স্বামীর কবরে চিরনিদ্রায় শর্মিলী আহমেদ

দুই দশক আগে মারা যান অভিনয়শিল্পী শর্মিলী আহমেদের স্বামী রাকিব উদ্দিন আহমেদ। বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল তাঁকে। একই কবরে শুক্রবার বাদ আসর সমাহিত করা হয়েছে শর্মিলী আহমেদকে।

শর্মিলী আহমেদ
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

শর্মিলী আহমেদের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। অভিনয়শিল্পী বোন ওয়াহিদা মল্লিক জানান, মাস দুয়েক আগে তাঁর বোনের ক্যানসার ধরা পড়ে। এ নিয়ে তাঁর মধ্যে কিছুটা হতাশা কাজ করছিল। মৃত্যুর আগে শর্মিলী আহমেদেকে ২৮টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।

শর্মিলী আহমেদেরর প্রকৃত নাম মাজেদা মল্লিক। ১৯৪৬ সালের ৮ মে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা গ্রামে জন্ম। মাত্র চার বছর বয়সে অভিনয় শুরু। ক্যারিয়ার শুরু করেন রেডিওতে। ছিলেন রাজশাহী বেতারের শিল্পী। ষাটের দশকে চলচ্চিত্রে নাম লেখান শর্মিলী। প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঠিকানা’ (উর্দু ভাষায় নির্মিত) অবশ্য আলোর মুখ দেখেনি। সুপরিচিত হয়ে ওঠেন সুভাষ দত্তের ‘আলিঙ্গন’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ও ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্র দিয়ে।

শর্মিলী আহমেদ
সংগৃহীত।

শর্মিলী আহমেদের স্বামী রকিব উদ্দিন আহমেদও ছিলেন পরিচালক। প্রায় ২০ বছর আগে মারা যান তিনি। তাঁর নির্মিত ‘পলাতক’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ। স্বাধীনতা–পূর্ববর্তী সময়ে আরও কিছু উর্দু ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পর ‘রূপালী সৈকতে’, ‘আগুন’, ‘দহন’-এর মতো জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রে ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি।

প্রায় ৪০০ নাটক ও ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ছিলেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। পরবর্তীকালে ছোট পর্দার মা, দাদি কিংবা ভাবির চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকমনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন।

অভিনয়ে ব্যস্ত থাকলে অনেক সময়ই পরিবারে সময় দিতে পারেন না অভিনয়শিল্পীরা। কিন্তু শর্মিলী আহমেদ একেবারে আলাদা। অভিনয় ও সংসার—দুটিই সামলেছেন তিনি। সংসারে কী রান্না হবে, কে কী খাবেন—এসব বুঝিয়ে দিয়েই প্রতিদিন ছুটতেন শুটিং সেটে।

শর্মিলী আহমেদকে ছোট পর্দায় নিয়মিত দেখা গেলেও তিনি আদতে চলচ্চিত্রের মানুষ
ছবি: সংগৃহীত

শর্মিলী আহমেদের কাছে পরিবার আগে গুরুত্বপূর্ণ, তারপর কাজ। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা সব সময়ই শর্মিলী আহমেদকে অভিনয়ে সহযোগিতা করেছেন। ছোট পর্দায় তাঁকে বেশির ভাগ সময় মায়ের চরিত্রে দেখা গেছে। আর বাস্তবেও মায়ের মতোই আগলে রেখেছিলেন পুরো পরিবারকে।

অভিনেত্রী ও মা—দুই জায়গাতেই সফল ছিলেন শর্মিলী আহমেদ। শুটিংয়ে যেমন তিনি সময় দিয়েছেন, তেমনি পরিবারের প্রতিটি কাজের দিকে খেয়াল রেখেছেন। প্রথম দিকে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কম থাকলেও মা হওয়ার পর দায়িত্ব বেড়ে যায়। সে সময় অবশ্য অভিনয় কমিয়ে দেন। সিনেমা ও নাটকের বেশির ভাগ শুটিং তিনি ঢাকার মধ্যেই করতেন, যেন সন্তানদের সময় দিতে পারেন। সন্তানদের মানুষ করতে অভিনয়টা একটু কমিয়ে দিয়েছিলেন শর্মিলী।