এই দেশের রাজনীতি বিশ্বের নিকৃষ্টতম রাজনীতি...

মাসুদ হাসান উজ্জ্বলছবি : পরিচালকের ফেসবুক থেকে

দেশের সমস্যা ও সংকট নিয়ে নিজের ফেসবুকে মতামত প্রকাশ করেছেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। ফেসবুকে বরাবরই সোচ্চার থাকা উজ্জ্বল এবার মাইলস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার ইস্যু নিয়েও কথা বললেন। মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার কথা বলতে গিয়ে আরও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে তুলে ধরেছেন এই পরিচালক।

মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনার পর সেখানে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল, ছিলেন রাজনৈতিক নেতা, কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। যে যাঁর মতো করে লাইভ করেছেন, ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করেছেন। সে বিষয়টি উল্লেখ করে মাসুদ হাসান লিখেছেন, ‘গতকাল মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিমান দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে বলতে গেলে অসাড় হয়ে ছিলাম—শোক অনুভব করার ক্ষমতা নেই এমন। উৎসুক জনতা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, ব‍্যবসায়ী—কে কী করেছে সেখানে, আমরা কমবেশি সবাই দেখেছি। তার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, আমরা আসলে আর মানুষ নেই, মানুষ নামের একেকটা খোলস মাত্র! প্রকৃতি হয়তো এই নিষ্পাপ ফুটফুটে বাচ্চাগুলোকে আমাদের পাপের শাস্তি দিয়ে দেখতে চাইল—তাতেও আমাদের কোনো শোকতাপ-বিকার হয় কি না! না, আমাদের কিছুই হয়নি, আমরা যে যার কনটেন্ট তৈরি নিয়ে ব‍্যস্ত ছিলাম। যে কারণে নিউজফিডে মেকি শোক আর কনটেন্টের ছড়াছড়ি।’

মাসুদ হাসান উজ্জ্বল
ছবি : পরিচালকের ফেসবুক থেকে

এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ওপর ভর্ৎসনা প্রকাশ করেন উল্লেখ করে মাসুদ হাসান লিখেছেন, ‘এমন ঘটনা যখন ঘটে, তখন এই নির্বিকার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আমরা ঘৃণাভরে ভর্ৎসনা করি।’ মাসুদ হাসান জানালেন, এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে তাঁর মধ্যে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে। সেসব প্রসঙ্গে লিখলেন, ‘মানুষগুলো কি এমনিতেই এমন নির্দয়–নির্বিকার হয়েছে, নাকি তাঁদের এমনটা বানিয়ে ফেলা হয়েছে? কনটেন্ট ক্রিয়েশন স্বল্প পরিশ্রমে দ্রুত পরিচিতি পাওয়া এবং সহজ উপার্জনের জনপ্রিয়তম এক মাধ‍্যম। এই ব‍্যবস্থাপনা তো আর সাধারণ মানুষের তৈরি না। পুঁজিবাদের এই ভয়ানক আবিষ্কারে প্রতিনিয়ত করপোরেট লগ্নি বাড়ছে।’

আরও পড়ুন
মাসুদ হাসান উজ্জ্বল
ছবি : পরিচালকের ফেসবুক থেকে

সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে কী কী হচ্ছে তা নিয়েও নিজের মতামত তুলে ধরেছেন মাসুদ হাসান। লিখেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে দেশের মন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে! দেশের বাইরে বসে দেশের রাজনীতিতে জট পাকিয়ে দেওয়া যাচ্ছে!’ তাঁর মতে, রাজনীতির মাঠ, ব্যবসা, হাসপাতাল, মাছের বাজার, আইন-বিচার, সালিস সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সোশ‍্যাল মিডিয়া। ‘একটা কাজের মিটিং পর্যন্ত করতে গেলে ক্লায়েন্ট সোশ‍্যাল মিডিয়াতে ফলোয়ারের সংখ্যা দেখে নেয়। জ্ঞান, বিদ্যা, শিক্ষাগত যোগ‍্যতা, কর্মদক্ষতা—কিছুই মুখ্য নয়, মুখ্য হলো ফলোয়ার সংখ্যা’ মন্তব্য করে ফেসবুক পোস্টের একেবারে শেষে মাসুদ হাসান লিখেছেন, ‘সাধারণ মানুষের অসংবেদনশীলতা দেখে আমরা ভর্ৎসনা করি, গালি দিই। কিন্তু আমরা কি কখনো কোনো করপোরেট প্রভুকে গালি দিয়ে বলেছি—একজন অধ‍্যাপকের থেকে একজন ইনফ্লুয়েন্সার কেন বেশি প্রভাবশালী? একজন খাদ‍্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞের থেকে একজন ফুড ভ্লগার কেন বেশি গ্রহণযোগ্য? সুরেলা কণ্ঠের সংগীতশিল্পীর থেকে কেন বেসুরো টিকটকার বেশি সফল? এই পরিস্থিতি কিন্তু আমার–আপনার সৃষ্টি নয়, এ দায় কেবল পুঁজিবাদের, এ দায় স্রেফ পুঁজিবাদী দানবদের, এ দায় পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার। আর রাজনীতিবিদদের অমানুষ-পিশাচ হওয়ার দায় কেবলমাত্র তার সীমাহীন লোভের। এই দেশের রাজনীতি বিশ্বের নিকৃষ্টতম রাজনীতি। এরা যেই যুগেই জন্মাত—অমানুষ, লোভী, মিথ্যুক, প্রতারক হয়েই জন্মাত।’

আরও পড়ুন

পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের নতুন একটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। ‘বনলতা সেন’ ছবির শুটিং, ডাবিং, সম্পাদনা, রংবিন্যাস, আবহসংগীতের কাজ—সবই শেষ। শিগগিরই ‘বনলতা সেন’ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডেও জমা পড়বে। পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল জানালেন, এখন পর্যন্ত যে পরিকল্পনা, তাতে আগামী সেপ্টেম্বরে ছবিটি মুক্তি দিতে চান। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের এটি দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে হাত পাকানোর পর তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। ছবিটি ২০২০ সালের শেষ দিকে মুক্তি পায়। ‘বনলতা সেন’ সরকারি অনুদানের ছবি। ছবির পরিচালক উজ্জ্বল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুটিংয়ে যা প্রয়োজন, তা–ই করেছি। গল্পে কোনো আপস করিনি। তাই শুটিং শেষ করতে আট মাসের মতো সময় লেগেছে।’

ছবিটি নিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘আমার আফসোস—উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, এডগার অ্যালান পো কিংবা টি এস এলিয়টের থেকে জীবনানন্দ দাশ কোনো অংশে কম নন। এত দিনে গোটা বিশ্বের তাঁকে জানা উচিত ছিল। আমি জীবনে প্রথম এমন বিস্ময়কর এক কবিকে ট্রিবিউট করার সুযোগ পেয়েছি। কেবল আমি কেন, গোটা বাঙালি জাতির জন‍্য জীবনানন্দ দাশ উদ্‌যাপনের একটা বিরাট সুযোগ। এই উদ্‌যাপন জাতীয় পর্যায়ের হওয়া উচিত। কারণ, এ বছরই ছিল কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। আমি অপেক্ষায় আছি কবে সেই পরিবেশ তৈরি হয়, যখন এমন এক কবিকে উদ্‌যাপন করে আমরা ধন‍্য হব।’