১৪ বছরের বিরতি ভাঙবেন? সোজাসাপটা জবাব দিলেন ডলি জহুর
তিন দশকের চলচ্চিত্র অভিনয়জীবনে ডলি জহুর অভিনীত সিনেমার সংখ্যা ১৬১। প্রথম ছবির নাম ‘অসাধারণ’, রহীম নওয়াজ পরিচালিত ছবিতে আরও অভিনয় করেন রাজ্জাক, ববিতা, প্রবীর মিত্র, সৈয়দ হাসান ইমাম প্রমুখ। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ‘দুই পৃথিবী’, এফ আই মানিক পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয় করেন মান্না, শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, অহনা প্রমুখ। ‘দুই পৃথিবী’ ছবিতে শাকিব খানের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন এই অভিনয়শিল্পী। এরপর তাঁকে আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি। ২০১০ সালে স্বামী ক্যানসার আক্রান্ত হলে ওই সময়টায় প্রযোজকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা চেয়ে না পাওয়ায় অভিমান ও ক্ষোভে সিনেমায় আর ফেরেননি বলে জানান ডলি জহুর।
আশির দশকের শুরু থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন ডলি জহুর। ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। একদিন রাগ, ক্ষোভ ও অভিমানে সিনেমায় অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর ফিরেও তাকাননি বড় পর্দার দিকে। তবে ছোট পর্দায় নিয়মিত কাজ করেছেন। এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। টেলিভিশন–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আড্ডায়ও দেখা যায় তাঁকে।
তবে বড় পর্দা ডলি জহুরকে অনেক বেশি মানুষের কাছে নিয়ে গেছে। অনেক বেশি মানুষের ভালোবাসা দিয়েছে, এমনটাই মনে করেন এই অভিনয়শিল্পী। তাই অভিনয়ের এই মাধ্যমের প্রতি রয়েছে কৃতজ্ঞতাও। তবে এখন আর এই মাধ্যমের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা কাজ করে না ডলি জহুরের।
সময়–সুযোগ, প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী মিললে আবার কি সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হবেন, এমন প্রশ্নে ডলি জহুর বলেন, ‘এখন আর অভিমান নয়, সিনেমার বিষয়টা মন থেকেই উঠে গেছে। আমার কোনো ইচ্ছাই হয় না। আমি আসলে আর পারবও না ওদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে। একটা সময় ওদের সঙ্গে মানিয়ে যেভাবে কাজ করতাম, আমাকে তখন টেলিভিশনের শিল্পীরা বলত, তুমি কী করে পারো ওদের সঙ্গে মানিয়ে কাজ করতে! আমাকে একবার ফাল্গুনী (ফাল্গুনী হামিদ) ভাবি, শান্তা ইসলাম, চিত্রা (চিত্রলেখা গুহ) এমন কথা বলেছিল। সত্যি বলতে, আমি এখন অভিনয়ের আরেক ফর্মে চলে এসেছি। সিনেমার ফর্মের সঙ্গে আমি এখন ঠিকঠাক মানিয়ে নিতেও পারব না। তাই ছোট পর্দার অভিনয় নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে কাটিয়ে দিতে চান আগামী জীবন।’
১৯৭৬ সালে জহুরুল ইসলামকে বিয়ে করেন ডলি জহুর। এরপর চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। ডলি জহুরের একমাত্র ছেলে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে থাকেন, সেখানে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন বলে জানান এই অভিনয়শিল্পী। ২০০৫ সাল থেকে ডলি জহুর ঢাকার উত্তরায় থাকেন। সেই ২০১১ সাল থেকে সিনেমায় অভিনয়কে গুডবাই জানিয়ে দেওয়ার পর অনেক প্রযোজক–পরিচালক তাঁর উত্তরার বাসায়ও গিয়েছেন। তবে দেখা করতে পারেননি। কারও প্রস্তাবে তিনি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রাজি হননি। সেই সময়ের কথা মনে করে ডলি জহুর বলেন, ‘অনেকে আমার বাসা পর্যন্ত এসেছে। আমি সবাইকে চলে যেতে বলতাম। বাসার ওপর থেকে এ–ও বলতাম, দেখো, যদি না যাও, তাহলে কিন্তু দারোয়ান দিয়ে তোমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। কারণ, আমি সবার প্রতি অনেকটাই বিরক্ত ছিলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে সংকটের দিনে আমি ওদের কারও কাছ থেকে পাওনা টাকা পাইনি, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে!’