‘মিমির বিয়ে কবে হবে? এই প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়’

মিমি চক্রবর্তী। ইনস্টাগ্রাম থেকে

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনন্দবাজার পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। দীর্ঘ এই নিবন্ধে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিজের রাগ, ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

ভারতীয় উপমহাদেশে বরাবরই নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করে দেখা হয়, শুনতে হয় নানা ধরনের নেতিবাচক কথা। তবু হার না মানা অদম্য মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন মিমি। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘সারা জীবন নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে “হবে না”। আমি হাল ছাড়িনি। এখন দেখি খুব দ্রুত মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। খারাপ লাগে। একটা সময় তো ছিল, মিমি চক্রবর্তীকে গরম থেকে বাঁচার জন্য তোশকে জল ঢেলে শুতে হয়েছিল। তোয়ালে ভিজিয়ে রাখতে হতো। ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর লোকে বলেছিল, “গ্রামের মেয়ে। কোনো দিন অভিনয় হবে না।” আজ সেই মুখগুলো দেখি না।’

মিমি চক্রবর্তী। ইনস্টাগ্রাম থেকে

নিজের এই লড়াইয়ের পেছনের গল্প বলেছেন তিনি। মিমি লিখেছেন, ‘আমার যা কিছু লড়াইয়ের পথ তা কেবল “মেয়ে” বলেই মেনে নিতে হয়েছে, এটা আমি মানি না। এই লড়াই, সহ্য সব কিন্তু আমার স্বপ্নের জন্য। অন্য কারও জন্য নয়। তার জন্য যেভাবে যা করার, শক্ত হয়ে করে গিয়েছি।’

পশ্চিমবঙ্গের সিনেমাজগতে নারীদের অবস্থান নিয়েও নিজের মত দিয়েছেন মিমি। তিনি মনে করেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়েও নারী শিল্পী হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে তারা পিছিয়ে। সব নারী এক জোট হয়ে কম পারিশ্রমিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন

মিমি লিখেছেন, ‘এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভিন্ন স্বর থাকা “মেয়েদের” কেউ পছন্দও করে না। কেন আমি চিত্রনাট্য নিয়ে এত প্রশ্ন করব? কেন? শুনতে হয়। বলিউডে কিন্তু এমন হয় না। টালিউডে টাকা কম জানি। তাই বলে নিশ্চয়ই দুই লাখ টাকায় কাজ করব না।’

মিমি চক্রবর্তী। ইনস্টাগ্রাম থেকে

বিয়ে নিয়ে নারী অভিনয়শিল্পীদের বারবার প্রশ্ন করার নিয়েও দিয়েছেন মিমি। তিনি লিখেছেন, ‘আমার সহযোগী যাঁরা সামাজিক মাধ্যম দেখে তাঁরা সব সময় আমাকে জানায়, আমার মন্তব্য বাক্স ভরে আছে একটাই প্রশ্ন, “মিমির বিয়ে কবে হবে?” আজও এই প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়।’

এ নিবন্ধে মিমি প্রশ্ন তুলেছেন নারী অভিনয়শিল্পীদের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও। তাঁর ভাষ্য, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রি চায় আমাকে বা আমাদের যেন ক্যাটরিনা কাইফের মতো দেখতে লাগে। অথচ সেই দেখতে চাওয়ার জন্য যে খরচ, তার সিকিভাগ দিতে গেলেও লোকের যে কী কষ্ট হয়! মুম্বাইয়ে প্রযোজনা সংস্থা ক্যাটরিনার বিশেষ খাবারের খরচ পর্যন্ত জোটায়। আর এখানে?

মিমি চক্রবর্তী। ইনস্টাগ্রাম থেকে

লোকে তো নিজেকে কম পয়সায় ঠিক করে রাখতেই পারবে না। আর তখন শুরু হবে ট্রোলিং। ‘মোটা মেয়ে’, ‘কালো মেয়ে’, ‘বুড়ি মেয়ে’। শাহরুখ খান এখনো নায়ক। আর মাধুরী দীক্ষিত? এই তো অবস্থা!’

লেখার শেষে মিমি বলেছেন নতুন করে ‘মেয়ে’ হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে কোনো আঘাত পেতে চান না। তাঁর জীবন ‘একার’ উল্লেখ করে মিমি বলেছেন, ‘এ আমার অভিযোগ নয়, এ আমার শান্তি।’