বছরের শুরুতেই চমকে দিলেন মেহজাবীনরা

নাটকের একটি দৃশ্যে মেহজাবীন চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

২৪ বছরের এক তরুণী। নাম কাজল। বয়স ২৪ হলেও শিশুসুলভ নানা ছেলেমানুষিতে মেতে থাকে। কোনো কিছু পছন্দমতো না হলেই সবার সামনেই গড়াগড়ি দিয়ে জুড়ে দেবে কান্নাকাটি। কখনো ফ্লোরজুড়ে গড়াগড়ি করবে, কখনো খাটের নিচে মন খারাপ করে শুয়ে থাকবে। আবার কৌশলে তাকে শান্ত করা যায়। এর কারণ কাজলের বয়স ২৪ বছর হলেও সে মনের দিক থেকে আট বছরের শিশু। বাস্তব কোনো চরিত্র নয়, কাজল চরিত্রটি নাটকের। বছরের প্রথম দিনেই কাজল চরিত্রের অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীকে সফল বলা যায়। গতকাল প্রচারের পর থেকেই এই অভিনেত্রীর নাটকটি প্রশংসা পাচ্ছে।

কখনো মানসিকভাবে অসুস্থ, কখনো প্রতিশোধপরায়ণ, কখনো উচ্ছল প্রেমিকা, যেন সব চরিত্রেই নিমেষে মিশে যান মেহজাবীন। এবারের গল্পটি একেবারে আলাদা। ‘কাজলের দিনরাত্রি’ নাটকের পোস্টার ও ট্রেলার নিয়েই মেহজাবীন–তৌসিফেরা আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন। ট্রেলারে প্রকাশ পায় এ যেন অন্য এক মেহজাবীন, যাকে দেখে ১৪ কি ১৫ বছরের কিশোরী মনে হয়। এমন চরিত্রে মেহজাবীনের অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।

একটি দৃশ্যে মেহজাবীন চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

গল্পের প্রথমেই দেখা যায়, বাসায় ছোট এক শিশুকে নিয়ে এক অতিথি আসেন। সেই ছোট শিশুর পায়ের জুতার নিচে আলো জ্বলছে। এই লাইট লাগানো জুতা ভালো লাগে কাজলের। একসময় সেই ছোট মেয়েটি কাজলের রুমে যায়। কাজলের নজর জুতার দিকে। সে নিজের জুতা দিয়ে সেই জুতা চায়। একসময় জোর করে ছোট মেয়েটির পা থেকে জুতা খুলে নিতে থাকে কাজল। মেয়েটির চিৎকারে তার মা চলে আসে। তিনি দেখতে পান, ফ্লোরে তাঁর ছোট মেয়েটিকে জাপটে ধরে আছে কাজল। কাজলের এমন কাণ্ডে ছোট মেয়েটির মা কাজলের মায়ের দিকে তাকিয়ে রেগে বলেন, ‘আপনি এটা একদম ঠিক করেননি। আপনার মেয়ের এই অবস্থা, এটা আগেই বলা ছিল। আমার মেয়ের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।’

একটি দৃশ্যে মেহজাবীন, তৌসিফ ও সামিয়া অথৈ
ছবি: সংগৃহীত

এমন সংলাপে কাজলের মায়ের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি মা। তাঁর মেয়েকে নিয়ে এই ঘটনা আজই নতুন নয়। তাঁরাও এখন চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে এমন নানা কথার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। পরিবারই শুধু জানেন, এ ধরনের ঘটনায় মেয়ের পাশে থাকা জরুরি। গল্পে তৌসিফ মাহবুব কাজলের ছোট বোন রেখাকে দেখতে এসেছেন। তাঁদের বিয়ে নিয়ে কথা চলছে। তাঁরা ঘুরতে যাবেন, এর মাঝেই কাজলের বায়না তাঁদের সঙ্গে যাবেন। একসময় তৌসিফ নিজেই রাজি হন তাকে সঙ্গে নিতে। এ ধরনের প্রতিটি মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর ভালোবাসা দরকার। সেসব বিষয় বারবার ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে নাটকটিতে। এভাবেই ঘটনা একসময় অমানবিক রূপ নেয়।

গল্পে ভালোবাসার এক পিঠ থাকলেও আছে অন্য আরেক ভয়ংকর পিঠ
ছবি: সংগৃহীত

গল্পে ভালোবাসার এক পিঠ থাকলেও আছে অন্য আরেক ভয়ংকর পিঠ। সেখানেও স্নেহ–মমতা, ভালোবাসা থাকলেও আছে আরও এক কঠিন বাস্তবতা। তখন চার দেয়ালে আটকে থাকা কাজলের পৃথিবীটা যে অন্য রকম হয়ে ওঠে। এ পৃথিবীতে কাজলের যেমন আছে মা–বাবা–বোন, খেলার সঙ্গী জেরি আর হলুদমাখা ভালোবাসা, তেমনি রয়েছে নিষ্ঠুর এক চিত্র, যেখানে কাজল জেলবন্দী হয়। তাকে আটকে রাখা হয়েছে। দেয়ালের ওপাশ থেকে মায়ের কাছে কাজলের আকুতি জেল থেকে বেরিয়ে আসার। মা তাকে ভালোবাসা দিয়ে বস করতে চান। মা তাকে বলতে থাকেন, ‘আরেকটু কষ্ট করো। তুমি আমার লক্ষ্মী বাচ্চা না?’ তখন কাজল বাসায় ফেরার জন্য মায়ের কাছে আকুতি জানিয়ে বলে, ‘আম্মু, আমি কি এখন সত্যি সত্যি তোমার লক্ষ্মী বাচ্চা?’ এমন মুহূর্ত দর্শকদের আবেগপ্রবণ করে দেয়। গল্পের শেষ চমক তখনো বাকি ছিল।

নাটকের পোস্টারে তৌসিফ ও মেহজাবীন
ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে দিন দিন যেন পরিপক্ব অভিনেতা হয়ে উঠছেন তৌসিফ মাহবুব। গল্প অনুযায়ী তাঁর অভিনয়, সংলাপ বলা, আবেগের দৃশ্যগুলো দর্শকদের আলাদা করে নজর কাড়ে। গল্পের শুরুতেই তৌসিফের মনোলগ, ‘সবাই বলে—কষ্টের রং নীল। আমিও সেটাই বিশ্বাস করতাম। মানুষের অনুভূতিগুলো বিভিন্ন রঙের মাধ্যমে প্রকাশ করতাম—আনন্দ, দুঃখ, রাগ, অভিমান। প্রতিটা অনুভূতির আছে নির্দিষ্ট রং। কিন্তু আসলেই কি তা–ই? অনুভূতিগুলোকে কি নির্দিষ্ট রঙে আটকে রাখা যায় নাকি সেগুলো একেকজনের কাছে একেক রঙে ধরা দেয়। যেমন হলুদ রংটা সব সময় আমার কাছে অশুভ মনে হতো, অথচ সেই একই রঙের অর্থ কাজলের কাছে ছিল অন্য রকম।’ একসময় তৌসিফের মন জয় করে নেয় কাজল। তারপর কাজল আর রেখাকে নিয়ে অন্যভাবে এগিয়েছে ‘কাজলের দিনরাত্রি’ গল্পটি।

মেহজাবীন ও তৌসিফ
ছবি: সংগৃহীত

সত্য ঘটনা অবলম্বনে টেলিফিল্মটি নির্মাণ করছেন ভিকি জাহেদ। এর আগে তিনি চরকির জন্য ‘রেডরাম’ ও ‘শুক্লপক্ষ’ এবং চ্যানেল আইয়ের ‘পুনর্জন্ম’সহ একাধিক কাজ দিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন। নিজস্ব নির্মাণশৈলীতে বছরের প্রথম দিনেই দর্শকদের প্রশংসা পাচ্ছেন। তাঁর নির্মাণ দেখে বোঝা যায়, গল্প বলার আগে প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিচালক। ভিকি জাহেদের সঙ্গে চিত্রনাট্য করেছেন জাহান সুলতানা। চিত্রনাট্য দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। নির্মাণেও ছিল নতুনত্ব। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে কাজলের সৎমায়ের চরিত্রে শিরিন আলম, বাবা আদনান চৌধুরী ও রেখার চরিত্রে সামিয়া অথৈ অবশ্যই প্রশংসা পাবেন। জুতসই ছিল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও। নাটকটি প্রচার হয় দীপ্ত টেলিভিশনে। নাটকের ফেসবুকে গ্রুপগুলোতে বছরের প্রথম নাটকটি নিয়ে বেশ সরব হয়েছেন দর্শকেরা।

অভিনয়শিল্পীরা সবাই প্রশংসা পাচ্ছেন
ছবি: সংগৃহীত