ছেলেদের দিকে বেশি তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না...

অভিনেত্রী রুপা গাঙ্গুলিএক্স থেকে

খুবই সাধারণ এক শৈশবে কেটেছে তাঁর। পাড়ার অন্য শিশুদের মতোই এই অভিনেত্রীর বেড়ে ওঠা। সেখানে যেমন ছিল শাসন, তেমনি ছিল আদর, ভালোবাসা। তবে ব্যতিক্রম ছিল, শৈশবেই জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছিলেন মায়ের কাছে, যা তাঁকে জীবন চলতে সহায়তা করেছে। শৈশবের নানা ঘটনা নিয়েই কলকাতার এই অভিনেত্রী রুপা গাঙ্গুলি সম্প্রতি কথা বললেন।

শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে মাকে কেমন দেখেছেন সেই প্রসঙ্গে রুপা গাঙ্গুলি লিখেছেন, ‘মাকে একটা সময় পর্যন্ত খুব পরিশ্রমও করতে হয়েছে। তখন আরাম কাকে বলে জানত না। আমার বাবাও তা-ই ছিল। দুজনের থেকে পরিশ্রম করার গুণটা আমি পেয়েছি।’

অভিনেত্রী রুপা গাঙ্গুলি
ফেসবুক থেকে

এই পরিশ্রমের ফলেই শৈশবে শিখে ফেলেন নানা কাজ। নিজের ও পরিবারের সব কাজই করতে হতো। এভাবে নিজের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ত। মায়ের হাত ধরেই তিনি শিখেছিলেন সেলাইয়ের কাজ। এটা তাঁকে নারী হিসেবে সাহসী করে তুলেছে। এই সাহস তাঁকে পরবর্তী সময়ে শিখিয়েছে জীবন চলতে।

এ প্রসঙ্গে কলকাতার এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘মা ছোট থেকেই খুব সাহসী করে তুলেছিল আমাকে। একটা ঘটনা মনে পড়ে, তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। মা হঠাৎ আমায় একা ছেড়ে দিলেন! বললেন, “রানিকুঠিতে জ্যাঠার বাড়ি চিনে যেতে পারবি না?” ঘাড় নেড়ে বলেছিলাম, পারব। মা প্রথম প্রথম রাস্তা চিনিয়ে দিয়েছিলেন। যেদিন প্রথম একা গেলাম, সেদিন ঠাকুমা রাগে গজগজ করছিলেন। কারণ, আমি অনেক ছোট, কীভাবে যাব এই চিন্তা ছিল। মা পরে হেসে ফেলে বলেছিল, “ওকে তো একাই চলতে হবে। তাই ছোট থেকেই অভ্যাস করতে হবে।”’

অভিনেত্রী রুপা গাঙ্গুলি
ছবি: ফেসবুক থেকে

শুধু পথচলাই নয়, শৈশব থেকেই তিনি শরীর সম্পর্কেও মায়ের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছিলেন। ভবিষ্যতে জীবন চলতে কী লাগবে, সেটা শিখেই তিনি বড় হতে থাকেন। শৈশবের কথা স্মরণ করে তিনি আনন্দবাজারে আরও লিখেছেন, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া একটা মেয়ে। তাকে শুধু একা ছাড়েননি মা। ওই বয়সেই মা নারীশরীরের সমস্ত খুঁটিনাটি জানিয়ে রেখেছিলেন, যাতে একলা পথে বিপদ না আসে। ওই বয়সেই মশারি ভাঁজ করতে পারতাম, বাথরুম, রান্নাঘর পরিষ্কার, বাসন মাজা—সব গুছিয়ে করতে পারি। সপ্তম শ্রেণিতেই মায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেটিকোট, ব্লাউজ মেশিনে সেলাই করতে পারতাম।’

আরও পড়ুন

এই অভিনেত্রীর মা ছিলেন রাগী ও জেদি। যে কারণে যা বলতেন, তা–ই শুনতে হতো। এমনকি তাঁর মা সারাক্ষণ তাঁকে চোখে চোখে রাখতেন। প্রেমে পড়া তো দূরের কথা, কোনো ছেলের দিকে তাকানোতেও কড়াকড়ি ছিল। এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘কোনো ছেলের দিকে বেশিবার তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না! অমনি মা বলে উঠত, “তুই যেন বড় বেশি ওর দিকে দেখতাসস!” এই মাকে খুব মন খারাপে জড়িয়ে ধরা যায় না! আমি মাকে কখনো, কোনো দুর্বল মুহূর্তে জড়িয়ে ধরতে পারিনি। আমার ওই আশ্রয়স্থল বাবা।’