নীরবেই চলে গেলেন আজমেরি জামান

‘ক্ল্যাভিগো’ নাটকের দৃশ্যে নাজমা আনোয়ার, আবুল হায়াত ও আজমেরি জামান
‘ক্ল্যাভিগো’ নাটকের দৃশ্যে নাজমা আনোয়ার, আবুল হায়াত ও আজমেরি জামান

দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন তিনি। তাঁকে দেখা যায়নি টেলিভিশনে, সিনেমায়, দেখা যায়নি কোনো ছোট–বড় উৎসব আয়োজনে। নিভৃতে নিজের মতো ছিলেন। বুধবার দুপুরে একসময়ের মঞ্চ ও রুপালি পর্দার নামী অভিনয়শিল্পী আজমেরি জামান রেশমা নীরবেই বিদায় নিলেন। বুধবার বেলা আড়াইটায় গ্রিন লাইফ হাসপাতালে থেমে যায় তাঁর জীবনযাত্রা। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২। 

১৯৬০ সালে রেশমা বেতার ও ভয়েস আমেরিকায় ভয়েস আর্টিস্ট, উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সত্তরের দশকে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি ঘটে টিভিতে মুনীর চৌধুরী অনূদিত উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। নাটকটির নির্দেশক ছিলেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। অভিনয় করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘শেষের কবিতা’, ‘বৃত্ত থেকে বৃত্তে’, ‘সাঁকো পেরিয়ে’, ‘দিন বদলের পালা’সহ অনেক আলোচিত নাটকে।
১৯৬০ সালে সিনেমায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘জি না ভি মুশকিল’ ছবির মধ্য দিয়ে। তাঁর সঙ্গে সে সময় তারকা শিল্পী নাদিম, শাবানা অংশ নেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বাংলা ও উর্দু ছবির মধ্যে রয়েছে ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘নয়ন তারা’, ‘ইন্ধন’, ‘চাঁদ আর চাঁদনি’, ‘সূর্য ওঠার আগে’, ‘শেষ উত্তর’ প্রভৃতি।
তিনি দীর্ঘদিন মঞ্চে শিল্পনির্দেশকের কাজ করেছেন। ষাটের দশকে যুক্ত ছিলেন মঞ্চ সংগঠন ড্রামা সার্কেলের সঙ্গে। তাঁর জন্মস্থান ঢাকার মুন্সিগঞ্জ। তাঁর স্বামী জামান আলী খান ছিলেন ১৯৬১ সালে পিটিভির প্রথম প্রযোজক।

আজমেরি জামান রেশমা। ছবি: সংগৃহীত
আজমেরি জামান রেশমা। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন নিভৃতে থাকা এই শিল্পী যেন মৃত্যুর পর আবারও ফিরে এলেন স্মৃতিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করছেন। দিচ্ছেন সেই সময়ের পুরোনো নাটকের দৃশ্যের ছবি। অভিনেতা আবুল হায়াত তাঁর সঙ্গে একটি নাটকের স্থিরচিত্র দিয়ে স্মরণ করেছেন। যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে আবুল হায়াত বলেন, ‘আসলে আমাদের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা কম ছিল, কারণ আমাদের চেয়ে সিনিয়র শিল্পী ছিলেন। প্রথমদিকে আমরা যখন টেলিভিশনে কাজ শুরু করিনি, তখন হাসান ইমাম ভাই, গোলাম মোস্তফা ভাইয়ের সঙ্গে তাঁকে অভিনয় করতে দেখেছি। “মুখরা রমণী বশীকরণ” তাঁর বিখ্যাত নাটক। আরেকটি নাটকের কথা মনে পড়ে, “গোর খোদক”। স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘মাঝে আমি লিবিয়ায় ছিলাম।

আজমেরি জামান রেশমা। ছবি: সংগৃহীত
আজমেরি জামান রেশমা। ছবি: সংগৃহীত

আমি দেশে ফেরার ১৯৮৪ সালে জানতে পারলাম, তিনি জার্মান কালচারাল সেন্টারের একটি নাটকের জন্য অভিনয়শিল্পী খুঁজছেন। “ক্ল্যাভিগো” নামের সেই নাটকে তাঁকে সহশিল্পী ও নির্দেশক হিসেবে পেয়েছি। তাঁর ছোট বোন নাজমা আনোয়ারও অভিনয় করেছিলেন। তখন তাঁকে ভালোভাবে জানতে পারার সুযোগ তৈরি হলো। পরিচালক হিসেবেও যে তিনি বেশ কমান্ডেবল, তা উপলব্ধি করলাম। একটা সময় যেহেতু তাঁর ভক্ত ছিলাম, সে হিসেবে কাজটি করতে আরও ভালো লেগেছিল। এরপর আমরা বিটিভির স্টুডিওতে দেওয়ান “গাজীর কিসসা” নাটকে অভিনয় করতে গেলে দেখা হয়। ওটাই ছিল শেষ দেখা। যত দূর জেনেছি, তিনি একটা সময় নিজের মতো সময় বেছে নিয়েছিলেন। আর কারও সঙ্গে দেখা করতেন না। অভিনয়শিল্পী ফারহানা মিঠু (আজমেরি জামানের ছেলে রাহবার খানের স্ত্রী) মাধ্যমে তাঁর খবর নিতাম। তবে অসাধারণ একজন অভিনয়শিল্পী ছিলেন, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।’