বললেন সিয়াম ও সাফা: বিশ্বাস রাখ, পারবে তুমিও...

সাফা কবির ও সিয়াম আহমেদকোলাজ
সাফা কবির ও সিয়াম আহমেদ। বাংলাদেশের বিনোদন জগতের খুবই জনপ্রিয় তারকা। দর্শকপ্রিয় এই দুই অভিনয়শিল্পীর শুরুটা কিন্তু ছিল খুবই সাদামাটা। কীভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে পেরেছেন তাঁরা? সেই গল্পই বলেছেন এই দুই তারকা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম ও মুত্তাকিমুর রহমান।

প্রশ্ন :

সিয়ামের কাছে প্রশ্ন, একজন অভিনেতা হতে পারবেন আপনিও—বিষয়টি প্রথম কবে বুঝলেন?

সিয়াম: পড়াশোনার পাশাপাশি যখন প্রথম ফটোশুট করার সুযোগ পেলাম, এরপর বিজ্ঞাপনের মডেল হলাম, অডিশন দিতে দিতে অবশেষে নাটকে সুযোগ পেলাম, তখনো অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে অতটা ভাবিনি। কিন্তু আমি যখন আইন নিয়ে পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ড গেলাম এবং শেষ করে ফিরলাম; তখনই চ্যালেঞ্জ অনুভব করছিলাম যে আমাকে আসলে অভিনেতাই হতে হবে এবং আমাকে সত্যিকারের পারফরমার হতে হবে। যেভাবে আমার একাডেমিক ক্যারিয়ারকে সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম, সেভাবেই অভিনয়কে গ্রহণ করেছি।

প্রশ্ন :

সাফা কবির, আপনি তো প্রথম কাজের অফার পেয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। কতটুকু কনফিডেন্ট ছিলেন?

সাফা: কখনো ভাবিনি যে টিভি পর্দায় কাজ করতে পারব। প্রথমবার যখন কাজের অফারটা পাই, সবার আগে বাবাকে জানিয়েছিলাম। বাবা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন চেষ্টা করে দেখতে। কথাটা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছিল। তখন মনে হয়েছিল, চেষ্টা করলে আমি হয়তো পারতেও পারি! প্রতিটা মুহূর্তে আমি বিশ্বাস করেছি, পারব আমিও।

প্রশ্ন :

‘সাধারণ সিয়াম’ থেকে ‘সুপারস্টার সিয়াম’—কেমন ছিল স্বপ্নপূরণের এই যাত্রা?

সিয়াম: আলহামদুলিল্লাহ। সুপারস্টার, মেগাস্টার, রাইজিং স্টার—এসব উপাধির চেয়েও বড় কথা, আমার জীবনে এখন বিশাল একটা পরিবর্তন এসেছে। আগে আমি শুধু সিয়াম ছিলাম আমার পরিবারের জন্য, বন্ধুদের জন্য আর আমার ভালোবাসার মানুষটার জন্য; কিন্তু এখন আমি গোটা দেশের মানুষের কাছেই দায়বদ্ধ। এত এত মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস, দোয়া—বিষয়টা অকল্পনীয়।

প্রশ্ন :

নিজেদের কোন কাজটাকে আপনারা ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে মনে করেন?

সিয়াম: কাজের মাধ্যমে আমি প্রথমবারের মতো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসা টের পাই ২০১৩ সালে রবির একটা বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করে। সেবারের বিজ্ঞাপনে রেলস্টেশনে হারিয়ে যাওয়া একটি শিশুকে খুঁজে বের করেছিলাম। অনেকেই বলত, ওই যে শিশুটাকে খুঁজে বের করল, সেই ছেলেটা না! সেই পরিচিতিই আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছিল। দুনিয়াটা যে গোল একটা চক্র এবং কখন কী ঘটবে, তা আমরা কখনো বলতে পারি না—তার দারুণ একটা উদাহরণ হচ্ছে রবির সঙ্গে আমার যুক্ত হওয়ার ঘটনাটা।
সাফা: আমার মতে, ‘আমার এই গল্পের নাম নেই’, ‘ভিকটিম’ও ‘তুমি একটা দিন থাকো’—এই তিন কাজ হচ্ছে আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ, এই কাজগুলোর মাধ্যমে আমি আসলে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করতে পেরেছি। এগুলো দর্শক খুব পছন্দ করেছে এবং ওই সময় এসব গল্প থেকে অনেক ভালো রেসপন্সও পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন :

সাফা কবিরের কাছে জানতে চাই, ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই চমৎকার সব কনটেন্ট দর্শকদের উপহার দিচ্ছেন। কখনো কি এভাবে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে পারার ব্যাপারে সংশয় ছিল?

সাফা: আমি প্রতিটা কাজ করার আগে অনেক হোমওয়ার্ক করেছি, অনেক শেখার চেষ্টা করেছি। প্রতিটা কাজের পেছনে আমার কঠোর পরিশ্রম ছিল। সব সময়ই ইচ্ছাটা থাকে যেন দর্শককে ভালো কিছু উপহার দিতে পারি। সেই সঙ্গে নিজের প্রতি আস্থাটা একটা বড় ব্যাপার।

প্রশ্ন :

প্রথমবার কোনো কাজে সফল না হলে অভিনেতা সিয়াম কীভাবে নিজেকে মোটিভেট করেন?

সিয়াম: আমার কাছে সফলতা বিষয়টা খুবই আপেক্ষিক। কোনো কাজে সাফল্য বলতে আমি বুঝি, আমি সেই কাজে নিজের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলাম কি না; শতভাগ সৎ থেকে আমি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি কি না। শুধু এই বিষয়টাই আমার হাতে, তাই সেটাই আমি করতে চেয়েছি ঠিকঠাকভাবে।

প্রশ্ন :

তরুণেরা সব সময় স্বপ্ন দেখে লাইফে নতুন কিছু করতে পারার। তাদের প্রতি আপনাদের কোনো পরামর্শ আছে?

সিয়াম: তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার একটাই পরামর্শ, তুমি যদি বিশ্বাস করো, করতে পারবে, তাহলে চেষ্টায় কোনো কমতি রেখ না। যতক্ষণ তুমি তোমার নিজের প্রতি সৎ থাকবে, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও তোমার কোনো অনুশোচনা থাকবে না। কারণ, তোমার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না।
সাফা: আমার কাছে মনে হয়, অনেক বেশি স্বপ্ন দেখা উচিত। এবং সেটা পূরণ করার মনোবল থাকা উচিত। তরুণদের বলব, মনে দৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস রাখ—পারবে তুমিও।

আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

সাফা ও সিয়াম: আপনাদেরও ধন্যবাদ।