ঈদের সেই আনন্দটা পেতে খুবই ইচ্ছা করে: মোশাররফ করিম

কাশবন মোশাররফ করিমের ভীষণ পছন্দের। শুটিংয়ের ফাঁকে কাশবনে এক বিকেলে লিখে ছবিটি পোস্ট করেছেন মোশাররফ করিমছবি: ফেসবুক
অভিনেতা মোশাররফ করিমের শৈশব, কৈশোর কেটেছে গ্রামে। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলকাঠি গ্রামে বড় হয়েছেন তিনি। জনপ্রিয় এ অভিনেতার সেই সময়ের ঈদ ছিল অন্য রকম। ঈদের স্মৃতি নিয়ে প্রথম আলোতে লিখেছিলেন অভিনেতা। তাঁর সেই স্মৃতিজাগানিয়া লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো।

‘শৈশব–কৈশোরের ঈদ মানেই ছিল আমার কাছে অপার অপেক্ষা। এই অপেক্ষার অন্য নাম আনন্দ। এই যুগে অপেক্ষা বলে যেন কোনো ব্যাপার আর নেই। অপেক্ষা এখন উপেক্ষার জিনিস। সবকিছু আমরা তৎক্ষণাৎ হস্তগত করে ফেলতে চাই। অথচ অপেক্ষাই তো প্রাপ্তিকে দুর্লভ আর মধুর করে তোলে।
ঈদে আসে নতুন জামাকাপড়, মায়ের হাতে হয় সুস্বাদু রান্না, সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া, অবাধ ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা—এই সবকিছু একসঙ্গে পাওয়ার জন্য সারা বছরের যে অপেক্ষা, ঈদের আনন্দকে মধুর করে তুলত সেটাই।
কৈশোর আমার কাছে সব সময়ই বিস্ময়ের। কিশোর মনে সবকিছু নিয়েই বিস্ময়। ছোট্ট একটা টিলা তার মনে এভারেস্টের মতো উঁচু পর্বত। সবুজ যেন অতি গাঢ় সবুজ। আকাশ নিশ্ছিদ্র নীল। কারণ, কিশোর মনে জীবন, সমাজ বা পূর্বধারণার হিসাব নেই। তার মন টলটলে স্বচ্ছ। সেখানে সবকিছুর প্রতিবিম্বই নিটল আর আনন্দময়।
গ্রামে আমি ঈদ করেছি দশম শ্রেণি পর্যন্ত। অভিনয়জীবনে ঢুকে যাওয়ার পর গ্রামে যাওয়া হয়েছে মাঝেমধ্যে। ব্যস্ততার কারণে বহু বছর গ্রামে যাওয়াও হয় না।

ঢাকায় ঈদের দিনে সেই বিশেষ আনন্দ আর কোথায়! নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে অনেকটা সময় ঘুমিয়েই কেটে যায়। ঈদের ফাঁকা ঢাকা শহরে মন ছুটে যায় কৈশোরের গ্রামে।
আমি বড় হয়েছি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলকাঠি গ্রামে। সেখানকার সরল কিশোর জীবন উপচে পড়ত আনন্দে, অথচ তার উপকরণ ছিল সামান্যই। কিন্তু সেই সামান্যই অসামান্য আনন্দের উৎস হয়ে উঠত। আমাদের পিঙ্গলকাঠি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদ। আড়িয়াল খাঁর পারেই আমাদের বাড়ি।

মোশাররফ করিম-রোবেনা রেজা জুঁই

ঈদের দিন আমরা উঠে পড়তাম কাকডাকা ভোরে। সূর্য ওঠারও আগে। নদীতে ঝাঁপিয়ে গোসল করতে যেতাম। ঈদ উপলক্ষে কেনা হতো নতুন সাবান। সবাই দল বেঁধে সাঁতার কাটতাম। ঈদের ভোরের সেই অবগাহনের আনন্দ ছিল অপার্থিব। সেই গোসলের সঙ্গে ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় উপহার—শাসনবিহীন সারাটা দিন। এদিন কারও কোনো শাসন নেই, চোখরাঙানি নেই, ধমক নেই। আহ্, কী স্বাধীন একটা দিন।

অনেক আয়োজনের মধ্যে বিশেষ করে বলতে হবে একটা শরবতের কথা—আমাদের অঞ্চলের একেবারে নিজস্ব। শরবতটিকে বলা হতো মলিদা। সেটি তৈরি করা হতো আতপ চালের গুঁড়া, আদা, নারকেল, গুড়সহ নানা কিছু দিয়ে। সেই শরবত পান করে আমরা সবাই নামাজে যেতাম। ঈদে এখনো আমাদের বাসায় মলিদা তৈরি করা হয়।
নামাজ পড়ে আসার পর অবাধ ছুটির দিন। সারা দিন ইচ্ছেমতো বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে যা খুশি করো, যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াও। আমার সেসব বন্ধু এখনো আছে। দেখা হয়তো কম হয়, কিন্তু যোগাযোগ আছে। কখনো দেখা হয়ে গেলে কী যে দারুণ সময় কাটে!
বাবার সঙ্গেও নানা ধরনের বায়না ধরার ব্যাপার ছিল। বায়না ধরে বাবার হাত ধরে বাজারে যেতাম। চা খাওয়া হতো বড়দের সঙ্গে বসে। বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম আত্মীয় বা তাঁর পরিচিত মানুষদের বাড়িতে। তবে ঈদের দিনটা শেষ হয়ে যেত অতি দ্রুত। ক্ষণস্থায়ী বলেই ঈদের আনন্দ ছিল তীব্র।
ঈদের সেই আনন্দটা পেতে খুবই ইচ্ছা করে।