অপমান প্রচুর সয়েছি, বললেন ‘অপরাজিত’ সিনেমার সত্যজিৎ

বর্তমানে তিনি প্রশংসা কুড়াচ্ছেন ‘অপরাজিত’ সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ছোট থেকেই শুরু করতে হয়। সইতে হয় অপমান, হতে হয় অপদস্থ, আরও কত কি! এ যেন মিডিয়া অঙ্গনে পথ চলতে আসা নবীন অভিনয়শিল্পীদের কাছে চিরচেনা রূপ। এর ব্যতিক্রম ছিল না জীতু কমলের ভাগ্যে। সংগ্রাম করেই তিনি পৌঁছেছেন আজকের অবস্থানে। বর্তমানে তিনি প্রশংসা কুড়াচ্ছেন ‘অপরাজিত’ সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে অভিনয় করে। ভারতের গণমাধ্যমে নিজেই জানালেন, কাজের জন্য একসময় প্রচুর অপমান সহ্য করতে হয়েছে।

অস্কারজয়ী চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায় বাঙালির অহংকার। বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে যিনি বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রকে পৌঁছে দিয়েছেন। এই পরিচালকের শুরু ছিল ‘পথের পাঁচালী’। এই নির্মাতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সম্মান জানাতে বেছে নেওয়া হয়েছে ১৯৫৫ সালে নির্মিত ‘পথের পাঁচালী’ ছবি নির্মাণের নেপথ্যকাহিনি। এর ওপর ভিত্তি করে কলকাতার চিত্রপরিচালক অনীক দত্ত নির্মাণ করেছেন ‘অপরাজিত’ নামের একটি সিনেমা। গত শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পেয়েছে কলকাতায়। সিনেমায় সত্যজিতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেতা জীতু কমল। ভারতীয় গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন তাঁর সংগ্রাম।

সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জীতু
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

জীতু বলেন, ‘অপমান প্রচুর সয়েছি। কোনো প্রডিউসারের ঘরের বাইরে গিয়ে বসে আছি, তিনি ডেকেছেন সকাল আটটায়, আমি কাজের নেশায় সাড়ে সাতটায় পৌঁছেছি। কখন তিনি আমাকে ডেকে নেন, সেই সময়টা যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য একটা পর্যন্ত বসে থেকেছি। এই ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু সহজে আমাকে জায়গা দেয়নি, কাউকে দিয়েছে বলে মনে হয় না। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা ভাগ্যবান। একটা–দেড়টা পর্যন্ত বসে থেকেছি। সিরিয়ালের শুটিং চলছে। আমি বসেই থাকি তিনি কিন্তু আমাকে ডাকেননি। লাল বড় গাড়ি করে চলে গেলেন। আবার পরের দিন ফোন করলেন, আবার একই অবস্থা।’

মা–বাবার বিশ্বাস ছিল, ছেলে ইন্ডাস্ট্রিতে গেছে কিছু একটা করবে। জেদি ও রাগী এই ছেলেটা যতই বাধা পেয়েছেন, ততই এগিয়ে নিয়েছেন স্বপ্ন। তিনি অভিমান করে বলেন, ‘সব টেকনিশিয়ান, জুনিয়র আর্টিস্ট—সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর কিছু আর্টিস্টকে দাঁড়াতে বলে, হাতে করে খাবার দেওয়া হয়। তাঁদের একধরনের খাবার, সিনিয়র-জুনিয়র টেকনিশিয়ানদের একধরনের খাবার, এটা একধরনের ব্যভিচার। এই স্ট্রাগলের মধ্য দিয়েও গিয়েছি। তবে এখন এই অবস্থা অনেকটাই কেটে গেছে।’

জেদি ও রাগী এই ছেলেটা যতই বাধা পেয়েছেন, ততই এগিয়ে নিয়েছেন স্বপ্ন
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

আরেকটি কষ্টের কথা ভাগাভাগি করে জীতু বলেন, ‘অনেক রাত। শুটিং শেষ করে ঝিমাতে ঝিমাতে গাড়ির পেছনে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ম্যানেজার বললেন, এসে গেছে এসে গেছে, ঘুম ভেঙে হঠাৎ করে উঠে কিছু বুঝতে পারিনি। আমাকে অন্য আরেক জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। একটি ট্যাক্সিও ছিল না। রাতে খুব কষ্টে ট্যাক্সি ভাড়া করে বাড়ি গেলাম। বাসায় পৌঁছে বাবার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দিলে সেই বাবা–মা বলবেই, এখানে এস্টাবলিশ হওয়া তোর জন্য নয়। দীর্ঘদিন এগুলো বলেছেনও।’

এভাবেই চলতে থাকে তাঁর দিন। ‘অসম্ভব’ বলে একটি সিরিয়ালের শুটিংয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ছবি দিতে। তখন একজন পরিচালক তাঁকে দেখে বলেন উচ্চতা কত? জীতু জানান, ছয় ফিট। তাঁকে বলা হয় ডায়ালগ বলতে পারবে কি না, তিনি বললেন ‘পারব’। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। জীতু সেই নাটকে অভিনয়ও করেন। সেই নাটকটি দিয়ে কিছুটা পরিচিতি পেলেও এই অভিনেতা বলেন, ‘“অসম্ভব” সিরিয়ালে প্রথম আমি ক্লিক করলাম, এটা আসলে ভুল কথা, মিথ্যা কথা। আমি প্রচণ্ড খারাপ অভিনয় করেছিলাম। যে কারণে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এটা আমার কাছে খুবই আনন্দের। কিন্তু ততটাই দুঃখের ছিল আমাকে বসিয়ে রেখেছিল।’ এই অভিনেতা প্রশ্ন করে বলেন, ‘ভাই বসিয়ে রেখেছ কেন? তোমার লাগলে নাও, না লাগলে নিয়ো না। তুমি তাকে সুযোগ দাও, না দিলে দিয়ো না?’

শুটিংয়ের ফাঁকে জীতু ও সায়নী ঘোষ
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

এখন লজিক নিয়ে নির্মাতাদের সঙ্গে প্রায়ই মতপার্থক্য হয় জীতুর। অনেক সময় এমন হয়, তিনি যে ঠিক বলছেন সেটাও নয়, আবার পরিচালক যে ঠিক বলছেন সেটাও নয়। তখন যুক্তি পরিষ্কার করার জন্য মতবিরোধ করেন। এই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা করতে গিয়ে আমাদের এখানে বলা হয় বেশি বোঝে। মাথা নত করে কাজ করে চলে গেলাম, ওটাকে তো আর্টিস্ট বলা হবে না, দালালি করা হবে। তাহলে আজ যে এই বড় প্ল্যাটফর্মে বসার সুযোগ পেয়েছি, এটা এত সহজে আসবে না। কাউকে ছোট করার জন্য আমি কোনো কথা বলিনি।’ দ্য বঞ্জ আনটোল্ড প্ল্যাটফর্মে সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলেন জীতু। সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়া রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।