‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ দেখে কী বলছেন দর্শক

রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি–এর প্রতিক্রিয়া

‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর পর আজমেরী হক বাঁধনের প্রথম কাজ, স্বাভাবিকভাবেই তাই বাংলাদেশি দর্শকদের আলাদা আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশের একজন লেখকের উপন্যাস অবলম্বনে ভারতে বানানো ওয়েব সিরিজ, কৌতূহলের এটিও একটি কারণ। সঙ্গে যখন যুক্ত হয় কলকাতার সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালক, অঞ্জন দত্ত, রাহুল বোস, অনির্বাণ ভট্টাচার্যদের মতো অভিনেতার নাম, কৌতূহল তখন আকর্ষণে রূপ নেয়। নামটাও ব্যতিক্রমী। সব মিলিয়ে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীনের থ্রিলারের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ওয়েব ধারাবাহিক ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ মুক্তির আগেই যথেষ্ট প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল।

সিরিজটি প্রচার শুরু হয়েছে। কী বলছেন দর্শক, কেমন লাগল তাঁদের? যাওয়া যাক ফেসবুকবাসীর কাছে।

রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি ধারাবাহিকে বাঁধন
ইনস্টাগ্রাম

নজরুল সৈয়দের পরামর্শ, যাঁরা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের বইটি এখনো পড়েননি, কিন্তু ওয়েব সিরিজটি দেখতে চান, তাঁদের জন্য বইটি না পড়াই ভালো। তাহলে সিরিজটি ভালো লাগতেও পারে। একবাক্যে তিনি লিখেছেন, ‘অনির্বাণ ভট্টাচার্য আর বাঁধন বেশ ভালো করেছেন।’ তিনি লিখেছেন, ‘সাহিত্য যখন চলচ্চিত্রে রূপায়িত হবে, পরিচালক আসলে একটা নতুন গল্পই বলবেন। সাহিত্যের সঙ্গে মিল-অমিল সেখানে সব সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং এখানে সৃজিত মুখার্জি প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন নাজিম উদ্দিনের গল্পটাই হুবহু বলতে। একেবারে ডায়ালগটা পর্যন্ত হুবহু কপি-পেস্ট। কিন্তু তারপরও বই পড়ার সেই উত্তেজনাটা সিরিজে পাইনি। এখানে আমারও ঘাটতি থাকতে পারে, হয়তো গল্পটা পড়া থাকায় এই বিপত্তি।’

এই দর্শকের রয়েছে আরও কিছু পর্যবেক্ষণ। যেমন বইতে নূরে ছফা প্রথম ‘রবীন্দ্রনাথে’ ঢুকে যে পরিবেশটা দেখেছিল, তা দিয়ে যে আবহ তৈরি হয়েছিল, সৃজিতের ‘রবীন্দ্রনাথে’ তেমনটি নেই। আর দশটা সাধারণ রেস্তোরাঁর মতোই মনে হয়েছে। প্রথম দৃশ্যে অল্প খদ্দের, ওয়েটারের রহস্যময় বেমক্কা আগমন ইত্যাদির ফলে নাজিম উদ্দিন যে রোমাঞ্চ তৈরি করতে পেরেছিলেন, সেটুকু করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়, তবু অযথা সৃজিত কেন সেই রোমাঞ্চটা ভাঙলেন, অজানা রয়ে গেল। সিরিজজুড়েই এ রকম ছোট ছোট অনেক ব্যাপার আছে, যেগুলোতে নাজিম উদ্দিনের লেখা অনুসরণ করাই যেত। সৃজিত অযথাই আবহগুলো নষ্ট করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি ধারাবাহিকের মূল চরিত্রেরা ছিলেন তাঁরা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক মার্জিয়া আক্তার লিখেছেন, ‘পুলিশের ইনফরমার আতর আলি চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য অনবদ্য। পূর্ববঙ্গীয় ভাষা তিনি দারুণ দক্ষতায় প্রয়োগ করেছেন। মূল উপন্যাসের নূরে ছফা সৃজিতের চিত্রনাট্যে ভৌগোলিক বিচারে নিরুপম চন্দ হয়েছে। সংগীত এককথায় অনন্য। রবীন্দ্রনাথের গানের অনবদ্য ব্যবহারে অন্য রকম মাত্রা পেয়েছে। জয়তী চক্রবতীর কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীতগুলো অসামান্য স্থিরতায় মুশকান জুবেরিকে ধারণ করেছে। বিশেষত “আমি চঞ্চল হে” দারুণ। রশিদ খানের গাওয়া “কার মিলন চাও বিরহী” সূচনাসংগীতটি তুলনারহিত। তবে প্রথম তিন-চারটা পর্ব আরও টান টান হতে পারত।’

শুভ কামাল লিখেছেন, ‘একটা মুভি কখনো বইয়ের সমান হতে পারে না। বইয়ে কার মনে কী চলছিল, তা লেখক বর্ণনা করতে পারেন, কিন্তু মনের কথা ভিজুয়ালাইজ করার ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো পরিচালকের নেই। তাই বই পড়ার পর মুভি দেখলে তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। বইয়ের সঙ্গে তুলনা না করে এই ওয়েব সিরিজ দেখলে কিন্তু সেটাকে খারাপ মনে হবে না, এমন বৈচিত্র্যময় গল্প জীবনে খুব কমই দেখেছেন, সেটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। মাঝে দুয়েক পর্ব ঝুলে গেছে, কিন্তু ৫-৬ পর্বের দিকে এসে ঠিকই জমেছে। চিত্রনাট্যের যেটুকু দুর্বলতা ছিল, শক্তিশালী গল্প তা কাটিয়ে দিয়েছে।’

২০ বছরের মুশকান চরিত্রে বাঁধন
ইনস্টাগ্রাম

মঞ্জিমা প্রামাণিক লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাহিত্য বারবার মুগ্ধ করে। বইটি পড়লে বেশি ভালো লাগবে যদিও, তবু চলচ্চিত্রায়ণে ভালো-মন্দ দুরকমই প্রচার পায় সাহিত্য, এ কথা অনস্বীকার্য। সাহিত্য ও সিনেমা সব সময়ই পৃথক শিল্প। কেন্দ্রীয় চরিত্র রহস্যময়ী মুশকান জুবেরির ভূমিকায় আজমেরী হক বাঁধন টান টান। প্রাক্তন পুলিশ কর্মী তথা ক্রিমিনোলজির প্রফেসর কে এস খান এখানে খরাজ খাসনবিশ। এই ভূমিকায় অঞ্জন দত্তকে বেশ লেগেছে। ওসির চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী যথাযথ। ফালু, রহমান মিঞা, মাস্টারমশাই , এসপি সাহেব এবং আরও যাঁরা আছেন, সুন্দরপুরের প্রেক্ষাপটে সুন্দর মানিয়েছে তাঁদেরও। তবে ব্যক্তিগত মতামত আতর আলি ওরফে অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে নূরে ছফা (নিরুপম চন্দ) চরিত্রটির জন্য ভাবতে পারতেন পরিচালক। যদিও আতর আলিতেও আপন সুগন্ধি ছড়িয়েছেন অনির্বাণ নিঃসন্দেহে।’

তিনি জানাচ্ছেন, ‘এই সিরিজের অন্যতম সম্পদ গান। ওস্তাদ রশিদ খান, জয় সরকার ও জয়তী চক্রবর্তী আবহে যোগ করেছেন সেই আলো ও আঁধারটুকুর দোলাচল। যোগ করেছেন সন্ধানের আগ্রহ। ক্যানিবালিজম, অমরত্বের স্পৃহা বা মানবমনের কেন্দ্রে তার আচরণে কত কত স্রোত খেলা করে প্রতিনিয়ত, আনাচে-কানাচে চাপা থাকে বীভৎস রসে জারিত কত সত্য, তার টুকরো আখ্যান “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি।”’