করোনার শুরুতে অভিনয় ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন অপু

চলচ্চিত্র নিয়েই রাশেদ মামুন অপুর ব্যস্ততা
ছবি : সংগৃহীত

গত বছর লকডাউন শুরুর সময়ের গল্প। হতাশায় তখন দিশেহার অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু। চেয়েছিলেন অভিনয় ছেড়ে দেবেন। কারণ, ৭ বছর ধরে তিনি অভিনয় নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। একই ধাঁচের কাজ তাঁকে ক্লান্ত করে তুলছিল। পরে করোনার মধ্যে ‘অক্সিজেন’ নামের এক স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয় করেন। সেটিই তাঁর অভিনয়ের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

এক যুগের বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ার রাশেদ মামুন অপুর। প্রথম থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল একটু সিরিয়াস বা নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করা। কিন্তু তিনি জনপ্রিয়তা পান কমেডি অভিনয়ের জন্য। প্রতিটি নাটকেই তাঁকে কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্মাতারা ডাকতেন। সেসব চরিত্রে অভিনয় করলেও ভেতরে-ভেতরে তিনি সিরিয়াস নেতিবাচক চরিত্রগুলোর প্রতি আগ্রহী ছিলেন। এই অভিনেতা জানান, ৭ বছর ধরে তিনি যেসব চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেগুলো বেশির ভাগই তাঁকে ততটা টানেনি। করোনার আগে টানা চার মাস তিনি মাসে ২৫ দিন করে শুটিং করেছেন। কিন্তু একটি চরিত্রও টানেনি তাঁকে। শুধু টাকার জন্যই কাজ করে গেছেন।

এক সময় শুধু টাকার জন্যই কাজ করে গেছেন।
ছবি: সংগৃহীত

এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি, চাইলে আইন নিয়েই থাকতে পারতাম। পরে আমি একটি এনজিওতে চাকরি করেছি। কিন্তু অভিনয়ের জন্য বিদেশি সংস্থার চাকরি ছেড়েছি। একটা সময়ে এসে অভিনয় আমাকে হতাশ করে ফেলেছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম, যদি টাকার জন্যই অভিনয় করি তাহলে চাকরি করলে সমস্যা কী? লকডাউনে টানা ৭০টি সিনেমা দেখার পরে রায়হান রাফি আমাকে একটি কাজের জন্য ডাকেন। সেখানকার নেতিবাচক চরিত্রটি আমার পছন্দ হয়। ছবিটি মুক্তির পর দেখা গেল দর্শকও সেটি পছন্দ করেছেন। পরে ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমায় অভিনয় করার পর আমার সবকিছু বদলে যায়।’  

অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু
ছবি : সংগৃহীত

‘দহন’ সিনেমায় একজন ডোমের চরিত্রে অভিনয় করেন অপু। এ ছবির একটি দৃশ্যে অপুকে দেখে ভালো লেগে যায় পরিচালক রায়হান রাফির। তাঁকে আবারও সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। এর মাঝেই ‘নবাব এলএলবি’ মুক্তি পায়। পরে ‘জানোয়ার’ ওয়েব সিরিজ দিয়ে আলোচনায় আসেন অপু। এখানে তিনি প্রধান খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এই সিনেমা তাকে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পথে এক ধাপ এগিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারে দীর্ঘদিন ধরে যে চরিত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, সেগুলোই আমার কাছে ধরা দিতে লাগল। আমি রাত–দিন একাকার করে পরিশ্রম করেছি। ভেবেছি আমাকে খল চরিত্রে টিকে থাকতে হবে। কারণ, তখন হাতে যেসব নাটকের কাজ ছিল, সেগুলোতে অভিনয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। নিজের কাছে নিজের পরীক্ষার আগেই আমি ফেল করছিলাম। একরকম জোর করেই এ কাজগুলো করতাম। তবে ভেতরে-ভেতরে নিজের সঙ্গেই সিরিয়াস অভিনয়টা চালিয়ে যেতাম। সেটাই এখন কাজে দিচ্ছে। অভিনয় নিয়ে আমার নিজের সঙ্গে প্রচুর জেদ ছিল। এখন নিজের মতো করে কাজ করে যেতে চাই।’

শুধু টাকার জন্যই কাজ করে গেছেন
ছবি: সংগৃহীত

এই অভিনেতার হাতে রয়েছে ৬টি নতুন সিনেমা। মুক্তির অপেক্ষায় ১০টির মতো সিনেমা। এর মধ্যে ১৪টি সিনেমায় তাঁকে খলচরিত্রে দেখা যাবে। ২৪ মে থেকে একটি নাটকের কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। এখানেও তাঁকে দেখা যাবে মাফিয়া এক নেতার চরিত্রে। অপু জানান, আগে সবাই ফোন দিয়ে বলতেন, মজার একটি চরিত্র আছে। এখন সব নির্মাতা তাঁকে বলেন, ভাই ভালো একটি সিরিয়াস চরিত্র আছে। খলচরিত্রে দর্শক তাঁকে পছন্দ করেছেন, এটা নিয়ে তিনি সতর্ক থাকেন। তাঁর মতে, একটি গল্পের সঙ্গে অন্যটির যেন কোনো মিল না থাকে, সে জন্য প্রতিটি নতুন গল্পের শুটিংয়ের আগে আলাদা প্রস্তুতি থাকে। তিনি বলেন, ‘নাটকে আমাকে গত ৭ বছর ধরে কেউ কাজে লাগায়নি। দীর্ঘদিন পর একই ধাঁচের অভিনয় থেকে বের হয়েছি। এখন সুযোগগুলো পাচ্ছি, সেটাকে নিজের মতো করে কাজে লাগাচ্ছি। অভিনয়ের যে ক্ষুধাটা ছিল, সেটা কিছুটা হলেও পূরণ হচ্ছে। বাইরে বের হলে দর্শক চরিত্রগুলোর জন্য আলাদা করে চিনছেন, এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। নিজেকে কোনো চরিত্রে আটকে না রেখে সমানতালে অভিনয় করে যেতে চাই।’

ঈদ উপলক্ষে অপুর অভিনীত একাধিক নাটক ও একটি ওয়েব ফিল্ম মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। ‘কসাই’-এ অভিনয়ে জন্য বেশ প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। আগামী কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে অপু জানান, শিগগিরই ৫টি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হবেন তিনি। এখন সিনেমা ও ওয়েবের কাজেই তাঁর ব্যস্ততা বেশি।

আইটেম গানের শুটিংয়ে পূর্ণিমা, তারিক আনাম খান ও রাশেদ মামুন অপু
ছবি : হাসান রাজা