টেলিভিশন প্রযোজকদের নির্বাচন ঘিরে কী হচ্ছে

মনোয়ার হোসেন পাঠান ও সাজু মুনতাসির প্যানেলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
ছবি: সংগৃহীত

টেলিভিশন প্রযোজকদের নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। জমে উঠছে এই নির্বাচন। এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, এমনটাই ধারণা করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে দুটি প্যানেল শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তবে শোনা যাচ্ছে, কেউ কেউ ইচ্ছে করে বিতর্ক তৈরির জন্য পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নিতে চাইছেন। ছোট পর্দার নির্বাচন ঘিরে কী হচ্ছে, সেটাই জানার চেষ্টা করেছি।

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গতবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেছিলেন সাজু মুনতাসির। এই প্রযোজকের কাছে প্রশ্ন, এবারের নির্বাচন ঘিরে কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে কি না? সঙ্গে সঙ্গেই সাজু বলেন, ‘আমাদের বিপরীত প্যানেলের কিছু মানুষ এটাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চায়। যে কারণে কিছু নোংরামি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়ে মালাবদল হবে। সবাই আমরা একসঙ্গে কাজ করব। যে কারণে আমাদের স্লোগান আমি না “আমরা”। তাদের অনুরোধ করব, নির্বাচনে কখনো হিংসাপরায়ণ কিছু হতে পারে না। এটা সবাইকে নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া। এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যম।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘করোনার কারণে কিছু কাজ করতে পারিনি। এবার আমাদের নতুন ইশতেহারের সঙ্গে যোগ হবে আগের কাজ। আমরা সংগঠনের ঐতিহ্যকে আবার ফিরিয়ে আনব। এই জয় আমাদের হবে।’

রোকেয়া প্রাচী ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল প্যানেলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
ছবি: সংগৃহীত

টেলিভিশনের তিনজন প্রযোজকের সূত্রে জানা যায়, গত নির্বাচন সাজ্জাদ হোসেন দোদুল সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। পরে একটি চ্যানেলের কথায় পদ থেকে সরে যান দোদুল। সেই নির্বাচনে তিনি সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসিরের হয়ে কাজ করেছিলেন। পরে প্রযোজকদের নাটক নির্মাণ ও নাটকের চাঙ্ক ও হঠাৎ করেই কিছু প্রযোজকদের কাজ চ্যানেল থেকে বন্ধ করিয়ে দেওয়াকে ঘিরে তাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। এগুলোকে অন্যায় মনে করে ২০২২-২৪ নির্বাচনে দোদুল নিজেই আলাদা একটি প্যানেল দাঁড় করিয়েছেন।

এবার সেই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন সাজ্জাদ হোসেন দোদুল। তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে একটি শর্তে আমি সাজু মুনতাসিরকে সহযোগিতা করেছিলাম। এটা ছিল সব প্রডিউসারের কাজ পাওয়া নিশ্চিত করা। এটাকে আমি সাধুবাদ জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের পর সেই শর্ত প্রযোজকদের কোনো স্বার্থে আসেননি। পরে অনেক প্রযোজক কাজ না পাওয়ায় বেকার হয়েছে। এবার প্রযোজকদের স্বার্থে আমি নির্বাচন করছি। নির্বাচনে অবশ্যই আমার জয় হবে।’

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) এর সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন রোকেয়া প্রাচী
ছবি: সংগৃহীত

গতবার তিনি সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এ সময় দোদুল আরও বলেন, ‘গতবার নির্বাচনের পর দেখলাম সংগঠনের কোনো কাজ হচ্ছে না। এর আগেও মনোয়ার পাঠান যখন ১২–১৩ বছরের মতো দায়িত্বে ছিলেন সেই সময় তেমন কোনো কাজ হয়নি। একটি অফিস হয়নি। পরে ইরেশ যাকের আসার পরে সংগঠনের নিবন্ধন হলো, অফিস হলো। কিন্তু প্রযোজকদের স্বার্থ সংরক্ষণের দৃশ্যমান কোনো কাজ ছিল না। এবার তারাই পদপ্রার্থী হয়ে কতটা কাজ করবেন? কিন্তু সংগঠনের অনেক কাজ করে এগিয়ে নেওয়ার আছে। আমি কাজপাগল মানুষ, এ কারণেই নির্বাচন করছি। কারও বিপক্ষে দাঁড়ানো মানেই নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া না। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করব।’

মনোয়ার হোসেন পাঠান ও সাজু মুনতাসির প্যানেলের সভাপতি মনোয়ার পাঠান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। একটু একটু করে আজ সংগঠন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সেটাই আমরা করেছি, নিজে থেকে করেছি। যে কারণে এখন আমরা সংগঠিত। একটা সময় আমাদের কাজের পরিধি ছোট ছিল। এখন সেটা বাড়তে শুরু করেছে। এটা আমরা প্রফেশনাল প্রডিউসাররা ভালো বুঝি, আমাদের সবার জন্য কী করতে হবে। তবে এটাকে কেউ কেউ ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চাইছেন। এই একই কারণেই একসময় সাংগঠনিক দায়িত্ব ছেড়ে ছিলাম। এবারও নির্বাচন করব না ভেবেছিলাম। সহকর্মীরা যখন বলল, তাদের স্বার্থের জন্য আমাকে প্রয়োজন তখন মনে হলো আমার জায়গা থেকে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে যা করার সবই করব।’

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) নির্বাচনে সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন সাজু মুনতাসির
ছবি: সংগৃহীত

এর আগে ইশতেহার সময় রোকেয়া প্রাচী ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল প্যানেলের সভাপতি রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আমরা ইশতেহারে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েছি, তা টেলিপ্যাব প্রতিষ্ঠা হওয়ার এত বছরেও কেউ দেয়নি। আমরা প্রযোজকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে চাই। আমরা নির্বাচিত হলে যেসব ইশতেহার দিয়েছি, তা সব কটিই পূরণ করব। এগুলো পারব বলেই দিয়েছি। যে ইশতেহার দেওয়া হয়েছে, সেটা দুই বছরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সম্মানিত ভোটাররা আমাদের সুযোগ দিলে বাস্তবায়ন করব। যতটুকু আমরা পারব, ততটুকুই ইশতেহারে দিয়েছি।’

১৯ মার্চ শিল্পকলা একাডেমিতে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেলের একটি রয়েছে মনোয়ার পাঠান ও সাজু মুনতাসিরদের প্যানেল। অন্যটিতে রয়েছেন রোকেয়া প্রাচী ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুলের প্যানেল। দুটি প্যানেল থেকে ২৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার আছেন ২৩৯ জন।

উল্লেখ্য, এর আগে নির্ধারিত সময়ের পরে মনোনয়ন জমা নেওয়াকে কেন্দ্র করে অভিযোগ করেন একটি প্যানেল। পরে প্রার্থীতা বাতিল ঘিরে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এই ঘটনার জের আরও বাড়তে থাকলে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মাসুম আজিজ, নরেশ ভূইয়া ও বৃন্দাবন দাস। বাতিল হয় গত বছর ১১ ডিসেম্বরের নির্বাচন। পুনরায় আবার আপিল করলে নির্বাচনের সুযোগ পায় সংগঠনটি।