বরফঢাকা পাহাড়ে হাত কেটেও থামেননি নিশো—কাজাখস্তানে ঝুঁকি নিয়েই শুটিং

পূজা চেরী, আফরান নিশো ও রেদওয়ান রনিছবি : চরকির সৌজন্যে

কাজাখস্তানের বিভিন্ন লোকেশনে টানা শুটিং, তীব্র ঠান্ডা আর শারীরিক ঝুঁকি—সবকিছুর মধ্যেই ‘দম’ সিনেমার প্রথম লটের কাজ শেষ করেছেন আফরান নিশো। ক্লান্তিকর শুটিং শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি। ৮ ডিসেম্বর হাজির হন ভক্তদের আয়োজিত জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। উপস্থিত হয়ে তিনি যেমন চমকে দিলেন সবাইকে, জানালেন কাজাখস্তানে কঠিন পরিস্থিতিতে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতার গল্পও।

শুরুর দিকে সৌদি আরব ও জর্ডানকে শুটিংয়ের লোকেশন হিসেবে ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত কাজাখস্তানে ‘দম’ সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে। সেখানকার দুর্গম লোকেশনে এই ছবির প্রথম লটের শুটিং হয়েছে। শুটিং শেষে পুরো টিম দেশে ফিরেছে।

জানা গেছে, ৬ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে কাজাখস্তান অংশের শুটিং। ৮ ডিসেম্বর তাই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভক্তদের চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতার গল্প শোনান  নিশো ও ছবির পরিচালক রেদওয়ান রনি।

আফরান নিশো
ছবি: প্রথম আলো

পরিচালক রেদওয়ান রনি জানান, কাজাখস্তানের বরফঢাকা পাহাড়ি এলাকায় একেবারে সীমিত সুযোগ–সুবিধার মধ্যে শুটিং করতে হয়েছে। এর মধ্যে একদিন তো পাহাড়ের মোড় ঘুরতেই পাথরে হাত কেটে যায় নিশোর। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। জায়গাটা খুবই দুর্গম ছিল। তাই শুটিং বন্ধ করে বিশ্রামে যাওয়ার কথা ভাবেননি নিশো। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই পরের দৃশ্যগুলোর শুটিং করেছেন তিনি। পরিচালক মনে করেন, এই সিনেমার জন্য যেভাবে শিল্পীরা কাজ করেছেন, এমনটা সচরাচর হয় না।

আরও পড়ুন
পূজা চেরী, আফরান নিশো ও রেদওয়ান রনি
ছবি : চরকির সৌজন্যে

‘দম’ দিয়ে বেশ কয়েক বছর পর চলচ্চিত্র পরিচালনায় ফিরেছেন রেদওয়ান রনি। তাঁর ভাষায়, ‘দম নিয়ে “দম” বানাতে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় তৈরি হচ্ছে সিনেমার কাহিনি, যেখানে থাকবে সারভাইভাল ড্রামা। “দম” একজন সাধারণ মানুষের জ্বলে ওঠার গল্প । বলতে পারেন, “পাওয়ার অব আ কমন ম্যান” নিয়েই কাজ করছি। চরিত্রটির মধ্যে এমন এক শক্তি আছে, যা শুধু আমাকে নয়, দর্শকদের জীবনেও অনুপ্রেরণা জোগাবে।’

আফরান নিশো ও রেদওয়ান রনি
ছবি : চরকির সৌজন্যে

‘দম’ ছবির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে কাজ করছেন আফরান নিশো ও রেদওয়ান রনি। এর আগে নিশো বলেছিলেন, ‘এমন গল্পের সিনেমা দেশে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এতে উত্তেজনা আছে, চ্যালেঞ্জ আছে। অভিনয়ে প্রচুর চাপ থাকলেও এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি টানছে। দেশে এ ধরনের সিনেমা আগে দেখিনি।’ এদিকে শুটিং থেকে ফিরে অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আফরান নিশো বলেন, ‘আমরা সবাই চাই ভালো গল্প, ভালো পারফরম্যান্স। “দম”–এর মতো সিনেমার দায়িত্ব পাওয়া আমার জন্য আশীর্বাদ। টিমকে লিড করার মতো ভূমিকা আমার ওপর ছিল। তখন হাত কাটা–পা কাটার মতো বিষয় মাথায় রাখলে চলত না। আমরা কঠোর শিডিউলে ছিলাম—১০ মিনিট বিরতি মানে পুরো দিনের শিডিউল ফেল করা।’

আরও পড়ুন
‘দম’ সিনেমার মহরতে চঞ্চল চৌধুরী পূজা চেরী ও আফরান নিশো
ছবি : চরকির সৌজন্যে

আফরান নিশো আরও বলেন, ‘কাজাখস্তানে খুবই প্রতিবন্ধক আবহাওয়ায় শুটিং করেছি। ওখানে বেলা দুইটার পর সানলাইট থাকে না। সকাল থেকেই দৌড়াতে হতো দৃশ্যধারণের জন্য। তবে গর্বের জায়গা হলো—এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা এক দিনও বেশি শিডিউল নিইনি।’

‘দম’–এর গল্প নিয়ে এখনই বিস্তারিত জানাতে নারাজ নির্মাতা ও শিল্পীরা। নিশো শুধু ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাংলাদেশের মূলধারার চলচ্চিত্রে এমন গল্প বা নির্মাণশৈলী নিয়ে কাজ হয়নি আগে। তাঁর ভাষায়, ‘যখন দর্শক সিনেমাটা দেখবে, তারা গর্ব করবে—এটা বাংলাদেশের সিনেমা।’

আফরান নিশো
প্রথম আলো

কাজাখস্তানের তীব্র শীত, অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া ও দূরত্ব—সব মিলিয়ে শুটিং কঠিন ছিল। সে পর্ব শেষ করে এ মাসেই শুরু হবে দেশের বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং। কয়েক দিনের বিশ্রামের পর আবার লাইট, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন অভিনয়শিল্পীরা। সিনেমায় আফরান নিশো ও পূজা চেরির পাশাপাশি অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরীও, যা নতুন এক পর্দা–সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রযোজনা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে ‘দম’ মুক্তি পাবে আগামী রোজার ঈদে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে স্থানীয় সিনেমার চাহিদা বাড়ছে। এই সময়ে কাজাখস্তানের মতো একটি লোকেশনে শুটিং করা বড় বাজেটের ছবি দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করছে।