তিন রাজনৈতিক নেতাকে ব্যঙ্গ, অনিবার্ণের গান নিয়ে ভারতে তোলপাড়
অভিনয় ও পরিচালনার ক্ষেত্রে দূরত্ব তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। মূল কারণ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা। মাঝে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় অভিনয় থেকে সরে যাবেন, এমন কথাও বলেছিলেন ‘বল্লভপুরের রূপকথা’র নির্মাতা। এরই মাঝে গানের দল ‘হুলিগানইজম’ খুলেছেন তিনি। কয়েক মাস আগে এ ব্যান্ডের ‘মেলার গান’ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এবার কনসার্ট থেকে ভাইরাল অনির্বাণের আরেকটি গান। ‘তুমি মস্তি করবে জানি’ শিরোনামের এ গানে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির তিন ঘোষকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন তিনি।
তিন ঘোষ হলেন তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপির তিন নেতা কুণাল ঘোষ, শতরূপ ঘোষ ও দিলীপ ঘোষ। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় অনির্বাণ গাইছেন, ‘এসব গান-বাজনা ছাড়, চল প্রোমোটারি করি, বড় গাড়ি চড়ি/ ইলেকশানের মেজাজ বুঝে দলটা বদল করি/ এই আমাদের দোষ/ গানবাজনা করতে এসে এসব কথা বললে/ রেগে যাবে কুণাল ঘোষ’।
গত ৩১ আগস্ট কলকাতার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় ব্যান্ড স্টর্ম শিরোনামের কনসার্ট। এতে অনির্বাণের হুলিগানইজম ছাড়াও পারফর্ম করেন অঞ্জন দত্ত, ব্যান্ড ক্যাকটাস, পৃথিবী, ফকিরা ও ফসিলস। ঘণ্টাখানেক ধরে বেশ কিছু গান শোনায় হুলিগানইজম। তার মধ্যে তিন ঘোষকে নিয়ে গাওয়া গানটিই বেশি সাড়া ফেলেছে।
রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করলেও বিষয়টি ভালোভাবেই নিয়েছেন কুণাল ও শতরূপ ঘোষ।
ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘আমি মঞ্চে বা পর্দায় অনির্বাণের অভিনয় দেখেছি। এই গানে তাঁর উপস্থাপনা ভালোই লাগছিল। আর গানে যদি সে সাম্প্রতিক রাজনীতিকে আনেন, আনতেই পারেন। ইস্যু তোলা একটা বিষয় আর ইচ্ছাকৃত কাউকে অপমান করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আমার মনে হয়েছে অর্নিবাণ বা তাঁর সহশিল্পীরা অপমানের উদ্দেশ্যে গানটি করেনি। তাহলে বিষয়টিকে কেন খোলা মনে নেব না? পুরোনো ধাঁচের গানের সঙ্গে সমকালীনতাকে মিশিয়ে অনির্বাণ যে চেষ্টা করেছেন, তাতে আমার নামে টিপ্পনি থাকলেও, এই মজাটা নেওয়ার মানসিকতা কুণাল ঘোষের রয়েছে।’
অন্যদিকে শতরূপ ঘোষ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘আমি গানটা শুনেছি। বেশ ভালোই লেগেছে। আমরা সব সময় চাই শিল্পীরা পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড নিক। তাঁদেরও রাজনৈতিক মতামত থাক। অনির্বাণ গানে আমার নাম নিয়েছে আমি কৃতজ্ঞ। তাতে যদি কোনো তির্যকতা থেকে থাকে, আমরা মনে করি, আমাদের সমালোচনা শিল্পের মাধ্যমে উঠে আসতেই পারে। গতকাল থেকে আমার মনে হচ্ছে বাংলা গানে যেমন বেলা বোস, নীলাঞ্জনা, রঞ্জনা—তারা যেমন রয়েছে; তেমনি এবার আমিও বাংলা গানের একটা ক্যারেক্টার হয়ে গেলাম।’ তবে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ গানটির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ রুদ্রনীল ঘোষ অবশ্য খেপেছেন অনির্বাণের ওপর। সেদিন ব্যান্ড স্টর্ম কনসার্টে শুরুতেই অনির্বাণ বলেন, সনাতন ধর্ম নিয়ে কথা বলেন অনিবার্ণ, যা ভালো লাগেনি বিজেপি নেতা রুদ্রনীলের। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনির্বাণকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তিনি। রুদ্রনীল ঘোষ লিখেছেন, ‘সনাতন ধর্ম পৃথিবীর আদিতম ধর্ম বা জীবনচর্চা। তারপর বাকি ধর্মগুলোর জন্ম। আর আপনি বললেন, সনাতন ভারতে পৌঁছাতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে! অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কে এই ধরনের উক্তি করলে তারা এতক্ষণে আপনাকে কোন স্থানে রাখত, তা নিশ্চয়ই জানেন। যদি সজ্ঞানে এই ধরনের মন্তব্য করে থাকেন, তাহলে ক্ষমা চেয়ে নিন।’
তবে তাঁর গান ও মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হলেও অনিবার্ণ কোনো মন্তব্য করেননি। এর আগে অনির্বাণ আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হুলিগানইজম তৈরির প্রসঙ্গে মজা করে বলেছিলেন, ‘আমার কাছে দুটি অপশন ছিল, এক রাজনৈতিক দল তৈরি করা, দুই গানের দল তৈরি করা। আমি ভাবলাম গানের দল তৈরি করাই ভালো।’
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, সংবাদ প্রতিদিন