নাটকের নিশো আর সিনেমার নিশো আলাদা কেন, শুনুন তাঁরই মুখে

আফরান নিশোর অভিনয়জীবন দুই যুগের। শুরুটা উপস্থাপনা দিয়ে হলেও একটা নাটকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অভিনয়ের নতুন মাধ্যম ওটিটিতেও নিয়মিত কাজ করছেন। ২০২৩ সালে মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিষেক। এখন বড় পর্দা নিয়ে বেশি ভাবনা। অবশ্য ভালো গল্প পেলে ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্মেও কাজ করে থাকেন। সম্প্রতি কাজাখস্তানে ‘দম’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। গতকাল ছিল এই তারকার জন্মদিন। একনজরে এই তারকার অভিনয়জীবনের ওপর আলো ফেলা যাক।
১ / ১১
‘দাগি’ ছবিতে অভিনয় দিয়ে দর্শক মনে দাগ কাটেন আফরান নিশো। ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের প্রশ্ন ছিল, এরপর তাঁকে কোন ছবিতে দেখা যাবে। একটা সময় এসে জানা যায়, নিশোর পরবর্তী সিনেমার নাম ‘দম’, যেটির পরিচালক রেদওয়ান রনি। এই ছবির মাধ্যমে নির্মাতা হিসেবে রনি তাঁর বিরতি ভাঙেন।
ছবি: প্রথম আলো
২ / ১১
সম্প্রতি কাজাখস্তানে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ‘দম’ ছবির শুটিং করেছেন আফরান নিশো। এরই মধ্যে ফিরেছেন দেশে। এই ছবি আগামী বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাবে। সেভাবেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘দম’ ছবিতে নিশোর নায়িকা হিসেবে দেখা যাবে পূজা চেরীকে। ‘দম’ সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করছে এসভিএফ আলফা-আই এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড ও চরকি।
ছবি : চরকির সৌজন্যে
৩ / ১১
‘দম’ সিনেমার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে আফরান নিশোকে। শুটিংয়ে যাওয়ার আগে নিজের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে নিশো বলেছিলেন, ‘পরিচালক রেদওয়ান রনির নির্দেশ অনুযায়ী তাঁকে ওজন কমিয়ে নামাতে হচ্ছে ৭৫ কেজিতে।’
ছবি : পূজার ফেসবুক থেকে
৪ / ১১
আফরান নিশো জানান, দ্বিতীয় সিনেমা ‘দাগি’-তে তাঁর ওজন ছিল ৯৫ থেকে ৯৭ কেজি, আর ‘দম’ ছবির জন্য তাঁর ওজন ৭৭ কেজিতে আনতে হয়েছে। নিশো বলেন, ‘চিত্রনাট্যের টোটাল ড্রাফট রেডি হওয়ার পর ১ মাসে এই ২০ কেজির যে ধকলটা, এটা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।’
ছবি : শাহরিয়ার শাকিলের ফেসবুক থেকে
৫ / ১১
‘দম’-এর মূল ভাবনা প্রসঙ্গে নিশো বলেন, ‘আমার কাছে প্রথমে মনে হয় যে দমহীনতাই দমের আসল দম।’ তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন যে এটি শুধু শারীরিক ক্ষমতার বিষয় নয়, বরং মানসিক এফোর্টটাই সবচেয়ে বড় এফোর্ট। তাঁর মতে, টিমের শারীরিক দক্ষতা বা এফোর্টনেস মূলত সেই মানসিক শক্তি থেকেই ছড়াবে। তিনি এটিকে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা এক অভূতপূর্ব গল্পনির্ভর ছবি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নিশো বিশ্বাস করেন, তাঁর বয়সকালে তিনি বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এ রকম কোনো ছবি, গল্প, ভিজ্যুয়াল, পারফরমার, রাইটার বা নির্মাতার ভাবনা দেখেননি।
ছবি : চরকির সৌজন্যে
৬ / ১১
বিনোদন অঙ্গনে আফরান নিশোর শুরুটা মডেলিং দিয়ে। প্রথম দিকেই তিনি নির্মাতাদের চোখে পড়েন। তবে শুরুর দিকে ছিলেন অনিয়মিত। একটা সময় সিরিয়াস হয়ে ওঠেন। সে সময় হয়তো কেউ ভাবেননি এই তরুণই একদিন হয়ে উঠবেন পর্দার সবচেয়ে আলোচিত মুখ। তাঁর পরিশ্রম, চেষ্টা ও অভিনয় শেখার আগ্রহই তাঁকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসে।
ছবি : প্রথম আলো
৭ / ১১
নাটক, ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আফরান নিশোর। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুড়ঙ্গ’। প্রথম সিনেমায় বাজিমাত করেন এই অভিনয়শিল্পী। সেই অভিজ্ঞতায় তিন মাধ্যম প্রসঙ্গে নিশোর অভিমত, পার্থক্য খুব একটা দেখেন না। তিনি বলেন, ‘সব মাধ্যমে অভিনয়টাই করতে হয়। কোনোটায় অল্প সময়ের প্রস্তুতি, আবার কোনোটায় পার্থক্যটা বেশি সময়ের।
ছবি : চরকির সৌজন্যে
৮ / ১১
নিশো বলেন, ‘আমরা তো কনটেন্ট নিয়ে কাজ করি। যে সময়টা দেওয়া হয়, সেই সময়ের মধ্যে নিজেকে প্রস্তুত করি। নাটকে সাধারণত বাজেট কম, ওয়েবে বাজেট বেশি। আমার কাছে আলাদা মাধ্যম মনে হয় না। মনে হয়, ভালো কনটেন্ট বা গল্প নিয়ে কাজ করছি। হয়তো সেখানে ৩ দিনের জায়গায় ৩০ দিনের সময় পাচ্ছি। আর কিছুই না। আমাকে তো আসলে অভিনয়ই করতে হবে। আমার কাজ অভিনয় করা, টিমকে সন্তুষ্ট করা, নিজেকে সন্তুষ্ট করা, পরিশ্রম করা, যত্নশীল থাকা, সময়মতো কাজ করে টাকাটা সুন্দর করে বুঝে নেওয়া।’
চরকির সৌজন্যে
৯ / ১১
বিনোদন অঙ্গনে আফরান নিশো দুই যুগ ধরে কাজ করছেন। এই সময়ে তিনি নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন। নিশো বলেন, ‘উপস্থাপক, মডেল হয়ে ২০০৫ সালে নাটকে কাজ শুরু। শুরু থেকেই দায়িত্ব ভেবেই কাজ করেছি। এমন না খুব আলাদা কাজ করেছি। যে কাজটা করেছি, মনোযোগ দিয়ে করেছি। একটা পর্যায়ে সবাই বলছিল, ফিল্ম করতে। আমারও মনে হয়েছে, কবে ফিল্ম করব। অভিনয় পেশা, আমার রুটিরুজি। পেশাদারভাবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সাহস বা ইচ্ছাটুকু তৈরি হয়নি। সিনেমার কাজ শুরুর আগে নাটকের কাজ কমিয়ে দিই। একটা নতুন কিছু শুরুর আগে এমনটা করতে হয়।’
ভিডিও থেকে
১০ / ১১
গাড়ি চালাতে খুব ভালোবাসেন আফরান নিশো। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতেও ভালো লাগে। কিন্তু প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া খুব একটা সম্ভব হয় না। নিশো বলেন, ‘আমার মতো করে ঘুরি। বাইরে গেলে শুধু ঘুমানো হয়। প্রকৃতির সঙ্গে থাকার সুযোগ হয় না। একটা নির্জন দ্বীপ থাকলে ভালো হতো, যেখানে মনের আনন্দে ঘুরতে পারতাম। তবে মাস্ক পরে মুখ ঢেকে রাখি—তারপরও অদ্ভুতভাবে মানুষ আমাকে চিনে ফেলে।’
ছবি : প্রথম আলো
১১ / ১১
অভিনয়শিল্পী আফরান নিশো যখন মডেলিং শুরেু করেন, তখন তাঁর মা বলেছিলেন, ‘বাবা যেখানেই কাজ করো, সেরা পাঁচে থাকবা।’ পরে যখন নাটকে অভিনয় শুরু করেন, তখনো মায়ের কথা মাথায় রেখে অভিনয় করে এসেছেন। নিশো বলেন, ‘নাটকে কাজ করে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। রাস্তায় বের হলে সে ভালোবাসা দেখেছি। এখন সিনেমায় কাজ করে দর্শকের আলাদা ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, ব্যাপারটা তেমন নয়। তবে সিনেমা করতে এসে আলাদা অভিজ্ঞতা টের পাচ্ছি আমি। এই যে লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে দর্শকের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখা। সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যে, এমনকি সিনেমা শেষ হচ্ছে, দর্শকের মধ্যে যে উন্মাদনা, হাততালি দিচ্ছেন, সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে দর্শকের একেবারেই তাজা রিঅ্যাকশন—এসব আমার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। এসবে কত যে সুখ, কত আনন্দ, তা বলে বোঝানো যাবে না। এই জায়গাতে বলা যায়, নাটকের নিশো আর সিনেমার নিশো আলাদা।’
ছবি : সংগৃহীত