আপনি আমাদের দুলকার সালমান...

খায়রুল বাসার
ছবি: প্রথম আলো

দক্ষিণি তারকা দুলকার সালমানের সঙ্গে তাঁর ছবি কোলাজ করে ভক্তরা তাঁকে ট্যাগ করেন। ভক্তদের মতে, তাঁর অভিনয়, হাসি, চাহনি, অভিব্যক্তি দুলকার সালমানের সঙ্গে মিলে যায়। তবে নিজেকে কারও সঙ্গে মেলাতে চান না খায়রুল বাসার। ভক্তদের কাছে খায়রুল বাসারই হয়ে উঠতে চান। সেই পথেই তাঁকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিল ঈদনাটক ‘সুখ অসুখ’, ‘আজ আকাশে চাঁদ নেই’, ‘বৃষ্টির অপেক্ষায়’, ‘প্রিয় লাইলী’, ‘সাদা পায়রা’।

আরও পড়ুন

এই অভিনেতা বলেন, ‘এবার ঈদে আরও বেশি রোমান্টিক হয়ে উঠেছি। আমার যে ছয়টি নাটক মুক্তি পেয়েছে, সেগুলোতে দর্শক আমাকে এই সময়ের প্রেমিক হিসেবে দেখেছেন। ঈদের অনেক আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এবার সিরিয়াস চরিত্র নয়। অভিনীত কাজগুলোতে দেখবেন, কখনো শহরে প্রেম করি, কখনো গ্রামে, চরিত্রের ভেরিয়েশন রয়েছে। এগুলো নিয়েই ঘুরেফিরে দর্শক কথা বলছেন। পরিচালকেরা এখন শুধু রোমান্টিক চরিত্রের গল্প নিয়ে আসছেন। সেগুলো দেখে ভক্তরা বলছেন, “আপনি আমাদের দুলকার সালমান।” তার অভিনয় আমার পছন্দ। তবে দক্ষিণের ফাহাদ ফাসিলের অভিনয় বেশি পছন্দ।’

বাসায় টেলিভিশন ছিল না। রক্ষণশীল পরিবারের বেড়ে ওঠা এই অভিনেতার শৈশবে টেলিভিশন দেখাও ছিল নিষেধ। বেশির ভাগ সময় বাসায় কাটত। ওই বয়সেই তৈরি হয় মানুষ পর্যবেক্ষণের অভ্যাস।

‘বৃষ্টির অপেক্ষায়’ নাটকের দৃশ্য। ফেসবুক থেকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও মানুষ পর্যবেক্ষণ তাঁর নেশা হয়ে ওঠে। স্বভাব, আচরণ, গুণে একেকজন একেক রকম। মানুষের প্রতি ভালোবাসাটাও অন্য রকম। এ ছাড়া বই পড়ে নানা চরিত্র তাঁর কাছে বৈচিত্র্যপূর্ণ মনে হতো। এভাবে নানা রঙের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা অভিব্যক্তিগুলো নিজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করার পথ খুঁজতে থাকেন। ভাবেন লেখক হবেন। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে না। নাম লেখান মূকাভিনেতা হিসেবে।

খায়রুল বাসার। ছবি: ফেসবুক

খায়রুল বাসারের ভাষায়, ‘মূকাভিনেতা হিসেবে নানা রকমের মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। এটা আমার কাছে দারুণ লাগত। দীর্ঘদিন ধরে মানুষ পর্যবেক্ষণটা আমাকে কাজে দেয়। একসময় আমি থিয়েটারে অভিনয় শুরু করি। তখন নানা রকম সংলাপ দেওয়া আগেই ধরে নিতাম, সংলাপের এই জায়গায় মানুষ হাসবে, এই জায়গায় ইমোশনাল হয়ে যাবে। মঞ্চে অভিনয় করতে গিয়ে দেখলাম, তা–ই হচ্ছে। আমার অভিনয়ে মানুষ মজা পাচ্ছে, চমকে উঠছে। এই রিঅ্যাকশন ভালো লাগত। ২০১২ সালেই মনে হলো, অভিনয়টাই করে যাব।’

কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবার। কারণ, এই ক্যারিয়ারে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু বন্ধুর জেনেও এই পথেই হাঁটেন এই অভিনেতা। অভিনয়ের জন্য নিজেকে তৈরি করতে গিয়ে একের পর এক হোঁচট খান। তখন দুটি টিউশনি করতেন। এর মধ্যেই ঢাকা থিয়েটারে যোগ দিয়ে নিয়মিত অভিনয় করতে থাকেন।

‘সুখ অসুখ’ নাটকের পোস্টার। ফেসবুক থেকে

সন্ধ্যা থেকে রাতের সেই শিডিউল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তাঁর দুটি টিউশনিই পরে চলে যায়। বাসার বলেন, ‘সময়মতো থিয়েটারে থাকতে হবে। যে কারণে একটি টিউশনি দ্রুত করাতাম। অন্যটিতে যোগ দিতে ৩০ মিনিট দেরি হতো। একসময় টিউশনি চলে গেল। বিপদে পড়ে গেলাম। আমাকে তো বেঁচে থাকতে হবে। তখন বাধ্য হয়ে অ্যাকটিং ডিরেক্টর হিসেবে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিই। তারাও শুটিং করত। সেখানে থাকতে হতো। তখন টুকটাক অভিনয় করি। দেখা যেত, ওই প্রতিষ্ঠান ও আমার ব্যক্তিগত শুটিং একই সময়ে পড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়লাম। আবার অভিনয় নিয়ে সংগ্রাম করতে হলো। তখন অনেক দিন প্রস্তাব পেলাম না। এই দিনগুলো ছিল আমার জন্য লার্নিং পিরিয়ড। সব সময়ই আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাকে টিকে থাকতে হবে।’

খায়রুল বাসার। প্রথম আলো

এরপর ভাগ্য কিছুটা সহায় হয়। কিন্তু সেটাও ক্ষণস্থায়ী। ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’, ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ প্রজেক্টগুলোতে অভিনয়ের প্রস্তাব তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। একের পর একক নাটকের প্রস্তাব আসতে থাকে। এর মধ্যে শুরু হয় করোনা। আবার তাঁকে হতাশ হয়ে থেমে যেতে হয়। এরপর ওয়েব ফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’তে অভিনয় করে তুমুল সাড়া পান। তখন এক দুর্ঘটনায় আবার তাঁকে অভিনয় থেকে দূরে সরে যেতে হয়। তারপর ‘মহানগর’ তাঁকে আলোচনায় আনে। এখন একের পর এক সিনেমা, ওয়েব ও টেলিভিশনে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন সাত–আটজন শিডিউলের জন্য ফোন দেন। বাসার বলেন, ‘আমাদের এখানে এখন ভালো গল্পের সংকট। অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে একঘেয়ে লাগে। মনে হয়, আমরা নতুন কিছু ভাবতে পারছি না।’