১১৪ কেজি থেকে ৫০ কেজি ওজন কমানোর গল্প

ওজন বেড়ে যাওয়ার পর ও আগের ছবিতে শার্লিন ফারজানাকোলাজ

নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করে আগেই আলোচনায় ছিলেন শার্লিন ফারজানা। মিষ্টি হাসি, প্রাণবন্ত অভিনয় আর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খুব দ্রুত জায়গা করে নেন দর্শকের মনে। তবে তাঁকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আনে মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত সিনেমা ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। ছবিটি মুক্তির আগেই বিয়ে করেন তিনি। মুক্তির পর তাই কাজ কমতে থাকে, একসময় পুরোপুরি অভিনয় থেকে বিরতিই নেন। সংসার, সন্তান আর ব্যক্তিজীবনেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন শার্লিন।

বিনোদন অঙ্গনে শুরু

২০০৮ সালে ইউ গট দ্য লুক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে প্রবেশ করেন শার্লিন ফারজানা। খুব দ্রুতই হয়ে ওঠেন নামকরা ফ্যাশন হাউসগুলোর মডেল। এরপর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ শুরু করেন। অমিতাভ রেজার গ্রামীণফোন বিজ্ঞাপন কিংবা গাজী শুভ্রর সিলন চা বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে রাতারাতি আলোচনায় আসেন। সেই সাফল্যের পর নাটক, আর পরে চলচ্চিত্রে পা রাখেন।

ওজন বেড়ে যাওয়ার পর শার্লিন ফারজানা
ছবি : শার্লিনের সৌজন্যে

হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া

এই বিরতিটাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের বড় এক মোড়। শুরুতে ওজন ছিল ৪৮ কেজি। কিন্তু সংসার, অসচেতনতা, মাতৃত্ব আর দীর্ঘ অবহেলার কারণে ধীরে ধীরে শরীর ভারী হতে থাকে। একসময় ওজন গিয়ে ঠেকে ১১৪ কেজিতে। নিজের চোখেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। ‘একসময় চেষ্টা করেও আর এক শর নিচে নামছিল না । তখনই বুঝলাম, আমাকে বদলাতে হবে’, বললেন শার্লিন।

৫০ কেজি ঝরিয়ে নতুন জীবন

সেই উপলব্ধি থেকেই শুরু হয় নতুন যাত্রা। শারীরিক অনুশীলন, কঠোর নিয়ম, খাবারে নিয়ন্ত্রণ—সব মিলিয়ে কমাতে থাকেন ওজন। প্রায় ৫০ কেজি ঝরিয়ে এখন তাঁর ওজন ৫৮। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আগের অবস্থার কাছাকাছি ফিরতে। ধীরে ধীরে এগোচ্ছি।’

জিমে প্রশিক্ষকের সঙ্গে শার্লিন ফারজানা
ছবি : শার্লিনের সৌজন্যে

খাবারে বড় পরিবর্তন

ফিটনেস ফিরে পেতে নিজের প্রিয় খাবারের সঙ্গেই প্রথম যুদ্ধ শুরু হয়। ‘আমি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করি। দিনে দুইবার খাই। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করি’ বললেন শার্লিন ।

দুপুরে খান হালকা খাবার, সন্ধ্যায় চিকেন, ব্রকলি ও সালাদ। সপ্তাহে দুদিন নিজেকে অনুমতি দেন বাসমতী চালের ভাত খাওয়ার। তিন বছর ধরেই এই নিয়ম মেনে চলছেন তিনি।

মাতৃত্বের পর সচেতনতা

২০২০ সালে প্রথম সন্তানের মা হন শার্লিন আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় সন্তানের। দ্বিতীয় সন্তানের পর থেকেই তিনি ফিটনেস নিয়ে আরও সচেতন হয়ে ওঠেন। ‘প্রথম সন্তানের পর যা ইচ্ছে হতো, খেতাম । মিষ্টি খেতাম প্রচুর। রাত তিনটার সময় সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে পুরান ঢাকায় ঘুরতে যেতাম, যা সামনে পেতাম খেতাম। দিনে ঘুমাতাম। এগুলোই ওজন বাড়ার মূল কারণ।’

প্রিয় খাবার ত্যাগের কষ্ট

চিনি, চিজকেক, ময়দার পরোটা—এসব ছিল তাঁর দুর্বলতা । শার্লিন বললেন, ‘পরোটা আর চা দিয়ে নাশতা ছিল সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু ফিটনেসের জন্য এসব ছাড়তে হয়েছে। ডায়েটে এসে পরোটা-চা সবচেয়ে বেশি মিস করি।’

বিয়ের আগে শার্লিন ফারজানা
ছবি: সংগৃহীত

নিয়মিত ঘুম আর অনুশাসনের জীবন

ওজন কমানোর সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল নিয়মিত জীবনযাপন। প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুম, সপ্তাহে ছয় দিন জিম, প্রতিদিন অন্তত ছয় হাজার স্টেপ হাঁটা—এসবকেই অভ্যাসে পরিণত করেছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক সময় ধরে ওজন বেড়েছিল, তাই সময় নিয়েই কমাচ্ছি। এখন জীবনটা উপভোগ করছি।’

অভিনয়ে ফেরা

অভিনয় থেকে দূরে থাকার শূন্যতা তাঁকে ভেতরে–ভেতরে কুরে কুরে খাচ্ছিল। সম্প্রতি সেই শূন্যতা ভরাট হয়েছে শুটিং সেটে ফিরে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘জীবন আমার বোন’ ছবির কাজ শেষ করেছেন তিনি। এনায়েত করিম পরিচালিত এ ছবিতে তাঁর সহশিল্পী খাইয়রুল বাসার। মাহমুদুল হকের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন ‘নীলা’ চরিত্রে।

অভিনয় প্রসঙ্গে শার্লিন

‘সত্যি বলতে শুটিংয়ে ফিরে এত ভালো লেগেছে, বলার মতো নয়। কর্ম ছাড়া জীবন নয়, কাজেই আসল মুক্তি,’ প্রথম আলোকে বলেন শার্লিন। কোনো চরিত্রে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন জানতে চাইলে যোগ করলেন, ‘বিয়ের আগে নায়িকা লুক ধরে রাখার চাপ ছিল। এখন আর সে চাপ নেই। ভ্যাম্প, খল, এমনকি হরর ছবির চরিত্রেও কাজ করতে চাই। সায়েন্স ফিকশনও আমার খুব পছন্দ।’

শার্লিন ফারজানা
প্রথম আলো।

পরিবারে ভারসাম্য, জীবনে আত্মবিশ্বাস

বিয়ে ও সংসার তাঁর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। স্বামী এহসানকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, ‘ও খুব ম্যাচিউরড একজন মানুষ। আমি তো পরিণত ছিলাম না। এখন ব্যালান্স করা শিখেছি। শুধু নিজে নয়, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই।’ দুই সন্তানের মা হওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে আরও দৃঢ় হয়েছেন। ‘ওদের স্পর্শই আমাকে অন্য রকম অনুভূতি দেয়। আগে না ভেবে কাজ করতাম, এখন অনেক ভেবেচিন্তে করি।’

নতুন পরিকল্পনা

আগামী দিনে আরও বৈচিত্র্যময় চরিত্রে দর্শক তাঁকে দেখতে পাবেন বলে আশা করছেন শার্লিন। এমনকি আইটেম সংয়েও আগ্রহী তিনি। ‘যদি গল্প সুন্দর হয়, মানিয়ে নিতে পারি, তাহলে সমস্যা নেই। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক সিনেমাতেও কাজ করতে চাই।’ সম্প্রতি শার্লিন শুটিং শেষ করলেন ‘জীবন আমার বোন’ ছবির। এই ছবিতে তাঁর সহশিল্পী খাইয়রুল বাসার। কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের উপন্যাস ‘জীবন আমার বোন’ অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে এই সিনেমা। উপন্যাসের নামটিই ছবির নাম হিসেবে রাখা হয়েছে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি নির্মাণ করছেন এনায়েত করিম।