‘তাঁর প্রয়াণে ফোরাম গভীর শোক জ্ঞাপন করছে। আজ ২৩ মার্চ টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে দুপুর ১২টার সময় অভিনেতার নশ্বর দেহ রাখা থাকবে। অভিনেতার প্রিয়জন, সতীর্থ, গুণগ্রাহীরা সে সময় স্টুডিওতে এসে শেষ শ্রদ্ধা ও মাল্যদান করতে পারেন।’ বিবৃতিতে সই করেছেন আর্টিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। সূত্র হিন্দুস্তান টাইমস

গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পার্থসারথি। তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন পার্থসারথি দেব।

পার্থসারথি দেব। এক্স থেকে

দীর্ঘ ৪০ বছর পশ্চিম বাংলার বিনোদনজগতে জড়িত ছিলনে পার্থসারথি দেব। বিভিন্ন ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ধারাবাহিকসহ ২০০টির বেশি ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেতা পার্থসারথি দেব। নাটকের মঞ্চেও ছিল তাঁর সাবলীল অভিনয়। ‘চুনি-পান্না’, ‘জয়ী’, ‘মিঠাই’-এর মতো ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘লাঠি’ থেকে ‘প্রেম আমার’সহ একাধিক জনপ্রিয় বাংলা সিনেমায়। ছোট পর্দার জন্য ‘সত্যজিতের গপ্পো’ সিরিজেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। গত বছর ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’তেও তাঁকে দেখা গেছে। এ ছাড়া গত বছর দুর্গাপূজায় মুক্তি পাওয়া আলোচিত সিনেমা ‘রক্তবীজ’–এ অভিনয় করেছেন তিনি। যার ফলে দর্শকের মধ্যে বেশ পরিচিত ছিলেন তিনি।

এই অভিনেতার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপাঞ্জনা মিত্রসহ তাঁর সহশিল্পীরা। জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘চলে গেলেন একজন অসাধারণ অভিনেতা পার্থসারথি দেব। থাক আজ আর আমাদের সেসব দিনের কথা বলব না কমরেড।’

অভিনেত্রী রপাঞ্জনা মিত্রও পার্থসারথি দেবকে নিয়ে নিজে ফেসবুকে লম্বা পোস্ট করেন। স্মৃতির পাতা থেকে অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা লেখেন, ‘পার্পল স্টুডিওতে তোমার এক ছবির কাজ চলছিল আর আমাদের ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র শুট চলছিল...তুমি নিজে এসে দেখা করে গেলে..., কয়েকজন তোমার চেনা শিল্পী আছে জেনে তুমি তোমার শট দিয়ে আমাদের সিন দেখতে এসেছিলে, এই তো গেল মাসের কথা...। কয়েকজনের মধ্যে আছি জেনে তুমি আমাদের সাথে এসে বসলে একটু অবসর সময় কাটালে, অল্প আড্ডা এবং সেই প্রাণখোলা হাসি আবার হাসলাম আমরা...চা খেলাম, তারপর আবার যে যার মতো শট দিতে যাওয়া...তার আগে সেই পুরোনো ডাকটা আবার তোমার মুখে শুনলাম, “রূপসী রে দেখা হচ্ছে আবার।”’

রূপাঞ্জনা আরও লেখেন, ‘জানতাম না ওইটাই আমাদের শেষ দেখা...ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু সিনিয়র শিল্পীর মধ্যে তুমি সেই একজন যে আমাদের মতন নতুন শিল্পীদের বুলিং হওয়া থেকে বাঁচাতে সেই সময়...স্নেহ এবং সাহায্যের হাত সব সময় বাড়িয়ে দিতে, তা–ই আমরাও তোমাকে সম্মানের স্থানেই রেখেছি এবং রাখব...তুমিও টাটা বলতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়, তোমাকেও টাটা বলছি আজ...যাত্রা শুভ হোক! বিদায়! পার্থসারথি দেব।’ ব্যক্তিগত জীবনে মেকআপ আর্টিস্ট বিনীতা দেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা। কিছুদিন আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাঁদের এক কন্যাসন্তানও রয়েছে।