পথ খুঁজে পেলেন বন্নি
২০১৭ সালে বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে বিনোদনজগতে কাজ শুরু করেন বন্নি হাসান। মাঝখানের সময়টাতে কাজ করলেও তিনি নতুন করে আলোচনায় ‘তিলোত্তমা’ নাটক দিয়ে। গত ঈদুল ফিতরে প্রচারিত জাহিদ প্রীতমের নাটকটিতে তাঁর অভিনীত ‘জয়ী’ চরিত্রটি প্রশংসিত হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়েছে। নাটকটি নিয়ে এখনো দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছেন বন্নি। সাধারণ দর্শক ছাড়াও অনেক নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী তাঁর প্রশংসা করেছেন। যা ছুঁয়ে গেছে বন্নিকেও। আলাপের শুরুতেই তিনি বললেন ‘তিলোত্তমা’ প্রচারের পর প্রতিক্রিয়া নিয়ে, ‘আমাকে ঘিরে এত আলোচনা তৈরি হবে, ভাবিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানে এত এত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি; আমার মন ছুঁয়ে গেছে।’ প্রচারের আগে পোস্টার মুক্তির পরই অবশ্য তাঁর মনে হয়েছিল, নাটকটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তখন পোস্টার দেখেই প্রশংসা করেছিলেন অনেকে। প্রচারের পর তো আমার চরিত্র এবং নাটকটি নিয়ে ইতিহাস হয়ে গেল। ফেসবুক, মুঠোফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ—এত প্রশংসা পাচ্ছিলাম, প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।’ নাটকটির জন্য দেশের বাইরে থেকেও দর্শকের সাড়া মিলেছে। ‘জয়ী’ চরিত্রটি ধরে ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করেছেন কলকাতার অনেক কনটেন্ট নির্মাতা, যা অবাক করেছে বন্নিকেও।
তিনি বলেন, ‘নাটকে আমার অভিনীত চরিত্রটি যেভাবে শাড়ি পরে, কবিতার সুরে সংলাপ বলে; একইভাবে কলকাতার দর্শকেরা ছোট ছোট ভিডিও, রিল বানিয়ে আমার ফেসবুক ইনবক্সে পাঠিয়েছেন। আমি আবেগাপ্লুত হয়েছি। প্রচারের পর এত দিন হয়ে গেল, এখনো নাটকটি নিয়ে, আমার অভিনীত চরিত্র নিয়ে দর্শকের ভালোবাসা পাচ্ছি।’
কথায়–কথায় বন্নি জানান, নাটকটিতে তাঁর জন্য ‘জয়ী’ হয়ে ওঠা কম চ্যালেঞ্জের ছিল না। এর কারণ, বাস্তবে তিনি ‘জয়ী’র ঠিক বিপরীত। নাটকের ‘জয়ী’ শান্তশিষ্ট, ঠান্ডা মেজাজের; সবার সামনে কথা বলতে জড়তা কাজ করে। তবে গানটা দারুণ গায়। পর্দায় চরিত্রটি হয়ে ওঠা নিয়ে বন্নি বলেন, ‘চরিত্রটি আমার স্বভাবের বিপরীতে। চরিত্রটি হয়ে উঠতে প্রায় এক সপ্তাহ অনুশীলন করেছি। তার মতো চুল বেঁধে শাড়ি পরতাম, কথা বলতাম। চরিত্রটির মধ্যে একটা জড়তার ব্যাপার আছে। এটির অনুশীলনটাও কঠিন ছিল। নিজেকে “জয়ী” হিসেবে তৈরি করেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রীতম ভাইও অনেক গুছিয়ে নির্মাণ করেছেন। যার কারণে দর্শকের মন ছুঁয়েছে।’
ক্যারিয়ারের বাঁকবদল
২০১৭ সালে বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে শুরু করলেও পড়াশোনার কারণে ধীরগতিতে ক্যারিয়ার এগিয়েছে। এই সময়ে অল্প কিছু নাটক, ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। মডেল হয়েছেন গানের ভিডিওতেও। তবে ‘তিলোত্তমা’ নাটকটিই তাঁকে নতুনভাবে সামনে এনেছে। এ জন্য এটিকে ক্যারিয়ারের বাঁকবাদল হিসেবে দেখছেন বন্নি। নাটকটি দিয়ে নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘নাটকটি প্রচারের পর থেকে অনেক নির্মাতা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যা আগে ঘটেনি। নাটকটির প্রচারের পর ১৫টি চিত্রনাট্য হাতে এসেছে। সব পড়েছি। কিন্তু স্রোতে গা ভাসাইনি। চেষ্টা করছি ‘তিলোত্তমা’র মতো মানসম্পন্ন কাজ করার। এ কাজের পর শুধু ‘জি জি’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। আগামী ঈদে এক-দুটি কাজ হতে পারে।’
যেভাবে শুরু
অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বন্নির গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। ছোটবেলা থেকেই লালন, লোকসংগীত, রবীন্দ্রনাথের গান টানত তাঁকে। গান শেখারও শুরু তখনই। পরিবারেরও উৎসাহ ছিল। কিন্তু গান শেখার পাশাপাশি বন্নির মাথায় ঢোকে মডেলিং আর অভিনয়ের নেশা। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তখন বন্নি। মা-বাবার সঙ্গে সাতক্ষীরা থেকে কুষ্টিয়ায় ফিরছিলেন। রাস্তার পাশে একটি মুঠোফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনচিত্র চোখে পড়ে। তখন থেকেই তাঁর শখ জাগে, বড় হয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। মডেলিং করবেন। একদিন স্বপ্ন ধরা দেয় সত্যি হয়ে। বন্নি তখন কলেজছাত্রী। তিনি বলেন, ‘একটি মুঠোফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরি হবে। ফেসবুকে আমার ছবি দেখে তাদের ভালো লাগে। একজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দেখা করার পর তাঁদের পছন্দ হয়। এভাবেই শুরু হয়ে গেল কাজ।’
নাটকে এলেন কীভাবে? একই বছর তৌসিফের বিপরীতে ‘লাভ লিংক’ দিয়ে নাটকে অভিনয় শুরু। ওই মুঠোফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে পরিচালক এম শুভ উপস্থিত ছিলেন। বন্নিকে তাঁর নাটকের জন্য পছন্দ হয়, গল্প শুনে তিনি রাজি হয়ে যান। এভাবেই একসঙ্গে মডেলিং আর অভিনয়যাত্রা শুরু হয়। এরপর তাঁকে দেখা গেছে ‘লাকি’, ‘নায়িকার হেলমেট’, ‘আম্মাজান’, ‘আমাদের বাড়ি’, ‘কারাগার’ ইত্যাদি নাটক ও ওয়েব সিরিজে। পাশাপাশি সাব্বির নাসির ও মিজানের বেশ কয়েকটি গানের মডেল হন তিনি। বন্নি বলেন, ‘ওই সময় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, সব মিলিয়ে নিয়মিত কাজ করতে পারিনি।’
গানেও আছেন
ছোটবেলা থেকেই গানে প্রাণ ছিল বন্নির। পরে মডেলিং ও অভিনয়ে নিয়মিত হলেও গানের চর্চা বন্ধ হয়নি। চরকির আলোচিত ওয়েব ফিল্ম ‘ইউটিউমার’-এর ‘পাগলা ঘোড়া’ তাঁরই গাওয়া। গান, অভিনয়, মডেলিং—বেশি পছন্দ কোনটি? জানতে চাইলে এই মডেল–অভিনেত্রী বলেন, ‘অভিনয়টা ভালো লাগে। তবে অন্যগুলো বাদ দিয়ে নয়। সবই তো শিল্প। একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। নাচ, গান—সবই তো অভিনয়ের অংশ। ভালো অভিনয়শিল্পী হতে এগুলোও লাগবে।’