ছোটবেলায় হ্যাংলা-পাতলা, ‘বেঢপ’ হয়েই ভাগ্য খুলেছে এই অভিনেতার
তিনি আগে যে হ্যাংলা-পাতলা ছিলেন, সেটা এখন তাঁকে দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। তবে এই অভিনেতা মনে করেন এই ‘বেঢপ’ সাইজ বরং তাঁর জন্য শাপে-বর হয়েছে। এই অভিনেতা আর কেউ নন, তিনি খরাজ মুখার্জি। আজ পশ্চিমবঙ্গের এই কৌতূক অভিনেতার জন্মদিন। এ উপলক্ষে আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য।
খরাজ মুখার্জিকে পর্দায় কমেডিয়ান হিসেবেই চেনেন দর্শকেরা। প্রায় চার দশক ধরে অভিনয় করছেন। অনেকেই জানেন না, অভিনয়ে আসার আগে তিনি সরকারি চাকরি করতেন। ছিলেন ভারতীয় রেলওয়েতে। বাবা চাইতেন, ছেলে সরকারি চাকরি করুক। কিন্তু একটা পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয়ে মন দেন তিনি।
‘অভিনয় তো অনিশ্চিত পেশা। তাই বাবা একটু ভয় পেতেন। রেলে চাকরি করতে করতেই টুকটাক অভিনয় করতাম। ফলে অফিসেরও ক্ষতি হতো। নিজের মধ্যেও একটা অনুশোচনা কাজ করত যে সরকারি একটা আসন দখল করে বসে থাকার কোনো অধিকার আমার নেই। তাই দুই নৌকায় পা রেখে আর এগোতে চাইনি’, বলেন তিনি।
তবে তিনি জানান, চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী প্রতিভা মুখোপাধ্যায়। খরাজের ভাষ্যে, ‘আমি এক দিন প্রতিভাকে মনের কথা খুলে বললাম। ও সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা বুঝতে পেরে সোজাসুজি আমাকে বলল, ‘‘তোমার মন যেটা চাইছে, সেটাই করো।’’ ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয়ে চলে এলাম।’
খরাজ অন্যদের কণ্ঠ ভালো নকল করতে পারেন। ডাবিং শিল্পী হিসেবেও প্রচুর কাজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কলেজে অনুরাগ হীরা নামে আমার এক বন্ধু ছিল। আমাকে একটা সাদা কাগজে সই করতে বলত। তারপর নিজে সেই পাতায় আরও ৫০ থেকে ৬০টা সই করত। তারপর আমি কোনটা করেছি, খুঁজে বের করতে বলত। স্বাভাবিকভাবেই আমি ভুল বলতাম। তারপর ও আমার সইটা দেখিয়ে দিত। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, তাহলে একজন অন্যের মতোও কাজ করতে পারে। ওকে জিজ্ঞাসা করতেই খুব সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিল। বলেছিল, ‘‘আরে, আমি তো আসলে ছবি আঁকি। তোদের সইগুলো আমার কাছে ছবির মতো।’’ আমার ক্ষেত্রেও নকল করাটা অনেকটা ওই রকম। প্রত্যেকেই ছোটবেলায় স্কুলে শিক্ষকদের নকল করার চেষ্টা করে। সব মানুষের মধ্যেই এই স্বভাব রয়েছে। সেটা কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে কেউ কেউ হয়তো অভিনেতা হয়ে যান।’
তবে এই কণ্ঠ নকল করা নিয়েও আছে নানা অভিজ্ঞতা। একটা শোনা যাক খরাজের ভাষ্যেই, ‘“শিকার” ছবির সেটে পরিচালক কোয়েলকে বলেছিলেন আমি রঞ্জিতদাকে (কোয়েলের বাবা অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক) খুব ভালো নকল করতে পারি। কোয়েল দেখে হেসে খুন। পরে ও দাদাকে সেটা জানিয়েছিল। এক অনুষ্ঠানে পরে রঞ্জিতদার সঙ্গে আমার দেখা। প্রচণ্ড ভিড়। তার মধ্যেই তিনি বললেন, ‘‘খরাজ ভাই, আপনার সঙ্গে আমার একটু দরকার আছে। শুনেছি, আপনি নাকি আমার গলা খুব ভালো নকল করেন! একটু করে দেখান না।’’ সামনে তখন বৌদি দাঁড়িয়ে। সে যাত্রায় আমি খুব লজ্জায় পড়েছিলাম।’
খরাজ মুখার্জি ছোটবেলায় হ্যাংলা-পাতলা ছিলেন। তবে এক দুর্ঘটনা বদলে দেয় সব। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে রানাঘাট থেকে একটা শো করে ফেরার পথে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হই। (হাসতে হাসতে) ডান পা ঘুরে রীতিমতো ল্যাজ হয়ে গিয়েছিল! অপারেশনের পর দীর্ঘদিন বিছানায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল। পরে ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন যে খুব বেশি শরীরচর্চা করতে পারব না। এই হচ্ছে আমার চেহারা ভারী হওয়ার কারণ। তবে এর জন্য কিন্তু পরোক্ষে আমার প্রচুর লাভও হয়েছে।’
‘ভারী’ চেহারা হয়ে কী লাভ হয়েছে, সেটাও জানান খরাজ। তিনি বলেন, ‘যখন রোগা ছিলাম, অনেক মানুষের দরজায় ঘুরেও কাজ পাইনি। বুঝতে পারি, “বেঢপ” একটা চেহারার মধ্যে থাকতে হবে। তাহলে মানুষ আমাকে হয়তো নজর করবেন। হয় রনির (রজতাভ দত্ত) মতো চওড়া চোয়াল থাকতে হবে বা অম্বরীশের (অম্বরীশ ভট্টাচার্য) মতো গোলগাপ্পা হতে হবে। কিংবা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একটা বড় টাক থাকতে হবে। তাই এখন এই চেহারা আমার কাছে শাপে বর!’