১১ বছরের প্রেমের পর বিয়ে করেছেন মডেল পল্লব, জেনে নিন পাত্রীর পরিচয়

পল্লব ও ওয়াহিদা রাহীছবি : পল্লবের সৌজন্যে

বিয়েশাদি না করায় মডেল–অভিনেতা পল্লবের মা সন্তানকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত ছিলেন। কয়েক বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টায় ছিলেন পুত্রবধূর মুখ দেখার। অবশেষে পল্লবের মায়ের সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ছেলে বিয়ে করেছেন, পাত্রী ওয়াহিদা রাহী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

জানা গেছে, ১১ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর তাঁরা দুজনের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। গত বছরের ১৩ জুলাই তাঁদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন বলে জানালেন পল্লব।

এদিকে ছেলে বিয়ে করে সংসারী হওয়াতে মা এখন ভীষণ খুশি বলে জানালেন পল্লব। আজ সোমবার দুপুরে পল্লবের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি সাভার ব্যাংক টাউন এলাকার বাসায়। কথা হয় পল্লবের স্ত্রী ওয়াহিদা রাহির সঙ্গেও। রাহী বললেন, ‘এখন আলহামদুলিল্লাহ আমরা অনেক ভালো আছি। আমাদের ১১ বছরের প্রেম। অনার্স ফার্স্ট ইয়ার থেকে প্রেম করতেছি। বিয়ে তো করলাম মাত্র।’

পল্লব ও ওয়াহিদা রাহী
ছবি : পল্লবের সৌজন্যে

রাহী জানালেন, ২০১২ সালের তাঁদের প্রথম পরিচয়। এরপর তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলতেন। রাহী বললেন, ‘আমি টুকটাক ফটোশুটের কাজ করতাম। পল্লবের সঙ্গেও একটা কাজ করেছি, নির্মাতা আশরাফুল আলম রিপন ভাইয়ের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে। এরপর ফোনে কথা বলতাম।  আমাদের দেখাও হতো। ঘুরতে বের হতাম। একজন আরেকজনকে পছন্দ করতাম। যখন দেখলাম, পল্লব খুবই ভালো মানুষ, ভাবলাম আমার আগামী জীবনের মানুষ হিসেবে তাঁকেই চাই। ঠিক দুই বছর আগে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে গত বছর বিয়েটা করে ফেললাম।’

আরও পড়ুন

এদিকে আজ সোমবার দুপুরে যখন পল্লবের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তিনি জানালেন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে একটি আনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের খবরটি প্রকাশ্যে আনতে চেয়েছিলাম। ঠিক আছে, এখন খবরটি প্রকাশ্যে এলেও কোনো সমস্যা নেই। আমরা তো বিয়ে করেছি। সবাই আমাদের তাঁদের প্রার্থণায় রাখবেন এটুকু প্রত্যাশা করছেন। পল্লব বললেন, ‘ছেলের বউকে পেয়ে মা এখন খুব খুশি। মায়ের খুশিতেও আমিও খুশি।’

সস্ত্রীক আফজাল হোসেন ও পল্লব
ছবি : পল্লবের সৌজন্যে

‘কী মিষ্টি মিষ্টি অপলক দৃষ্টি, অপরূপ সুন্দর লাগছে/ এই মনের গভীরে, যার ছবি আঁকা আছে, তুমি সেই সুন্দর চোখে ভাসছে’—নব্বই দশকে প্রচারিত জনপ্রিয় এই বিজ্ঞাপনচিত্রের জিঙ্গেলের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। এই বিজ্ঞাপনচিত্রের সেই সুদর্শন মডেলই পল্লব আর সঙ্গে ছিলেন রিয়া। এমন আরও অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রে সে সময় পল্লবের ছিল উজ্জ্বল উপস্থিতি। পল্লবের শুরুটা হয়েছিল আফজাল হোসেনের পরিচালনায় গার্লিক অয়েল পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করে। ১৯৯১ সালে এই বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ে যখন তিনি অংশ নেন, তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায়। একে একে শতাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন পল্লব। তাঁর বিপরীতে মডেল হয়েছেন অপি করিম, তারিন, রিয়া, সুইটি, মৌ, তানিয়াসহ অসংখ্য বড় তারকা। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলায় আসক্ত পল্লব হুট করেই বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ শুরু করেন।

আরও পড়ুন

অভিনয়ে পল্লবের অভিষেক ঘটে ১৯৯৫ সালে। আরেফিন বাদলের ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ নাটকে অতিথি শিল্পী ছিলেন তিনি ও তানিয়া আহমেদ। এক যুগে কয়েক শ নাটকে অভিনয় করা হয়েছে তাঁর। চলচ্চিত্রেও অভিষেক হয় পল্লবের। শাহীন সুমন পরিচালিত ‌‌‘বিয়ে বাড়ি’ নামের সেই চলচ্চিত্রে পল্লব ছাড়াও ছিলেন শাকিব খান ও রোমানা।

পল্লব ও ওয়াহিদা রাহী
ছবি : পল্লবের সৌজন্যে

দেশের নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে তাঁর উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও সমসাময়িকদের মতো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি পল্লব। পরিচালক ও প্রযোজকদের মতে, পল্লব এগোতে পারেনি তাঁর খামখেয়ালি স্বভাবের কারণে। আর প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেন। পল্লবের ভাষায়, ‌‘আমি একটা সময় শিখে গেলাম, শোবিজে আবেগের মূল্য নেই। পুরোটাই মোহ। আমি কখনো মুখে এক আর অন্তরে আরেক—এ রকম নই। খোলা বইয়ের মতো ছিলাম। অথচ সমসাময়িক অনেক তারকা আমার বাসায় আড্ডা দিত, খেত। বাইরে গিয়েই আমার নামে আজেবাজে কথা ছড়াত! এসব হিপোক্রেসি দেখে হাসি পেত। কোনো দিন কেউ বলতে পারবে না, আমি কারও কোনো ক্ষতি করেছি।’

পল্লব ও ওয়াহিদা রাহী
ছবি : পল্লবের সৌজন্যে

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাবা ও গৃহিণী মায়ের ছয় সন্তানের ভেতর পল্লব চতুর্থ। ১৯৮৮ সালে ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুল থেকে এসএসসি, সিটি কলেজে এইচএসসি শেষ করে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ভাই হঠাৎ মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। এ ঘটনা বড় ধাক্কা হয়ে আসে মডেল ও অভিনয়শিল্পী পল্লবের জীবনে। ভাইয়ের মৃত্যুর দুই বছর পর চোখের সামনে বাবার মৃত্যুতে যেন একেবারে ভেঙে পড়লেন। পল্লব এখন মাকে নিয়ে থাকেন ঢাকার আদাবরের বাড়িতে।

পল্লব
ছবি : পল্লবের সৌজন্যে

একটা সময় ক্যামেরার সামনে ৫, ৪, ৩, ২, ১, ০ শুনে সময় কাটত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া অনাথ দুস্থ কল্যাণ সংস্থা নামের একটি এনজিও পরিচালনা করছেন বলেও জানালেন। কাজে গেলেও মনটা পড়ে থাকে ৮০ পেরোনো মায়ের কাছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব কাজ সেরে বাড়িতে চলে আসেন। মায়ের যাবতীয় দেখাশোনা তিনি নিজেই করছেন। একসময় শোবিজে কাজ করতে গিয়ে পরিবারের কারোরই খোঁজখবর রাখতে পারেননি। সে সময়টাকে ‘ইমম্যাচিরউড’ সময় হিসেবে মনে করছেন তিনি। পল্লব জানালেন, এখন বেশ পরিণত হয়েছেন।