কক্সবাজার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন চিত্রগ্রাহক জাহিদ
কক্সবাজার যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চিত্রগ্রাহক জাহিদ হোসেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৩। এ সময় তিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। সামনের দিকে থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই ছিটকে পড়ে মারা যান জাহিদ। আজ সকাল সাতটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দীন লাভলু।
সালাউদ্দীন লাভলু বলেন, ‘আমাদের তরুণ একজন সম্ভাবনাময় ক্যামেরাম্যান আজ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। এটা আমাদের খুবই মর্মাহত করেছে। তরুণ একটা ছেলে ভালো কাজ করতেন। আমরা খবর নিয়েছি। তাঁর লাশ চকরিয়ার থানায় রয়েছে। জাহিদের ভাই খুলনা থাকেন। তিনি সেখান থেকে রওনা হয়েছেন। ঢাকা থেকেও ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চট্টগ্রামের পথে। আমরা ডিরেক্টরস গিল্ড পরিবারের পক্ষ থেকে শোক জানাচ্ছি। এ দুর্ঘটনার পেছনে বাসের দোষ কতটা, সেটা সংগঠনের পক্ষ থেকে তদন্ত করে বের করার দাবি জানাচ্ছি।’
সহকর্মীদের মতে, জাহিদ ছিলেন মিশুকপ্রকৃতির। চিত্রগ্রাহক হিসেবে যে শুটিং টিমেই কাজ করেছেন, সেখানেই শিল্পী কুশলীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। হঠাৎ তাঁর এমন মৃত্যুর শোক মেনে নিতে পারছেন না সহকর্মীরা। পরিচালক তুহিন হোসেনের সঙ্গে একাধিক কাজ করেছেন জাহিদ। তাঁদের সম্পর্কটাও বন্ধুত্বপূর্ণ। তুহিন বলেন, ‘আমার “অবশেষে বৃষ্টি”সহ অনেকগুলো কাজ করেছেন জাহিদ। তিনি ছিলেন মিশুক এবং ভালো মনের মানুষ। তিনি কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই বাইক নিয়ে ঘুরতে যেতেন। এবারও ঘুরতে বেরিয়েছিলেন আরেক সিনেমাটোগ্রাফার নাঈম ফুয়াদকে সঙ্গে নিয়ে। নাঈম ফুয়াদ সুস্থ আছেন। তাঁরা আলাদা দুটি মোটরসাইকেলে ছিলেন। যতদূর শুনেছি, জাহিদকে বাস ধাক্কা দিলে সে ছিটকে পড়ে। তাঁর গাড়ির চাকাও আলাদা হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পুলিশের গাড়ি এসে লাশ থানায় নিয়ে যায়।’ এ ঘটনা তদন্ত হওয়া দাবি জানালেন তুহিন।
তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন নাটকের প্রযোজক, পরিচালক ও কলাকুশলীরা। ইরফান সাজ্জাদ লিখেছেন, ‘কতবার নিষেধ করছিলাম ভাই, কতবার বোঝালাম, বাংলাদেশের রাস্তা বাইকের জন্য না, কী লাভ হলো ভাই? বলেন, কী লাভ হলো?? মানতে পারতেছি না ভাই।’ তৌসিফ মাহবুব লিখেন, ‘জাহিদ ভাই, আপনার অনুপস্থিতি এক্ষুনি ভয়াবহভাবে নাড়া দিচ্ছে।’ তরুণ অভিনেত্রী সাবাহ সারিকা লিখেছেন, ‘ক্যামেরাম্যান ভাইদের মধ্যে একমাত্র জাহিদ ভাইয়া আমাকে তুই করে বলতেন, তাঁর সঙ্গে শুটিং থাকা মানেই আমি প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন করতে থাকব, আর জাহিদ ভাই উত্তর দেবে। এত ভারের ক্যামেরা নিতে কাঁধ ব্যথা করে না? সব শটে দাঁড়িয়ে থাকলে পা ব্যথা করে না? এমনকি শট–সংক্রান্ত আজব আজব সব প্রশ্ন করেছি, জাহিদ ভাই সব সময় হেসে হেসে সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন। আমি এখনো শুটিংয়ে গিয়ে আপনাকে খুঁজব, আপনার কথা এখনো কাউকে বললে বলব “উনি জাহিদ ভাইয়া, আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ তাঁর সঙ্গে করা।”’ ইমতিয়াজ বর্ষণ লিখেছেন, ‘জাহিদ ভাই, এইটা কেমন কথা, মেনে নিতেই পারছি না। এই ভালো মানুষটির অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতেই পারছি না।’
তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন পরিচালক গৌতম কৈরী, মাবরুর রশিদ, সঞ্চয় সমাদ্দার, শহীদুন্নবী, রাফাত মজুমদারসহ অনেক পরিচালক। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে, মেহজাবিন চৌধুরী, তানজিন তিশা, সাব্বির আহমেদ, আবদুল্লাহ রানা, মনিরা মিঠু, সালহা খানম নাদিয়া, খাইরুল বাসার প্রমুখ। জাহিদের জেলা খুলনা। আগে সে ক্যামেরা হাউসের ম্যানেজার ছিল। সেখান থেকে ক্যামেরার কাজের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। পরে শিখতে থাকেন ক্যামেরার কাজ। চার বছর ধরে তিনি নিয়মিত নাটকে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন। গত ঈদুল ফিতরে প্রচারিত তাহসান খান ও ফারিণ অভিনীত ‘মেড ফর ইচ আদার’, ফারহান আর মুশফিক অভিনীত ‘সুইপারম্যান’, তৌসিফ অভিনীত ‘ল্যাম্পপোস্ট’সহ একাধিক নাটকের চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন। জাহিদ ঢাকার বনশ্রীতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাঁর তিন বছরের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।