মেসির সঙ্গে ছবি, তোপের মুখে শুভশ্রী
‘গোট ট্যুর অব ইন্ডিয়া ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে ভারতের কলকাতায় এসেছিলেন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি। গতকাল শনিবার কলকাতা সফরে এসে তিনি অংশ নেন এক বিশেষ অনুষ্ঠানে। সেখানেই ঘটে যায় ভক্তদের জন্য বাড়তি চমক—দেখা হয় কলকাতার নায়িকা শুভশ্রী গাঙ্গুলির।দুজনের একসঙ্গে ছবিও দেখা যায়। মেসির সঙ্গে তোলা সেই ছবি শুভশ্রী ফেসবুকে পোস্ট করেন। ভক্তরা খুশি হন, নিন্দুকেরা ট্রল করা শুরু করেন। এ নিয়ে আজ রোববার নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন নির্মাতা স্বামী রাজ চক্রবর্তী।
মেসির সঙ্গে স্থিরচিত্র পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের একজন প্রতিনিধি হিসেবে গোট ট্যুরে উপস্থাপনের সুযোগ পেলাম।’ মুহূর্তেই মেসির সঙ্গে তোলা স্থিরচিত্র ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় বিতর্ক। খেলাধুলা বিষয়ে অভিনেত্রীর জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। মন্তব্যের ঘরে শুরু হয় ব্যঙ্গবিদ্রূপ। একজন কটাক্ষ করে লেখেন, ‘আগে বলুন, মেসি ব্যাট করে নাকি বল করে, নাকি উইকেটকিপার?’ আরেকজন ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, এবার বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াবে মেসি, আর চিন্তা নেই।’ সমালোচনার মুখে পড়ে পরে নিজের পোস্টটি সংশোধন করেন শুভশ্রী। ক্যাপশন থেকে ‘Goat’ সরিয়ে কেবল G.O.A.T শব্দটি রাখেন তিনি। এদিকে শুভশ্রীকে ঘিরে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটাক্ষ, তখনই পাশে দাঁড়ালেন রাজ চক্রবর্তী।
তিনি লিখেছেন, ‘আর আমি জানি, তুমি কতটা শক্ত। আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমার স্ত্রী। জীবন আমাদের যেখানেই নিয়ে যাক না কেন, আমি কথা দিচ্ছি—সব সময় সব পরিস্থিতিতে তোমার পাশে আছি।’
রাজ চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘গতকালের যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের অরাজকতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি শুধু একটি অনুষ্ঠানের ব্যর্থতা নয়, এটি ফুটবল এবং ফুটবলপ্রেমী বাঙালির প্রতি সরাসরি অসম্মান। এমন অভিজ্ঞতা আমরা আগেও দেখেছি ইস্ট বেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে। তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—এত বড় একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে আয়োজকদের কাঠামোগত সচেতনতায় কেন এত বড় ফাঁক রয়ে গেল? তাঁরা কি লিওনেল মেসির বিপুল জনপ্রিয়তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না? এই ব্যর্থতার দায় অবশ্যই নির্ধারিত হওয়া দরকার এবং দোষীরা শাস্তি পাক—এটাই কাম্য।’
রাজ চক্রবর্তী জানালেন, এ ঘটনার মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলি। তাঁর ‘অপরাধ’ সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসির সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করা। যেখানে হাজার হাজার মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনেও প্রিয় ফুটবলারের দেখা পাননি, সেখানে ক্ষোভ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ক্ষোভের লক্ষ্য কেন একজন অভিনেত্রী?
রাজ লিখেছেন, ‘“একজন সিনেমার নায়িকার সেখানে থাকার কী দরকার?”—এই প্রশ্ন আসলে সংকীর্ণ মানসিকতারই প্রতিফলন। অভিনেত্রী বলেই কি তিনি ফুটবলের ভক্ত হতে পারেন না? একজন মানুষের বহু পরিচয় থাকে—তিনি মা, স্ত্রী, বন্ধু, কর্মজীবী এবং একই সঙ্গে একজন ভক্তও হতে পারেন। সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তিনি একজন মানুষ। পরিচিত মুখ বলেই শুভশ্রীর শারীরিক গঠন, পারিবারিক পরিচয়, এমনকি সন্তান পর্যন্ত ট্রলের বিষয় হয়ে উঠছে! প্রশ্ন জাগে—তিনি নারী বলেই কি এই আক্রমণ?
যদি তিনি বলিউডের কোনো পরিচিত মুখ হতেন, তবে কি এই ন্যারেটিভ তৈরি হতো? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গতকালের মাঠের অরাজকতার সঙ্গে শুভশ্রীর কোনো যোগ নেই। তিনিও অন্যদের মতোই ফুটবলের মহাতারকাকে দেখতে গিয়েছিলেন এবং তিনিও এই ঘটনায় সমানভাবে আহত।’ প্রতিবাদ আর অপমান এক নয়। ট্রল–সংস্কৃতি কোনো সমাধান নয়—এমনটাও মনে করছেন রাজ চক্রবর্তী। তিনি লিখেছেন, ‘গতকালের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি। আলোচনা-সমালোচনা হোক গঠনমূলক, দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে; ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। কারণ, আজকের আচরণ থেকেই শিক্ষা নেবে আগামী প্রজন্ম।’