ঈদের তো আর বেশি দিন বাকি নেই। নতুন কাজ কি করছেন?
আইশা খান : আজ (সোমবার) মহাখালী বাস টার্মিনালে ঈদের নাটকেরই শুটিং করছি। দ্বিতীয় দিনের শুটিং। মনসুর আলমের পরিচালনায় এই নাটকে আমার সহশিল্পী ইরফান সাজ্জাদ। রাতের বেলায় নারীদের অনিরাপদ জীবনযাত্রা নিয়ে নাটক।
প্রথম আলো :
বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবেই কি এ ধরনের গল্প?
আইশা খান : তা নয়। শুধু রাতের ঢাকা নয়, যেকোনো জায়গায় যখন যাই, রাতটা কতটা নিরাপদ থাকে বা রাতে ভ্রমণ একজন নারীর জন্য কতটা বিপদজ্জনক, এমনকি বিপদের সময় সেই নারীকে কেউ হেল্প করতে এলে, সেটাকে হেল্প হিসেবে নেয় কি না—এসব নিয়ে গল্পটা এগিয়ে গেছে।
পেশাগত কারণে আপনাকেও তো রাতবিরাতে যাওয়া-আসা করতে হয়?
আইশা খান : বর্তমান সময়ে কয়েকটা ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, তাতে আমি যতটা না ভীত, তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে আমার পরিবার। এ মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয়, আমাদের রাস্তাঘাটের যে নিরাপত্তা, বিশেষ করে রাত ১১টার পর নিরাপত্তা আরও জোরদার হলে সবার জন্য চলাফেরা করা স্বস্তিদায়ক হয়। আমরা যখন দেশের বাইরে যাই, রাতের পুরো শহর বা রাস্তাঘাটের সৌন্দর্য বেশ উপভোগ করি। দুভার্গ্যজনক, নিজের দেশে এ মুহূর্তে আমি তা উপভোগ করতে পারছি না।
প্রথম আলো :
‘নেক্সট ডোর নেইবার’ নিয়ে তো অনেক আলোচনা হচ্ছে...
আইশা খান : এটা ফিল গুড কনটেন্ট। কাজটি দেখার সময় অনেক বেশি মনোযোগী থাকতে হবে, তেমন নয়। আমরা যখন কোনো থ্রিলার বা ক্রাইম মুভি দেখি, তখন কোনো কিছু যাতে মিস না করি, তাই মনোযোগী থাকি। এটা দেখার সময় অতটা মনোযোগী থাকার দরকার নেই। এই কনটেন্ট দেখার সময় যে কেউ বেশ আরাম পাবে। এটা একদম আহামরি নতুন কোনো গল্প নয়; বরং নিয়মিত গল্পের অভিনব উপস্থাপন।
প্রথম আলো :
এই ওয়েব ফিল্মের নির্মাতা একজন নারী (মাহমুদা সুলতানা)। আমাদের এখানে তো নারী নির্মাতা কম। নারীরা কনটেন্ট বানালে বৈচিত্র্য বাড়ে?
আইশা খান : আমার কাছে ব্যাপারটা এ রকম নয়। আমার কাছে মনে হয়, যাঁরা নির্দেশনা দেন, তাঁরা প্রত্যেকে ভীষণ সৃজনশীল। তবে কয়েক মাস পর আরেকজন নারী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম, এটা আমার প্লাস পয়েন্ট। আমার কাছে মনে হয়েছে, গল্পের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন। যেহেতু বেশির ভাগ সময় আমাদের পুরুষ পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা হয়, চিত্রনাট্যে সমন্বয়ের ব্যাপারটা থাকে না। হয় তাঁরা পুরুষ চরিত্রকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে দেন, নয়তো নারী চরিত্রকে। আমার কাছে মনে হয়, যেকোনো চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই ফিল্মেও আপনার জুটি পার্থ শেখ। দুজনের বোঝাপড়া তৈরি হলো কীভাবে?
আইশা খান : খুব কম সময়ে দর্শক আমাদের দুজনকে তাঁদের মনে জায়গা দিয়েছেন। বোঝাপড়ার কথা যদি বলি, পার্থকে আমি বেশ কয়েক বছর ধরে চিনি। দুজনেরই শুরুটা ২০২১ সালে। তখন বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করতাম। পার্থকে আমি অভিনয়শিল্পীর চেয়ে পরিচালক হিসেবেই বেশি চিনতাম। কারণ, তখন তাঁর ডিরেকশনে হাবিবের ‘বেণি খুলে’, জেফার ও মুজার ‘ঝুমুর’ গানের ভিডিও চিত্র মুক্তি পায়। তখন ওর প্রশংসাও করেছিলাম। সে খুবই বিনয়ী। পরিচয়ের পর থেকে আড্ডা দিতাম, দেখা করতাম। ২০২৪ সালে পর্দা ভাগাভাগি করার সুযোগ আসে। জাহিদ প্রীতমের ‘ফ্রেঞ্জি’ ছিল প্রথম কাজ। এই কাজের সময় আমাদের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই বন্ধুত্বের কারণে আমরা শুটিং সেটের অনেক সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতাম, পরিচালক পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন মনে করতাম না। আমরা দুজন এখন পর্যন্ত ১০টি কনটেন্টে কাজ করেছি। ‘মেঘ রুদ্র’র গল্প করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, পার্থ যথেষ্ট নিবেদিতপ্রাণ। তার সঙ্গে অনেক পরিচালকও কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ, সে নিজেও তো একজন নির্মাতা। টেকনিক্যাল ঝামেলা হলে বুঝতে পারে, সহযোগিতা করে। শুটিংয়ে দেরি হলেও আমরা চাপ অনুভব করি না; বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজটা শেষ করি। ‘নিরুদ্দেশ’ ও ‘মায়া’ করতে গিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়।
প্রথম আলো :
এ বছর ক্যারিয়ার নিয়ে কী পরিকল্পনা?
আইশা খান : কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি পরিকল্পনা করেও চলি না। সব সময় মনে করি, আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী, আমি শুধু চুপচাপ আমার কাজটা করে যেতে চাই। তবে হ্যাঁ, ইচ্ছাকৃতভাবে এখন একটু বেশি কাজ করছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, নিয়মিত কাজ করলে অভিনয়ের যেসব জড়তা আছে, কাটিয়ে উঠতে পারব। আর একেকটা টিমের সঙ্গে কাজ করলে না নিজের ভালো–মন্দ দিক সম্পর্কে ভালোমতো জানা যায়। যেহেতু গত বছরের বুক পকেটের গল্প থেকে এবার নেক্সট ডোর নেইবার আলোচিত হয়েছে; মনে হয়েছে, আমার দায়িত্বটা বেশি। আমি গল্পের পোকা। গল্প ভালো লাগলে আবার সিনেমায় ডুব দেব। তবে এ বছর ছবিতে কাজ করব না। প্রসূণ রহমান ভাইয়ের শিকড় সিনেমাটি দেশের বাইরে মুক্তি পাবে। এটি আমার তৃতীয় ছবি। প্রথমটা ছিল আহত ফুলের গল্প, গত বছর ভয়াল মুক্তি পেল।
ঈদে যেসব কাজ আসবে, তার থেকে পছন্দের তিনটি কাজ নিয়ে বলুন।
আইশা খান : এটা বলাটা মুশকিল। ভালোবাসা দিবসেরও বেশ কয়েকটা ভালো কাজ মুক্তি পায়নি। এমনও হতে পারে, ঈদের জন্য যেসব কাজ করছি, সেসবের কয়েকটা ঈদে মুক্তিও পাবে না। ঈদের কয়েক দিন আগে সবকিছু বুঝতে পারব।
প্রথম আলো :
এর মধ্যে কী দেখলেন?
আইশা খান : সম্প্রতি দেখলাম ‘রঙিলা কিতাব’, ‘ফেউ’, আর অবশ্যই ‘নেক্সট ডোর নেইবার’। দেশের বাইরের কথা যদি বলি, নেটফ্লিক্সে ‘ডাব্বা কার্টেল’ দেখলাম। তবে প্রচুর বই পড়েছি। বইমেলায় যদিও যাওয়ার সুযোগ হয়নি, পুরোনো সংগ্রহ থেকে বইগুলো পড়া। এর মধ্যে আছে রেনুকা গাবরানির ‘দ্য আর্ট অব বিইং অ্যালোন’, ডেরিয়াস ফরোর ‘ফোকাস অন হোয়াট ম্যাটারস’ এবং কিঙ্কর আহসানের ‘মকবরা’।