‘সরি দীপান্বিতা’ নাটকের আকাশ এখন কোথায়
২০১৪ সালে ‘সরি দীপান্বিতা’ নাটক দিয়ে পরিচিতি পান জীবন রায়। অভিনয়ের পাশাপাশি স্যান্ড আর্টিস্ট হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। এখন অর্গানিক কৃষি নিয়েও কাজ করছেন এ অভিনেতা। তাঁর বর্তমান ব্যস্ততা ও পরিকল্পনা শুনেছেন নাজমুল হক
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছয় বন্ধুর গল্প নিয়ে ‘সরি দীপান্বিতা’ নির্মাণ করেন স্বরাজ দেব। নাটকটি সে সময় তরুণদের আলোচনায় ছিল। নাটকের টাইটেল ট্র্যাকটি সম্প্রতি ইউটিউবে ২০ কোটি ভিউ পার করেছে। বাংলা নাটকের গানের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। নাটকটির বিষয়ে জীবন বলেন, ‘২০১৩ সালে বন্ধুদের জমানো টাকায় এটি বানিয়েছিলাম। তখন আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। নতুন ছিলাম, তবু নিজের হাতে একটি গল্প তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।’
‘সরি দীপান্বিতা’ নিয়ে সংগ্রাম
‘সরি দীপান্বিতা’র শুরুর যাত্রাটা মোটেও সুখকর ছিল না। জীবন বলেন, ‘৭০-৮০টা ডিভিডিতে কপি করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াতাম। ২০টির বেশি চ্যানেলে গিয়েছিলাম। কোনো চ্যানেল নিতে রাজি হয়নি। বলত—নায়ক–নায়িকা নতুন, পরিচিত কেউ নেই। সবাই ফিরিয়ে দিত। আর যারা চেয়েছিল, তারাও এমন টাকা দিতে চেয়েছিল যে আমরা আর দিইনি। ২০১৪ সালে নিজেরাই জিমেইল দিয়ে ইউটিউব খুলে আপলোড করি। তখন তো ইউটিউবের তেমন চল ছিল না। এখনের মতো ভাইরাল, ভিউ এসব ছিল না। তারপরও এত সাড়া পাব, কল্পনাতেও ছিল না। মজার কথা হলো নাটকটি জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করলে আমাদের না জানিয়েই দুটি চ্যানেল এটি প্রচার করে। আমরাও আর কিছু বলিনি। মানুষ দেখুক।’
নাটক নিয়ে সুখের স্মৃতিও আছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটকের প্রিমিয়ার শো হয়। ক্যাম্পাসসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগানো হয়। শোর দিন এমন অবস্থা হয় যে শুধু ক্যাম্পাস নয়, ময়মনসিংহ শহর থেকেও অনেকে ভিড় করেন। জীবন বলেন, ‘অডিটরিয়ামে একজন মানুষ দাঁড়ানোর মতো সুযোগ ছিল না। সেদিন বিশ্বাসও করতে পারিনি এমন কিছু হবে।’ সেই শোতে ৬০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়।
এরপর অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে সরে যান জীবন। তবে ভালো সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। ২০১৬-১৭ সালে ‘চ্যানেল আই ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী মেন, পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ আর্মি’ শোতে নাম লেখান তিনি। সেরা দশে এসে যাত্রা থেমে গেলেও নির্মাতাদের নজর কাড়েন। ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন লাবলুর ধারাবাহিক ‘প্রিয় দিন প্রিয় রাত’ নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করেন তিনি। এরপর আশফাক নিপুন পরিচালিত ‘ফাঁদ ফোকর’ নাটক করেও আলোচনায় আসেন এ অভিনেতা। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে আশফাক নিপুনের ‘বাঘিনী, মিথুন–অরনীর ‘এভাবেও প্রেম হয়, গোলাম হাবিবের ‘আইনুদ্দিন চোরা’, মহিন খানের ‘ফার্স্ট ইয়ারের গার্লফ্রেন্ড’ এবং আদিফ হাসানের ‘অন্তরজুড়ে’।
কৃষক পরিচয়
পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন জীবন। অভিনয়েও ব্যস্ততা বাড়ে; কিন্তু এসবের বাইরে নিজের মতো করে কিছু গড়তে চেয়েছিলেন জীবন রায়। বাজারের ফল ও সবজিতে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ও গ্রোথ হরমোনের ব্যবহার তাঁকে ভাবাত। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে সৈয়দপুরে গড়ে তোলেন ‘অর্গানিক এগ্রো’ আর সুন্দরবনের পাশে ‘সুন্দরী এগ্রো’। ফল ও সবজির পাশাপাশি যেখানে হাঁস-মুরগি ও মাছের চাষ চলছে।
জীবন বলেন, ‘আমি কৃষক পরিবারের সন্তান, অন্যদিকে পড়াশোনাও এসব নিয়ে। করোনার সময় সবাই যখন ঘরবন্দী, তখনই ভাবলাম কৃষি দিয়ে কিছু করা যায় কি না। সেখান থেকেই অ্যাগ্রো ফার্মের শুরু। একজন কৃষিবিদ হিসেবে আমার লক্ষ্য ছিল নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন। আজকাল ফল বড় ও সুন্দর করতে গ্রোথ হরমোনের ব্যবহার বেড়েছে; কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে কেউ ভাবেন না। তাই নিজের ফার্মে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই কাজ করি।’
অভিনয়ে এখন আগের মতো নিয়মিত নন জীবন রায়। ভালো গল্প আর সঠিক টিম মিললেই কাজ করেন।
বালুশিল্পী
জীবনের কাজের আরেক ক্ষেত্র বালুশিল্প (স্যান্ড আর্ট)। ‘২০১২ সাল থেকে ইউটিউব ঘেঁটে বালুশিল্প শেখা শুরু করি। ২০১৩ সালে উপাচার্য স্যারের উপস্থিতিতে প্রথম শো করি। তখন অনেকে বিশ্বাসই করতে চাননি সত্যিই এটা আমি করছি। ভাবতেন ভিডিও চালানো হচ্ছে!’ পরে ২০১৬ সালে রেদওয়ান রনি তাঁর ‘চোরাবালি’ সিনেমার জন্য একজন স্যান্ড আর্টিস্ট খুঁজছিলেন। হঠাৎ রাস্তায় তাঁর সঙ্গে দেখা, সেখানেই জীবন সাহস করে বলেন, ‘ভাই, আমি স্যান্ড আর্টিস্ট।’
সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় তাঁর নতুন যাত্রা। পরের বছরগুলোতে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন, ৭০টির বেশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বড় বড় করপোরেট আয়োজনে ও বিদেশি দূতাবাসের অনুষ্ঠানে নিয়মিত তাঁর ডাক পড়ে। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও প্রশংসা কুড়িয়েছে তার বালুশিল্প। এখন অনেকেই ফেসবুকে তাঁকে লেখেন, বালুশিল্প শেখার আগ্রহ জানান। ‘অনেকে জানতে চান, শেখা যায় কোথায়। ভাবছি, ভবিষ্যতে এ নিয়ে একটি প্রশিক্ষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান করব। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার দায়বদ্ধতাও এখন নিজের মধ্যে অনুভব করি’, বললেন জীবন।