‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ থেকে তৌসিফ ও শামীমের সরে যাওয়ার কারণ কি ছিল
প্রচারের পর থেকেই দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিকটি। দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠা ধারাবাহিকটির প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি দিয়ে জনপ্রিয়তা বাড়ে তৌসিফ মাহবুব ও শামীম হাসান সরকারের। ধারাবাহিকটির তৃতীয় কিস্তি থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দুই অভিনেতা নাটকটি থেকে সরে যান। তবে এটাও শোনা যায়, গল্পের কারণেই বাদ পড়েছেন দুজন। সেই সময় অন্য একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছিল, ক্যারিয়ার পাকাপোক্ত করতেই এই দুই অভিনেতার নাটক থেকে সরে যাওয়া। আসলে কী ঘটেছিল?
তৌসিফ মাহবুব ও শামীম হাসান সরকারকে ধারাবাহিকে দেখা যায় নেহাল ও আরিফিন চরিত্রে। প্রায় চার বছর আগের সেই সময়ে নাটকটির নির্মাতা ও রচয়িতা কাজল আরিফিন জানিয়েছিলেন, গল্পে নতুনত্ব আনতে চরিত্র দুটি রাখা হয়নি। গল্পের মজবুত ও বাস্তবিক ভিত তৈরি করতেই এ ছক এঁকেছেন নির্মাতা। তাঁর মতে, ব্যাচেলর বন্ধুরা বিভিন্ন কারণে সব সময়ই একসঙ্গে থাকেন না। সেটাই আগামী পর্বে দেখা যাবে।
সেই সময় কাজল আরিফিন নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে বলেছিলেন, ‘আমার ব্যাচেলর টাইমের অনেক বন্ধু আছে, যাদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। অনেকের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। তার মানে এমন নয়, সেই বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখা হবে না। তারা কিন্তু যে যার মতো আছে। হয়তো দূরে আছে, ভবিষ্যতে কোনো এক সময় হয়তো তাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে। সেই বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই আমরা নতুন পর্ব শুরু করছি।’ এই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, এমনও হতে পারে, তাঁরা আবার একত্র হবেন।
এদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি শেষে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় বিরতি দিয়ে আবার শুরু হচ্ছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিকের পঞ্চম মৌসুম। এখানেও দেখা যাবে না নেহাল ও আরিফিনকে। তবে চার বছর আগে নাটকটি থেকে সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে নেহাল চরিত্রের অভিনেতা তৌসিফ সেই সময়ে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে এই মুহূর্তে কথা বলতে চাই না। বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে।’ তবে সেই সময়ে একটি সূত্র জানিয়েছিল, তৌসিফ নিজেই সরে যাচ্ছেন। কেন চলে যাচ্ছেন, সেই কারণ অনেকটাই মিল ছিল তৌসিফ ও শামীম হাসানের মতের সঙ্গে।
সেই সময় আরিফিন চরিত্রের শামীম হাসান প্রথম আলোকে জানান, তিনি নিজেই নাটকটি থেকে সরে যাচ্ছেন। এর কারণ ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ও ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নামে দুটি ধারাবাহিকে সময় দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কাজগুলোর জন্য একক নাটকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছিলেন না। সেই সময় শামীম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি নির্মাতার সম্মতিতেই নাটক থেকে সরে এসেছি। বেশ ভালোভাবেই আমাকে বিদায় জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আমার অন্য কোনো পথ ছিল না। কারণ, সিরিয়াল, একক নাটক একসঙ্গে সব করতে সমস্যা হয়ে যাচ্ছিল। পরিবারকে সময় দিতে পারছিলাম না। নিজের কাজগুলো করা হচ্ছিল না। আমার ফ্যামিলির সিদ্ধান্ত নিয়েই আমি নাটকটি ছেড়েছি।’
তৌসিফ ও শামীমের সরে আসা নিয়ে আরও যা শোনা যায়
এই দুই অভিনেতার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, তাঁদের দুজনের জন্যই সময়টা ছিল ক্যারিয়ার পাকাপোক্ত করার। তাঁরা নানা রকম কাজে সময় দিতে চাইছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নিজেদের নানা চরিত্রে ভাঙা। বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা। কিন্তু তাঁরা একটি মাত্র চরিত্র দিয়ে বেশি প্রশংসা পাচ্ছিলেন। তখন চরিত্রে বৈচিত্র্য আনার কথা তাঁরা পরিচালককেও বলেন।
সেই সূত্রটি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলে, ‘তৌসিফকে তখনো ভাবা হচ্ছিল বহু তারকাময় কাজগুলো দিয়েই সে বেশি প্রশংসিত। একক নাটকে নয়, এটা নিয়ে তৌসিফ ভেবেছেন। তৌসিফ চেয়েছিলেন প্রধান চরিত্রে গুরত্বপূর্ণ অভিনেতা হয়ে উঠতে। তৌসিফ তাই বহু তারকার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে ক্যারিয়ারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। যে নাটকটি শুধুই তৌসিফের হবে। তাঁরা প্রধান চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করার জন্যই ধারাবাহিকটি থেকে সরে যান।’
চার বছর পর সেই পরিচালক জানান, আজ তৌসিফ নিজের চেষ্টায় ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়েছেন। নাট্যাঙ্গনে তাঁর যথেষ্ট চাহিদা তৈরি হয়েছে। তাঁর নাটকগুলোও কোটি কোটি দর্শক দেখছেন। শামীম হাসান সম্পর্কেও একই কথা বলেন তিনি। তবে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ থেকে তৌসিফ ও শামীমের সরে যাওয়া ক্যারিয়ারের জন্য কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, সেটা বিচারের ভার দর্শকের ওপরই ছেড়ে দেন তিনি।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা থেকে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকের পঞ্চম মৌসুম শুরু হচ্ছে। ঈদের দিন থেকে চ্যানেল আই, বুম ফিল্মসের অফিশিয়াল ইউটিউব এবং বঙ্গ অ্যাপে দেখা যাবে ধারাবাহিকটি। নাটকে অভিনয় করেছেন মারজুক রাসেল, চাষী আলম, পলাশ, আবদুল্লাহ রানা, মনিরা মিঠু, শিমুল শর্মা, পাভেল, ফারিয়া শাহরিন, সানজানা সরকার প্রমুখ।
পরিচালক কাজল আরেফিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫ আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় একসঙ্গে বঙ্গতে ৮টি পর্ব মুক্তি পাবে।