নাসিরের দৌড়

নাসির উদ্দিন খান

তাঁকে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। আর সাক্ষাৎকারে জমিয়ে কথা বলা? অত সময় কই? আজ ঢাকা তো, কাল চট্টগ্রাম। এখন যেমন বরিশালে আছেন। শুটিংয়ে শুটিংয়েই কাটছে নাসির উদ্দিন খানের সময়।
নাসির উদ্দিন খানকে চিনেছেন? নামে না চিনলেও অভিনয় দেখেছেন নিশ্চয়। ওই যে তাঁর সংলাপটা ‘রুপালিরে আবার কল টল দিয়েন না, নম্বরটা ডিলিট কইরা দিয়েন।’ ওয়েব সিরিজ তাকদীরের সেই ডোমের অভিনয়। সামান্য চরিত্রে অসামান্য অভিনয়। আর শুধু এই অভিনয়গুণেই ওটিটির যুগে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন তিনি।

নাসির উদ্দিন খান
সহকর্মীদের তরতর করে প্রমোশন হয়ে যেত, ইনক্রিমেন্ট হতো; কিন্তু নাসির উদ্দিন ঠিক ঠিক সুবিধা করতে পারছিলেন না। এ জন্য তিনি নিজেই দায়ী। ‘আমিই তো ঠিকঠাক মন দিতে পারতাম না। দেখা যেত, দুই দিনের কাজ সাত দিনে করতাম। আসলে চাকরির জায়গাটায় আমি ফোকাসড ছিলাম না।’

পিতৃতুল্য বড় ভাই আমানউল্লাহ খান চেয়েছিলেন নাসির চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হোক। সে তাগিদে সিএ ফার্মে ভর্তি হয়েছিলেন। তিন বছরের কোর্স কমপ্লিট করেও পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তারপর চাকরি, ২০০১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত।

নাসির উদ্দিন খান

১৫ বছরের চাকরি জীবনে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঘুরেছেন, কিন্তু পোষাচ্ছিল না। সহকর্মীদের তরতর করে প্রমোশন হয়ে যেত, ইনক্রিমেন্ট হতো; কিন্তু নাসির উদ্দিন ঠিক ঠিক সুবিধা করতে পারছিলেন না। এ জন্য তিনি নিজেই দায়ী। ‘আমিই তো ঠিকঠাক মন দিতে পারতাম না। দেখা যেত, দুই দিনের কাজ সাত দিনে করতাম। আসলে চাকরির জায়গাটায় আমি ফোকাসড ছিলাম না।’ মন তাহলে কোথায় থাকত? মন থাকত তির্যক নাট্যগোষ্ঠীতে। থিয়েটার ইনস্টিটিউটে। মহড়াকক্ষে। দেখা যেত, অফিসের কাজ বাদ দিয়ে গল্প লিখছেন, সিগারেট খাওয়ার বাহানায় ছাদে গিয়ে রিহার্সাল করছেন। চাকরি, অভিনয়—এই দোদুল্যমানতা আর ভালো লাগছিল না।

তির্যক নাট্যগোষ্ঠীর স্বপ্নবৎ নাটকের দৃশ্যে
দেখা যেত, অফিসের কাজ বাদ দিয়ে গল্প লিখছেন, সিগারেট খাওয়ার বাহানায় ছাদে গিয়ে রিহার্সাল করছেন। চাকরি, অভিনয়—এই দোদুল্যমানতা আর ভালো লাগছিল না।
'মহানগর' ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে

একদিন তাই চাকরিটাই ছেড়ে দিলেন। পরিচিতরা পরামর্শ দিলেন, ঢাকা চলে যা। ঢাকার বন্ধুরাও ভরসা দেয়, চলে আয়। নির্মাতা হাবিব শাকিল তো সাহস দিলেন, নাসির ভাই নিশ্চিন্তে চলে আসেন ঢাকায়। দুই বছর থাকা–খাওয়া আমার।

নাসির উদ্দিন খান

এমন তো বলেই মানুষ, চলে আসেন কিন্তু...। একসময় না পারতে ঢাকায় চলে এলেন, উঠলেন বাড্ডায়। তাঁর ভাষায়, ‘দুটো খাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে ঢাকা এসেছি। পুঁজি বলতে দু–একটি কাজ। আর চেহারাও তথাকথিত পর্দার নায়কদের মতো না। চট্টগ্রাম থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে ওয়াহিদ তারিকের আলগা নোঙর সিনেমায় কাজ করেছি, দুটি টিভি নাটক, পাঁচ–ছয়টা শর্টফিল্ম। এই সম্বল নিয়েই ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এলাম।’ টুকটাক কাজ করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি জড়িয়ে যান।

২০১৭ সালে মাহুত নাটকটির কথা হয়তো অনেকের মনে আছে। অমিতাভ রেজা ও মেজবাউর রহমান সুমনের তত্ত্বাবধানে সাতজন তরুণ নির্মাতা তৈরি করেন সাতটি নাটক, এক মোড়কে যার নাম অস্থির সময় স্বস্তির গল্প।

নাসির উদ্দিন খান

নারী–পুরুষের প্রেম, বেকার যুবকের সংগ্রামের ফর্মুলা থেকে বেরিয়ে সেবার সুকর্ণ সাহেদ ধীমানের মাহুত নতুন করে ভাবায়। ভাবায় নাসিরের অভিনয়। ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। এখানে শুটিং তো, কাল অন্য শহরে। তাঁকে নিয়ে স্টোরি হবে, ছবি লাগবে। এই আহ্বানে ‘অসহায়’ নাসির বার্তা পাঠান, আমি তো একটু দৌড়ের ওপর আছি...। নাসিরদের দৌড় সফল হোক, এই কামনা আমাদেরও।